‘তৃণমূল সমর্থক’ লোকজনের মার খেয়ে পরে নিজেই গ্রেফতার হলেন রায়নার এক সিপিএম নেতা। ওই জোনাল সদস্য তথা স্থানীয় নাড়ুগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এক তৃণমূল কর্মীকে ঘুষি মারার অভিযোগ ছিল। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েন বর্ধমান জেলা পরিষদের সিপিএম সভাধিপতি উদয় সরকারও। সেই সময়ে রিভলভার বের করায় তাঁর দেহরক্ষীকে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। কিন্তু রাত পর্যন্ত তৃণমূলের কেউ গ্রেফতার হয়নি।
সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, “পুলিশের সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাঁত আছে, তা প্রমাণিত। উদয়বাবু বারবার ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সুপারকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। জেলা সভাধিপতি প্রতিমন্ত্রীর সমান মর্যাদা পান। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আলোচনা না করেই দেহরক্ষী সরানো হল।” জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য বলেন, “উদয়বাবু কখন আমায় ফোন করেছিলেন, জানি না। তবে ওই কনস্টেবল আমার অধীনস্থ কর্মচারী। তাঁকে দায়িত্বে বহাল রাখা বা না রাখার নিয়ে ওঁর সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন নেই।” আইনমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা মলয় ঘটকের দাবি, “আমরা পুলিশকে কোনও নির্দেশ দিইনি। তারা তাদের কাজ করেছে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, বাম আমলে দায়ের হওয়া কয়েকটি মামলা তোলার জন্য মফিজুর রহমানকে ‘চাপ’ দিচ্ছিলেন কিছু তৃণমূল সমর্থক। পুলিশ সুপারের কথায়, “সকালে এই নিয়ে বচসার সময়ে সিপিএম নেতা তাঁকে ঘুষি মারেন বলে বাপ্পা চন্দ নামে এক তৃণমূল নেতা অভিযোগ করেছেন।” সিপিএমের অভিযোগ, এর পরে বাপ্পার নেতৃত্বেই তৃণমূলের কিছু লোক প্রধান শিক্ষকের উপরে চড়াও হয়। উদয়বাবুর কথায়, “খবর পেয়ে গিয়ে দেখি, মফিজুর রাস্তায় পড়ে। কিছু লোক লাথি মারছে। আমি বাঁচাতে যেতেই ওরা বাঁশ-লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে। তখনই নিরাপত্তারক্ষী, জেলা পুলিশের কনস্টেবল মধুসূদন ঘোষ নিজের সার্ভিস রিভলবার বের করে হুঁশিয়ারি দেন, আমায় আঘাত করা হলে গুলি চালাবেন। শুনে, ওরা পিছু হটে। উনি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন।”
রাজ্যে সম্প্রতি একের পর এক পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠায় কর্তারা বেশি সতর্ক। বর্ধমানের পুলিশ সুপার বলেন, “ওই রক্ষী সাদা পোশাকে ছিলেন। তা ছাড়া প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, রিভলভার বের করার পরিস্থিতিও ছিল না। ওঁর এই আচরণে বড় গণ্ডগোল হতে পারত।” প্রধান শিক্ষককে মারধর করেও কেউ গ্রেফতার হল না কেন? উদয়বাবুর দাবি, “পুলিশ মফিজুরকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরেই উনি লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। আমিও দুপুরে পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছি।” তবে রাতে পুলিশ সুপার দাবি করেন, “সিপিএমের তরফে এখনও অভিযোগ জমা পড়েনি।” |