বাণিজ্য মেলায় আলোচনা
রাজ্যে শিক্ষায় বেসরকারি লগ্নিতেও সমস্যা জমি
শিল্পের সমস্যা এ বার শিক্ষা ক্ষেত্রেও।
রাজ্যের উচ্চশিক্ষা থেকে কারিগরি শিক্ষায় বেসরকারি বিনিয়োগ টানতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হোক বা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে পলিটেকনিক-আইটিআই, কোনও ক্ষেত্রেই মাপমতো জমি মিলছে না। ভারী শিল্পের জন্য কয়েকশো একর করে জমি লাগে। সেখানে কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া মাপকাঠি অনুযায়ী নতুন পলিটেকনিক বা আইটিআই খুলতে প্রয়োজন দেড় থেকে পাঁচ একর জমি। তা-ও অমিল।
বিকাশ ভবনের কর্তারা তাই জমির মাপকাঠি শিথিল করার জন্য কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনাচিন্তা করছেন। তাঁদের প্রস্তাব, ছোট মাপের জমিতেও বহুতল তৈরি করে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু শুধু পশ্চিমবঙ্গের কথায় কেন্দ্র এই দাবি মানবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। বর্তমান পলিটেকনিক কলেজ ও আইটিআইগুলির ভবনেই প্রয়োজনে ‘নাইট-শিফট’ চালু করার কথাও ভাবা হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে রাজারহাট-নিউটাউনে ফাঁকা জমি খুঁজছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
বামেরা শিক্ষায় বেসরকারি বিনিয়োগের বিরোধী হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে উচ্চশিক্ষার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই টেকনো-ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে একটি করে আইটিআই ও প্রতিটি মহকুমায় একটি করে পলিটেকনিক কলেজ তৈরির লক্ষ্যে সেখানেও পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ) মডেল নিচ্ছে রাজ্য। শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে ধরতে দিল্লির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় আজ এক আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সব শিক্ষা দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তা সেখানে হাজির ছিলেন। রাজ্যের তরফে বিনিয়োগকারীদের সামনে জানানো হয়, পিপিপি-নীতি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্দেশিকা তৈরির কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট মিশন’।
রাজ্যের এই সব উদ্যোগ বিশ্ব ব্যাঙ্ক, এডিবি বা বেসরকারি সংস্থার কর্তাদের সাধুবাদ পেলেও মূল সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে সেই জমির প্রশ্ন। গ্রামে ও শহরে পলিটেকনিক বা আইটিআই খুলতে গেলে কতখানি জমি লাগে, তা এআইসিটিই (অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিকাল এডুকেশন) বেঁধে দিয়েছে। যেমন পুর এলাকায় আইটিআই-এর জন্য দেড় একর জমি থাকা দরকার। গ্রামীণ এলাকায় লাগবে তিন একর। পলিটেকনিকের জন্য জমির প্রয়োজন যথাক্রমে দেড় একর ও পাঁচ একর। কিন্তু সেই জমিই মিলছে না। সরকারি সূত্রের খবর, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্দেশিকা তৈরির ক্ষেত্রেও তাই প্রয়োজনীয় জমির পরিমাণ অনেক নিচুতে বেঁধে রাখা হচ্ছে। কলকাতার জন্য পাঁচ একর, অন্য পুর-এলাকার জন্য সাত একর এবং গ্রামীণ এলাকার জন্য দশ একর জমি মিললেই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির অনুমতি দিয়ে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। রবিরঞ্জনবাবু বলেন, “আসলে আমাদের রাজ্যে জনঘনত্ব এত বেশি, সেই কারণেই জমির অভাব।”
বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রেও একই সমস্যার মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রবিরঞ্জনবাবু জানান, এখন সব ক্ষেত্রেই বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা দরকার। এই ক্ষেত্রে বেকার যুবক-যুবতীদের চাকরির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য পুরুলিয়ায় একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। ছেলেমেয়েরা এক মাসের প্রশিক্ষণ শেষেই চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যাদবপুরেও একই ধরনের কেন্দ্র তৈরি করার পরিকল্পনা থাকলেও তার জন্য জমি মেলেনি।”
অথচ লারসেন অ্যান্ড ট্যুবরো, অটোমোটিভ স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল, ডন বসকো-র মতো সংস্থা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলতে আগ্রহী। বিশ্ব ব্যাঙ্কও এই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে অর্থসাহায্য দিতে তৈরি বলে রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে। এই সব সংস্থার কর্তারাও আজকের আলোচনাসভায় হাজির ছিলেন। তা হলে উপায়?
রবিরঞ্জনবাবু জানান, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই ফাঁকা জমি পড়ে রয়েছে। সেখানেই এই ধরনের কেন্দ্র তৈরি সম্ভব। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মহিলাদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
কিন্তু জমি না মিললে প্রতি ব্লকে ও মহকুমায় আইটিআই-পলিটেকনিক খোলার কী হবে, সেই প্রশ্নে এখনও অন্ধকারে রাজ্য সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.