আবাসন থেকে জবরদখল উচ্ছেদে গিয়ে কোনও রকম বাধা বা অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হলে পুলিশকে মামলা শুরু করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সম্প্রতি ইসিএলের তরফে আদালতকে জানানো হয়, রাজনৈতিক চাপ এবং মাফিয়াদের বাধায় উচ্ছেদ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অভিযোগ শোনার পরেই আদালত এই নির্দেশ দেয়।
২০০৯-এর ডিসেম্বরে আইনজীবী পার্থ ঘোষ ইসিএলের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তাঁর দাবি, ইসিএলের অধিকাংশ কর্মী আবাসনই বহিরাগতদের দখলে রয়েছে। ফলে আবাসন দিতে না পেরে এক দিকে যেমন অনেক কর্মীকে ভাতা দিতে হচ্ছে, অন্য দিকে বহিরাগতদের দখলে থাকা আবাসনগুলিতে জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতেও কোটি-কোটি টাকা খরচ করছে সংস্থাটি। ইসিএল আদালতকে জানায়, সমাজবিরোধীদের দখলে থাকা কর্মী আবাসন তারা দখলমুক্ত করতে পারছে না। পুলিশও সাহায্য করছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছিল তারা। এর পরে পুলিশকে দখল উচ্ছেদে সাহায্য করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
পার্থবাবু জানান, এর আগে রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, কয়লা মাফিয়াদের উৎখাত করতেই সরকার আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট গঠন করেছে। আবাসন দখলমুক্ত করতেও পুলিশ সব রকম সহায়তা করবে। কিন্তু জুলাইয়ে হাইকোর্টে একটি হলফনামা জমা দিয়ে ইসিএল জানায়, মার্চে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কুলটি থানা এলাকার একটি আবাসনে দখল উচ্ছেদে গেলে উত্তেজনা তৈরি হয়। সেই সময়ে পুলিশকে ফোন করে কিছু রাজনৈতিক নেতা অভিযান সাময়িক বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ জানান। এর ফলে আবাসন দখলমুক্ত করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে দাবি করে ইসিএল। আদালতের তরফে এ ব্যাপারে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কাছে হলফনামা জমা দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ অবশ্য জানান, অভিযান বন্ধ রাখার জন্য তাঁদের কেউ কোনও অনুরোধ করেননি।
ইসিএল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ও আসানসোল উত্তরের বিধায়ক তথা রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক অভিযান বন্ধের ব্যাপারে অনুরোধ জানান। মলয়বাবুর অবশ্য দাবি, “আমি কাউকে এ রকম কোনও অনুরোধ করিনি।” উজ্জ্বলবাবুরও বক্তব্য, “উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বলিনি। শুধু যে সব খনিকর্মী এখনও বকেয়া পাননি, তাঁদের উচ্ছেদ না করার দিকটি ভেবে দেখতে বলেছি।” আইনমন্ত্রীও বলেন, “ইসিএল যাঁদের উচ্ছেদ করতে চাইছে, তাঁদের বেশির ভাগই সংস্থার প্রাক্তন কর্মী। তাঁদের অনেকেরই পাওনা বকেয়া রয়েছে। ইসিএলের সে সব মিটিয়ে কাজে নামা উচিত। এই সব মানুষ গৃহহীন হলে সমস্যায় পড়বেন।”
গত ৫ অক্টোবর হাইকোর্ট ইসিএলকে দখলদারদের থেকে জরিমানা-সহ ভাড়া আদায় করার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে কোনও রকম বাধার মুখোমুখি হলে পুলিশকে মামলা শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ পেয়েছি। সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।” |