অনুভবের ভাইফোঁটা অনুভবে
রথর করে কাঁপছে ডান হাতটা। বাঁ হাতে ক্রমাগত চোখের জল সামলাচ্ছে মেয়েটি। চন্দন লাগানো আঙুল কেঁপে ফোঁটা নিতে বসা যুবকের সারা কপালে যেন একটা আলপনাই তৈরি হল। কোনও মতে ফোঁটা দিয়ে একছুটে পাশের ঘর গিয়ে জানালার সামনে দাড়িয়ে পড়ল ১৩ বছরের মেয়েটি। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল সে। হোমের কর্ণধার দীপশ্রী রায় বলেন, “ওর নাম সোনালি। মন খারাপ হলে জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। দূরের মাঠের দিকেই শুধু তাকিয়ে থাকে।” বৃহস্পতিবার অনুভব হোমের আবাসিক শিশু কিশোরীদের ভাইফোঁটা দেওয়ার আয়োজন করেন কর্তৃপক্ষ। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কিশোরদের এনে ফোঁটার আয়োজন করা হয়। আলিপুরদুয়ারে বাড়ি সোনালির। বছর চারেক আগে বাড়ি থেকে কাজ করতে জলপাইগুড়ির এক অবাঙালি পরিবারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। সেখান থেকে পালিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে ঠাঁই হয়েছে হোমে। অনেক প্রশ্নের পরে সোনালি বলল, “আমার একটা দাদা ছিল। আর দুই ভাই। আমরা দুই বোন মিলে ভাইফোঁটা দিতাম। দাদা আমাকে কোনও বার খাতা, কোনও বার পেন, পেন্সিল-বক্স দিত। ভাইরা কিছু দিত না। বাড়িতে আনা মিষ্টি খাইয়ে দিত। আমার কথা ওরাই ভুলেই গিয়েছে।”
মঙ্গলকামনা
বালুরঘাট, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি আর ফালাকাটায় বৃহস্পতিবার ছবিগুলি
তুলেছেন অমিত মোহান্ত, সন্দীপ পাল, বিশ্বরূপ বসাক এবং রাজকুমার মোদক।
ভাইফোঁঁটা দেওয়ার পরে কেমন যেন চুপ হয়ে গিয়েছে কোয়েল দেবনাথও। বাড়ি কোথায় ও জানে না। মাত্র ৩ বছর বয়স থেকেই সে হোমের বাসিন্দা। শিলিগুড়ির রাস্তা থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তুলে এনে হোমে দিয়ে গিয়েছিল। হোম কর্তৃপক্ষ জানান, এমনিতে ছটফটে। সারাদিন অন্যদের সঙ্গে দুষ্টুমি করে। ভাইফোঁটার পরে কোয়েল একা বসে রয়েছে হোমের মাঠে। কোয়েল বলল, “আমার কিছুই মনে নেই।” এমনই টুকরো টুকরো বিষাদ বৃহস্পতিবার সারাদিন অনুভব হোমকে যেন ঘিরে রাখল। হোমের কিছুটা দূরেই সরকারি ‘কোরক’ হোম। সেখানকার বাসিন্দা অনাথ ভবঘুরে ও বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত শিশু কিশোরদেরও ভাইফোঁটা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হোমে গিয়ে সকলকে ভাইফোঁটা দেয়। কোরক হোমের আবাসিক সুরজিতের বাড়ি কলকাতার আশেপাশের কোনও এলাকা। সুরজিৎ বলল, “মনে আছে, এক বার পুজোর সময়ে বাবার সঙ্গে ট্রেনে কলকাতায় গিয়েছিলাম। বোনও সঙ্গে ছিল। একদিন ট্রেনে চেপে পালাতে গিয়ে হারিয়ে গেলাম। বোনের কথা মনে পড়ে।” অনুভবের দীপশ্রী দেবী জানান, ওদের কেউ ভাইফোঁটা নেওয়ার পরে কেঁদেছে, কেউ মনমরা হয়ে অনেকক্ষণ চুপ হয়েছিল। তিনি বলেন, “তবু তো ওরা ভাইফোঁটা দিতে পারল। তাতে ওরা কিছুটা হলেও আনন্দ পেয়েছে। আমরা সেটাই চাই। স্বজনদের কাছে এনে দিতে না পারলেও ভাইফোঁটার ঘরোয়া পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করি।” রায়কতপাড়ার হোমেও একই দৃশ্য। বৃহস্পতিবার নানা পদের রান্না হয়েছিল। চকলেট, মিষ্টি, জামাকাপড় উপহার রাখা হয়েছিল। আয়োজনে আবাসিকদের মুখে হাসি ফুটেছে। এত খুশির পরেও কেঁদেছে অনেকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.