সরকারি কাজে ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ এবং একশো দিনের কাজে শ্রমিকদের বেআইনি ভাবে মজুরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গোঘাট ১ ব্লকের তিন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। মনোরঞ্জন পাল, প্রদীপ রায় ও মৃণাল আলু নামে ওই নেতাদের সে কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছে ব্লক প্রশাসন। তাঁদের ‘আচরণ’-এর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
কুমুড়শা পঞ্চায়েতের তিনটি পুকুর সংস্কার নিয়েই বিতর্ক। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক মহম্মদ ঈশা খাঁ বলেন, “তৎকালীন বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল কাজের মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা জেলায় অনুমোদন করিয়ে আনার আগেই বদলি হয়ে যান তিনি।” কিন্তু এ ভাবে প্রশাসন কী তার দায়িত্ব এড়াতে পারে? আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “মৌখিক অর্ডারের কোনও বৈধতা নেই। কখনও জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে কাজ শুরুর পরেও অনুমোদন করানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কাজটি বৈধ না অবৈধ তা নির্ণয়ের প্রক্রিয়া চলছিল। তার আগেই আন্দোলন শুরু হয়।” সেই আন্দোলনের জেরে ইতিমধ্যে টাকাও পেয়ে গিয়েছেন শ্রমিকেরা। আর আন্দোলনে ‘মদত’ দিয়ে সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে তিন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট বিডিও দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, “সরকারি অনুমোদন ছাড়াই কুমুড়শা পঞ্চায়েত এলাকায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পে তিনটি পুকুর সংস্কার হয়েছিল। প্রকল্পের সুপারভাইজার ও একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা শ্রমিকদের মজুরি দাবি করেন। অনুমোদনহীন ভাবে কোনও প্রকল্পের কাজ হয়ে থাকলে টাকা দেওয়ায় সরকারি বাধা-নিষেধ আছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু ওই নেতারা কোনও নোটিস না দিয়েই মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের নিয়ে অনশনে বসেন। প্রশাসনের উপরে চাপ দিয়ে টাকা দিতে বাধ্য করা হয়।” বিষয়টি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতা’র পরিচয় বলেই মনে করে প্রশাসন। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্যই ওই তিন নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান দেবেন্দ্রনাথবাবু। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সুপারভাইজারদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলেও ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর। গোঘাট ১ ব্লক অফিসে ‘আমরণ অনশন’ হয়েছিল গত ১২ অক্টোবর। বিডিও জানান, গত ৬ নভেম্বর ওই নেতাদের চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট আচরণের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। সাত দিন সময় দেওয়া হয়। কেউ কিছু জানাননি। এ বার এফআইআর দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
অভিযুক্ত তিন তৃণমূল নেতার দাবি, তাঁরা কোনও ভুল করেননি। তাঁরা বলেন, “মজুরির দাবিতে গত চার মাস ধরে পঞ্চায়েত অফিসে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। মজুরি না পেয়ে পুজোর আগে মারমুখী হয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। তাঁদের হিংসাত্মক বিক্ষোভকে প্রশমিত করতেই অনশনের পথ নিতে হয়েছিল।” মনোরঞ্জন, প্রদীপ, মৃণালেরা বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হতেই পারে। তবে সরকারি কাজে এ রকম অব্যবস্থা দেখলে আবার একই ঘটনা ঘটাব।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, গোঘাটের কুমুড়শা পঞ্চায়েতের জয়কৃষ্ণপুরে উজলশীল, কুমকুমি এবং স্বস্তি পুকুর তিনটি সংস্কারের কাজ চলে গত ১৮ এপ্রিল থেকে প্রায় দেড় মাস ধরে। কাজ শেষে সংশ্লিষ্ট পাঁচ জন সুপারভাইজার বিশ্বজিৎ মণ্ডল, শিশির দে, উদয় মণ্ডল, জওহরলাল রায় ও সুভাষ কোলেরা ৩১০৫টি শ্রমদিবসের জন্য মাস্টার রোল বানিয়ে পঞ্চায়েতে জমা করেন। সিপিএম পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক ঈশা খাঁর বক্তব্য, “জেলা থেকে প্রকল্পটির অনুমোদন আসার আগেই বেআইনি ভাবে পুকুর সংস্কারের কাজ করে শ’তিনেক শ্রমিক। মজুরি বাবদ প্রায় ৫ লক্ষ টাকার হিসেব দেওয়া হয়। অননুমোদিত প্রকল্প হওয়ায় টাকা দেওয়া যাবে না বলে জানায় জেলা।”
সরকার আইনের কথা বললেও মজুরির দাবিতে পঞ্চায়েত ঘেরাও-বিক্ষোভ শুরু করেন একশো দিনের কাজের সংশ্লিষ্ট শ্রমিকেরা। তাতে তৃণমূল নেতারা ছিলেন সামনের সারিতে। সুপারভাইজারদের তরফে বিশ্বজিৎবাবু জানান, গত মার্চ মাসে ব্লক প্রশাসন থেকে মৌখিক ভাবে কাজটি করার কথা বলা হয়েছিল। সেই মতো পুকুর সংস্কারের কাজ শুরু হয়। প্রশাসন মাঝ পথে কাজ বন্ধ করতে বললেও শ্রমিকেরা তা শোনেননি।
প্রশাসন জানায়, ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ অনুমতি ছাড়াই শ্রমিকদের টাকা দেওয়া হলেও পরে তা নির্দিষ্ট ফান্ড থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়েছে। |