বিনা নকশায় বাণিজ্যিক ভবন তৈরির অভিযোগ নিয়ে শিলিগুড়ি শহরের নানা মহলে ক্ষোভ ক্রমশ ক্রমশ বাড়ছে। শহরবাসীও চাইছেন পুরসভা বেআইনি নির্মাণ বন্ধের কঠোর ব্যবস্থা নিক। পুলিশের তরফেও ‘পার্কিং’-এর জায়গায় দোকান তৈরি করায় যানজটের সমস্যা বাড়ছে বলে পুরসভাকে বহুবার জানানো হয়েছে। অথচ পুরসভার পুরসভার অফিসার-ইঞ্জিনিয়রদের একাংশ সরেজমিনে কোনও অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন সেই প্রশ্ন উঠেছে ব্যবসায়ী মহলে। এমনকী, নানা সময়ে পুরসভার ডান-বাম, উভয় তরফে কাউন্সিলররা বেআইনি নির্মাণ ভাঙার বিষয়ে সরব হওয়ার পরেও কাজের কাজ হচ্ছে না দেখে শহরবাসীদের অনেকেই বিস্মিত।
বিশেষত, শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের বক্তব্য, অতীতে ওই ব্যস্ততম বাজারে গ্যারাজের জায়গা দখল করে ‘ল্যান্ডমার্ক’ ও ‘সিটি সেন্টার’ নামে দুটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রে দোকান তৈরির অভিযোগ জানানো হয়। বামেদের দখলে থাকার সময়ে আশ্বাস দেওয়া হলেও গ্যারাজ দখল মুক্ত করতে পুরসভা উদ্যোগী হয়নি বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনেকেরই অভিযোগ। বর্তমান কংগ্রেস-তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের তরফে ওই বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলি মেপে দেখার কাজ হয়েছে। তার পরে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন সেটাই ব্যবসায়ীরা অনেকে বুঝতে পারছেন না। ওই দুটি কেন্দ্র যে নির্মাতা সংস্থা গড়েছে, তাঁদের তরফে অবশ্য অনিল অগ্রবাল অবশ্য বারেবারেই দাবি করছেন, কোনও বেআইনি নির্মাণ হয়নি। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, শেঠ শ্রীলাল মার্কেট শুধু নয়, শহরেই অনেক জায়গায় বাণিজ্যিক কেন্দ্রে গ্যারাজ দখল করার অভিযোগ রয়েছে।
এমতাবস্থায়, একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা হলে পুরসভার পদস্থ অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ররা কী করছেন? পুরসভার কাউন্সিলরদের একাংশ জানান, সরকারি অফিসার-ইঞ্জিনিয়ররা বেআইনি কাজ দেখেও নীরব রয়েছেন কেন তা খতিয়ে দেখা হোক। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট অফিসার-ইঞ্জিনিয়রদের অন্যত্র বদলির দাবিও তুলেছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের অনেকেই। কমিশনার পি ডি প্রধান অবশ্য আগেই দাবি করেছেন, প্রতিটি অভিযোগই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।
যদিও পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সীমা সাহা দাবি করেছেন, বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে সব কটি ক্ষেত্রে তদন্ত হয়েছে। সে জন্যই শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের জায়গায় বিনা নকশায় বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ার কাজ বন্ধ করা হয়েছে বলে বিল্ডিং বিভাগের দাবি। অথচ এলাকার ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানান, চুপিসাড়ে ওই মহাবিদ্যালয়ের হলঘরের মধ্যে পৃথকভাবে ছাদ নির্মাণ হয়েছে। তা নিয়ে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগে জানানো হলেও অফিসার-ইঞ্জিনিয়ররা সরেজমিনে পরিদর্শন করেননি কেন সেটাও ওই ব্যবসায়ীদের কাছে স্পষ্ট নয়। পুরসভার এক্সিকিটিভ ইঞ্জিনিয়র চিত্তরঞ্জন বর্মন প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, যা বলার মেয়রই বলবেন।
অবশ্য যে ট্রাস্টের অধীনে আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের জায়গায় বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়া হচ্ছে, তার অন্যতম কর্তা মতিলাল গুপ্ত বলেন, “হলঘরের ছাদ ঢালাই করা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সে ধরনের কোনও ব্যাপার নেই। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ছাদের একাংশে নির্মাণ কাজ করতে হয়েছে।” কিন্তু, বিনা নকশায় ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করা যায় না। সেটা কী করে সম্ভব হল? মতিলালবাবুর দাবি, “মেয়রের অনুমতি নিয়ে সংস্কার হয়েছে।”
শুধু তাই নয়, পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের অফিসার-ইঞ্জিনিয়র-কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় উদ্বিগ্ন মেয়র পারিষদ সীমা দেবীও। ইতিমধ্যেই তাঁর বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীকে অন্যত্র বদলির দাবি উঠেছে পুরকর্মীদের মধ্যেই। সীমা দেবী বলেন, “অনেক অভিযোগই রয়েছে। সব কিছু নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করব। তার পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানান, দেওয়ালির ছুটির পরে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে। যে সব ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মেয়র জানিয়েছেন। |