শনির দশা কাটল না ‘মাওবাদী’ সন্তোষের। তাই ‘রাজদর্শন’-এ শনি সাজাও হল না। নিরাপত্তার গেরোয় আপাতত মুলতুবি বছর ছাপ্পান্নর এই বন্দির ‘মুক্তধারা’য় সামিল হওয়ার স্বপ্নও।
এমনটা যে হতে পারে, সেই আশঙ্কা ছিল সন্তোষেরও। রাজদর্শন নাটকের মহড়ার সময়েই এই আশঙ্কার কথা তিনি একাধিক বার জানিয়েছেন পরিচালক স্বপন ভট্টাচার্যকে। কিন্তু আশঙ্কার কারণে উৎসাহে ভাটা পড়েনি। পুরোদমে নাটকে অংশগ্রহণ করে গিয়েছেন সন্তোষ। এমনকী, প্রেসিডেন্সি জেলের মধ্যে রাজদর্শনের প্রথম শোয়ে অভিনয়ও করেছেন।
কিন্তু শেষমেশ যখন রাজদর্শনের বাইরে প্রদর্শনের সময় এল, দেখা গেল সন্তোষের আশঙ্কাই সত্যি। রাজ্যের ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের পাড়া ভবানীপুর অগ্রদূত সংঘের মণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘুরে দেখার পরে রাজ্যের পদস্থ জেলকর্তারা সন্তোষকে নিয়ে গিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করাতে সাহস পেলেন না। বাকি বন্দিরা সবাই গেলেন। নাটকও হল। শুধু বাদ পড়ে গেলেন সন্তোষ। তাঁর জায়গায় শনি সাজলেন প্রেসিডেন্সি জেলে সন্তোষের সহবন্দি অনিলবরণ পাছাল। এমনটা হতে পারে আশঙ্কা করে আগে থাকতেই ‘রেডি’ করে রাখা হয়েছিল অনিলকে। এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি মন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁর কথায়, “এটা একেবারেই জেল দফতরের ব্যাপার। তবে আমাদের নাটক খুব ভাল লেগেছে। সবাই খুবই উপভোগ করেছেন।”
মদনবাবু কোনও মন্তব্য না করলেও জেল সূত্রের খবর, সন্তোষের উপরে নিষেধাজ্ঞা অবশ্য ভবানীপুরেই আটকে নেই। আগামী ২৪ নভেম্বর বেহালার পল্লীবাসী ক্লাবে ফের ‘রাজদর্শন’ হওয়ার কথা। সেখানেও সন্তোষের অভিনয়ে অনুমতি মেলেনি। যা শোনার পরে এক জেলকর্তার মন্তব্য, “মনে হচ্ছে, খোলা জায়গায় আর কখনও সন্তোষ নাটক করার অনুমতিই পাবে না। এমনই ইঙ্গিত জেল দফতরের।” নাটকের পরিচালক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “এত দিন ধরে রিহার্সাল করার পরে অভিনয়ের সুযোগ না পেয়ে খুবই মন খারাপ হয়ে গিয়েছে ওঁর। তবে নাটক থেকে কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেননি। এখনও আমাদের সঙ্গে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন।”
জেল সূত্রের খবর, বিশ্বনাথ দেবনাথের ছেলে সন্তোষ হুগলির জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা। লালগড়, শালবনি এবং বেলপাহাড়ি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে সন্তোষের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে একটি মামলায় ইতিমধ্যেই যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে সন্তোষের। এর পরেই ঝাড়গ্রাম সাব-জেল থেকে ২০০৬ সালে তাঁকে নিয়ে আসা হয় প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। তার পর থেকে প্রেসিডেন্সি জেলেই রয়েছেন। সন্তোষের আচরণ নিয়ে অভিযোগ ওঠেনি। রাজদর্শন নাটকে ৩৩ জন অভিনয় করছেন। এর মধ্যে ৩১ জনই সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। বাকি দু’জন জেলকর্মী। ৩১ জনের মধ্যে অন্তত ১৫ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। যার মধ্যে সন্তোষ ছাড়াও রয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন ডাকসাইটে নেতা দুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শুধু সন্তোষকেই কেন অভিনয় করতে দেওয়া হচ্ছে না? জেল দফতরের অফিসারেরা বলছেন, “বাদ উনি পড়বেনই। কারণ, উনি যে মাওবাদী। ওঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা রয়েছে। যতই সংশোধনের কথা বলা হোক না কেন, খোলা জায়গায় মাওবাদী বন্দিকে নিয়ে গিয়ে অভিনয় করানোর সাহস কেউই দেখাতে পারছেন না। কিছু একটা হয়ে গেলে জবাবদিহি কে করবে!”
তবে আইজি (জেল) রণবীর কুমার বলেন, “সংশোধনে আমরা সব সময়েই উৎসাহ দিই। নির্দিষ্ট কোনও কারণে হয়তো সন্তোষকে এখন অভিনয় করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে অবশ্যই হবে।”
আপাতত সেই আশাতেই জেলের মধ্যে দিন গুনছেন সন্তোষ দেবনাথ। |