কিছু কর্মীর হঠকারি আচরণের জেরে পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহি খনির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। ওই খনির দু’জন কর্মীকে সাসপেন্ড করার পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও করা হয়েছে। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে আরও ছ’জনকে। কর্মীদের একাংশের এমন আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলিও।
সপ্তাহ দুয়েক আগে খোট্টাডিহি খনির ১ নম্বর চানকের একটি অংশে আগুন লাগে। দু’দিন উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়। পরে বিপন্মুক্ত অংশে কাজ শুরু হলেও খনি কর্তৃপক্ষ নির্দেশিকা জারি করেন, রবিবারগুলিতে কোনও শ্রমিক-কর্মীকে খনিতে কাজে নামতে দেওয়া হবে না।
এমন নির্দেশিকার কারণ প্রসঙ্গে ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, রবিবারগুলিতে আগুন লাগা অংশ নেভানোর কাজ হবে। ভবিষ্যতে যাতে আগুন না লাগে তার প্রতিরোধক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। নীলাদ্রিবাবু অভিযোগ করেন, গত ১১ নভেম্বর, রবিবার কিছু শ্রমিক বিস্ফোরক নিয়ে জোর করে খনিতে নেমে পড়েন। নীলাদ্রিবাবুর বক্তব্য, “এর ফলে খনির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। এটা গর্হিত অপরাধ।” তিনি জানান, বিষয়টি নজরে আসার পরে তদন্ত শুরু হয়। তিন দিন তদন্তের পরে খনির বিস্ফোরক রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মীকে সাসপেন্ড ও তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়। আরও ছ’জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
নীলাদ্রিবাবুর দাবি, আইন অনুযায়ী খনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বিস্ফোরক নিয়ে খনিতে নামা ও ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু সে দিন শ্রমিকেরা তা-ই করেছেন। নীলাদ্রীবাবু বলেন, “শ্রমিকেরা এই হঠকরিতা চালিয়ে গেলে খনির উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হবে।” শ্রমিক সংগঠনের নেতাদেরও বক্তব্য, খনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া খনিগর্ভে নামা উচিত নয়। তবে খনি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ নভেম্বর, রবিবার কেউ কেউ কাজে নামতে চাইলেও অন্য শ্রমিকদের বাধায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা বিরত হন। খনি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার কাজ করলে দ্বিগুন মজুরি মেলে। স্বভাবতই সপ্তাহের অন্য দিনের তুলনায় রবিবার কাজ করা শ্রমিক-কর্মীদের বেশি পছন্দের। সে কারণে খোট্টাডিহির শ্রমিকেরা এমন হঠকারি কাজ করেছেন বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের।
আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত কয়লা খাদান মজদুর কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিংহ বলেন, “আমরা এই ঘটনায় বিরক্ত। এই বিশৃঙ্খলা করায় আমাদের সংগঠনের ওই খনির শাখা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ করেছি কর্তৃপক্ষকে।”
সিটু অনুমোদিত সিএমএসআই-এর কেন্দ্রীয় সম্পাদক বিবেক চৌধুরীর বক্তব্য, “শ্রমিকদের এই হঠকারিতা উচিত হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষেরও নিজেদের বক্তব্য স্পষ্ট করে জানানো উচিত ছিল। বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছি।” আইএনটিইউসি-র সম্পাদক চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “খনির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন কাজ করা শ্রমিকদের উচিত নয়। তবে এ ক্ষেত্রে কতৃর্পক্ষেরও বিষয়টি বোঝানোয় গাফিলতি রয়েছে।” |