ঢেকলাপাড়া বাগানের প্রচুর মানুষ সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে জেলাশাসককে জানালেন বীরপাড়া-মাদারিহাটের বিডিও পেম্বা শেরপা। বৃহস্পতিবার বিডিও বলেন, “ওই বাগানের পরিস্থিতি ভাল নয়। বিপিএল তালিকা থেকে আদিবাসীদের জন্য যে সমস্ত সরকারি সুবিধা থাকা প্রয়োজন তা সেখানে নেই। বিষয়টি জেলাশাসককে জানানো হয়েছে। আদিবাসীদের জন্য বার্ধক্য ভাতা যাতে দ্রুত চালু করা যায় সে বিষয়টি আমরা দেখছি।” সম্প্রতি বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের জন্য চালু করা রাজ্য সরকারের মাসিক ভাতা না পেয়ে ১৫ জন ‘ইচ্ছা মৃত্যু’র জন্য আবেদন জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি পাঠান। তড়িঘড়ি ঢেকলাপাড়া বাগানে ছুটে যান বিডিও পেম্বা শেরপা। তিনি শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে পড়েন। বিডিও-র কথায়, “আমি এখানে নতুন এসেছি। ওই শ্রমিক বস্তির পরিস্থিতি খুব খারাপ তা আমি বাড়ি বাড়ি ঘুরে তা বুঝতে পেরেছি। সেখানে ৪৫ থেকে ৫০ জনের আদিবাসী বার্ধক্য ভাতা পাওয়া দরকার। বাগানে জলের কষ্ট দূর করতে একটি গভীর নলকূপ বসানোর চেষ্টা করছি।” পুরো বাগানের শ্রমিকদের আর্থিক সমীক্ষা দ্রুত শুরু করা হবে বলে বিডিও জানান। ওই বাগানের দুর্দশার বিষয়টি জানার পরে বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
২০০২ সালে বাগানটি বন্ধ হয় বাম আমল থেকে অনাহার-অর্ধাহারের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলি। ইতিমধ্যে ওই বাগানে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে বাগানের শ্রমিকদের দাবি। গত দু’মাসে বাগানের ১৪ জন অভাবী মানুষ মারা যান। তার মধ্যে ৬ মাসের এক শিশু রয়েছে। ক্ষমতায় আসার আগে থেকে বাগানের দুর্দশা নিয়ে তৎকালীন বাম সরকারের নিন্দায় সরব হয়েছিল বর্তমান শাসক দল। তৃণমূল ক্ষমতা দখলের পর ঢেকলাপাড়া বাগানের গিয়ে বাগান খোলার প্রতিশ্রুতি দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। দেড় বছর বাদেও বাগান চালু না হওয়ায় হতাশ শ্রমিকরা। আইনি কারণে বাগানটি দ্রুত চালু করা যাচ্ছে না বলে কিছুদিন আগে বাগানে গিয়ে জানান গৌতমবাবু। বাগানের অভাবী শ্রমিক ৬৭ বছর বয়সী কেষ্টু লোহার বলেন, “স্ত্রী অসুস্থ পড়ে, সরকারি ভাতা বন্ধ। সামান্য চাল এক হাড়ি ভর্তি জলে ফুটিয়ে ফেন-ভাতের সঙ্গে শাকপাতা ও কচু সেদ্ধ করে মাঝেমধ্যে খেয়ে চলছি।” বাগানের পরিস্থিতি নিয়ে বিষদে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান রাজ্যের অনগ্রসর কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “ওখানে ঘর দেওয়া যেতে পারে কি না সে বিষয়ে আমি আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করছি।” প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা মানস ভুঁইয়া বাগানের দুরবস্থার কথা জেনে তৃণমূল পরিচালিত সরকারের সমালোচনা করে উত্তরবঙ্গের দুই বিধায়ককে ঢেকলাপাড়ার পরিস্থিতি দেখে আসার নির্দেশ দেন। |