অগ্নিমূল্য বাজার, তবুও ভাঁটা পড়েনি ভাইফোঁটায়
প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগের কথা। বর্তমানে বিলুপ্ত যমুনা নদীর তীরের বিরহী নামের এক গ্রাম। সেই গ্রামের লোকজন পুজো করতেন মদনগোপাল নামের এক কৃষ্ণ বিগ্রহের। এক রাতে গ্রামের অনেককে তিনি স্বপ্নাদেশ দেন-আমার বোন সুভদ্রা এখানে নেই। কে আমায় ফোঁটা দেবে? সেই স্বপ্নাদেশের কথা প্রচারিত হতেই মদনগোপালকে ঘিরে বিরহী গ্রামে শুরু হয় অনন্য উৎসব-ভাইফোঁটা। গ্রামের মহিলারা মদনগোপালকে ভাইফোঁটা দেওয়া শুরু করেন। সেই রীতি মেনে আজও মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়ালে তেল-সিঁদুর-হলুদ দিয়ে ফোঁটা দেওয়া হয় মদনগোপালকে। তৎকালীন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরকে ১৫৫ বিঘা জমি দান করেন। বিরহী গ্রামে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মহিলারাই ভাইফোঁটায় অংশ নেয়।
নদিয়ার বিভিন্ন এলাকা জুড়েই ভাইফোঁটার দিনে সম্প্রীতির এমন টুকরো-টুকরো ছবি ধরা পড়েছে। আদতে শান্তিপুরের বাসিন্দা রোশনেরা বেগমের বিয়ে হয়েছে চাঁদপাড়ায়। স্বামী মহিউদ্দিন মণ্ডল। পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “বিয়ের পর থেকেই দেখছি প্রতিবেশী চামেলি বিশ্বাস ভাইফোঁটার দিন আমার স্বামী ও দেওরদের ফোঁটা দেন। ওই দিন আমার স্বামী ব্যবসার কাজ বন্ধ রাখেন। চামেলীর কাছ থেকে ফোঁটা না নেওয়া পর্যন্ত তিনি অন্য কাজ করেন না। ভাইফোঁটাতে আমাদের বাড়িতে অনুষ্ঠানও হয়।”
পূর্বস্থলীর দক্ষিণ শ্রীরামপুরের বাসিন্দা অপর্ণা নাথ সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার জন্য। বেলা গড়িয়ে গেলেও ভাই না আসায় খানিক চিন্তাতেও ছিলেন তিনি। একটু বেলা করেই ‘ভাই’ সিরাজুল ইসলাম পৌঁছলেন। নবদ্বীপ বকুলতলা হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষক সিরাজুলবাবু বলেন, “২০ বছর ধরে দিদির কাছে ফোঁটা নিচ্ছি। আমার মঙ্গল কামনায় ‘দিদি’ কপালে ফোঁটা দিচ্ছেন, এটা ভাবা যায়!” তিনি বলেন, “একেবারে ছোট থেকে কলেজ পর্যন্ত এক দিদি ফোঁটা দিতেন। তারপর গ্রাম থেকে নবদ্বীপে আসার পর এই দিদির কাছ থেকে ফোঁটা নিচ্ছি।” অপর্ণাদেবী বলেন, “সিরাজুল ইসলাম কী ভাবে আমার ভাই হলেন, অনেকেই তা জিজ্ঞাসা করেন। আমি বলি তোমরা বুঝবে না।”
নবদ্বীপের পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব। তাঁর আদি বাড়ি বাংলাদেশের নাটোরে। তিনি বলেন, “ছোটবেলায় বড়দের মুখে শুনতাম দ্বিতীয়ার দিন গ্রামে সকলের বাড়িতে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান হত। সেই ধারাবাহিকতা এখনও বজায় রয়েছে। বজায় যে রয়েছে তার প্রমান তথাগত ইসলাম বা অন্বেষা মণ্ডল। ষষ্ঠ শ্রেণির তথাগতকে ফোঁটা দেন কলেজছাত্রী সুপ্রিয়া রাঢী। চাঁদপাড়ার অন্বেষা ফোঁটা দেয় ভাই বিশ্বজিৎ মজুমদারকে।”
ভাইফোঁটা উৎসবের বর্তমান রুপটি একান্তভাবেই লোকাচার। সংস্কৃতজ্ঞ গোঁরাচাদ ভট্টাচার্য বলেন, “দেবতাকে বা ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়া একান্ত ভাবেই বন্ধন গড়ার একটা প্রক্রিয়া। মানুষের মধ্যে যে কুপ্রবৃত্তি রয়েছে তাকে দমন করার জন্য সামাজিক শৃঙ্খলার একটা রুপ ভাইফোঁটা। কোথাও বা রাখীবন্ধন। আবার কোথাও বা এটি রাষ্ট্রনীতি, কূটনীতির অঙ্গ। আর দেবতার সঙ্গে এই ক্রিয়া আসলে রসাস্বাদনের ভিন্ন একটি রুপ। কৃষ্ণ তো সর্বরসের আকর। বিরহী মদনগোপালের ফোঁটার তাৎপর্য এখানেই নিহিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.