প্রতি বছরের মতো এ বারও ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত কান্দির মহালন্দী এলাকা। ১৯৬২ সালে প্রথম এই ফুটবলের আসর বসে মহালন্দী বাজারপাড়া ফুটবল ময়দানে। মাঝের কয়েকটি বছর অবশ্য এই ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।
কোনও ক্লাবের উদ্যোগে নয়, খেলা হয় সাধারণ গ্রামবাসীদের নিয়ে তৈরি কমিটির পরিচালনায়। প্রায় এক মাস ধরে চলতে থাকা এই ‘মহালন্দী বাজারডাঙা সার্বজনীন ফুটবল টুর্নামেন্ট’-কে ঘিরে এলাকা রীতিমতো উৎসবের চেহারা নেয়। নক আউট এই ফুটবল প্রতিযোগিতায় মোট ৮টি দল অংশগ্রহন করে। নদিয়া, বর্ধমান ও বীরভূমের কয়েকটি ক্লাবও এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। এবার যেমন নদিয়ার গোবিন্দপুর হাসিম স্মৃতি সংঘ, বারুইপাড়া নবীন সংঘ খেলতে আসে। বীরভূমের মারগ্রাম সোনালী স্পোর্টিং ক্লাব এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। বর্ধমান থেকে এসেছে কাটোয়ার ভিমস্টার ফুটবল অ্যাকাডেমি।
গত ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে এই খেলা। এখন সেমিফাইনাল খেলা শেষ হয়েছে। ফাইনাল হবে ১৭ নভেম্বর। ১ নভেম্বর প্রথম সেমিফাইনাল হয় মারগ্রাম সোনালী সংঘ বনাম গোবিন্দপুর হাসিম স্মৃতি সংঘের মধ্যে। এই খেলায় মারগ্রাম সোনালী স্পোর্টিং ক্লাব ২-০ গোলে জিতে ফাইনালে উঠেছে। ১১ নভেম্বর রবিবার দ্বিতীয় সেমিফানালে মুখোমুখি হয় নিথীপুর সাধারণ পাঠাগার ও বারুইপাড়া নবীন সংঘ। এই খেলায় বারুইপাড়া নবীন সংঘ ৩-০ গোলে জয়ী হয়ে ফাইনালে উঠেছে।
এই ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই। কর্মকর্তাদের দাবি খেলা দেখতে শুধু মহালন্দীবাসীরাই নন, আশপাশের গ্রামের লোকও ভিড় জমান। সুষ্ঠুভাবে খেলা সম্পন্ন করতে তাঁরা সহযোগিতাও করেন। টুর্নামেন্টে যোগদানকারী কোনও দলের কাছ থেকে ‘এন্ট্রি ফি’ নেওয়া হয় না। উপরন্তু পড়শি জেলা থেকে খেলতে আসা দলকে যাতায়াত খরচ বাবদ ৩০০০ টাকা করে দেওয়া হয়। জেলার দল পায় ২,৫০০ টাকা। এর সঙ্গে গ্রামবাসীরা খেলোয়াড়দের জন্য দেদার খানাপিনার ব্যবস্থাও করেন।
টুর্নামেন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা অবরার হোসেন বলেন, “গ্রাম লোকজন সাধ্যমতো সাহায্য করেন। ফুটবল খেলা আমাদের গ্রামে উৎসবের মতো। বর্তমান প্রজন্ম ফুটবলের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। ফুটবলকে ধরে রাখতে এটা আমাদের একটা প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে।” গ্রামবাসী সামইন আলি বলেন, “একবার ফুটবল খেলা না হলে যেন মনে হয় গ্রামে কোনও উৎসব হল না।” মহালন্দি -১ অঞ্চলের প্রধান সিপিএমের আবুবক্কর সিদ্দিকী বলেন, “ফুটবলকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর আনন্দ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। খেলা নিয়ে ওঁদের মেতে থাকা খুব ভালো।” |