|
|
|
|
তৈরি হল নির্বাচনী সমন্বয় কমিটি |
রাহুলকে সামনে রেখেই প্রস্তুতি দলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দলে তিনি যে দু’নম্বর তা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে রামলীলা ময়দানের সমাবেশ থেকে। আজ বুঝিয়ে দেওয়া হল, রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বেই আগামী লোকসভা ভোটে লড়বে কংগ্রেস।
আজ দলের নির্বাচনী সমন্বয় কমিটির সদস্যদের যে তালিকা ঘোষণা করা হল, তার প্রথম নাম রাহুলের। কংগ্রেস সূত্রে খবর, কমিটি চলবে রাহুলের নির্দেশেই। তাঁর নেতৃত্বেই গড়া হবে প্রাক্ নির্বাচনী জোট, লেখা হবে ইস্তাহার, চলবে প্রচার। এই নিয়োগের মধ্যে দিয়ে রাহুলকে দলীয় সংগঠনের শীর্ষে তুলে আনা হল বলেই মনে করছে কংগ্রেসের একটা অংশ।
শুধু রাহুলের মর্যাদা বৃদ্ধি নয়, নির্বাচনী সমন্বয় কমিটি গঠনের মধ্যে দিয়ে সনিয়া গাঁধী আজ এ-ও বুঝিয়ে দিলেন যে লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এখন থেকেই সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপাতে চলেছে কংগ্রেস।
ঐতিহাসিক ভাবে যে কংগ্রেস ভোটের আগের মুহূর্তে কৌশল নির্ধারণ করতে অভ্যস্ত, প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাতেও যেন সংস্কারের হাওয়া লেগে গেল। মন্ত্রিসভায় যে তিনি এখনই যোগ দিতে চান না, তা বারবার জানিয়েছেন রাহুল। একই সঙ্গে সংগঠনে বৃহত্তর দায়িত্ব নেওয়ার কথা সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর থেকেই তাঁর সেই উত্তরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। রামলীলা ময়দানের পরে গত সপ্তাহে সূরজকুণ্ডে সাংবাদিক বৈঠকে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা নেন তিনি।
সূরজকুণ্ডেই সনিয়া জানিয়েছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। সেই সমন্বয়ের জোরেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কংগ্রেস। সে দিনই সমন্বয় কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণা করেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
আজ যে ৬ সদস্যের কমিটি গড়া হয়েছে তাতে রাহুল ছাড়াও রয়েছেন সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল, জনার্দন দ্বিবেদী, দিগ্বিজয় সিংহ, মধুসূদন মিস্ত্রি এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। এই তালিকা থেকে স্পষ্ট যে মনমোহন সিংহ সরকারের আর্থিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে যেমন হাতিয়ার করবে কংগ্রেস, তেমনই আমআদমির সামাজিক সুরক্ষা ও আর্থিক সুরাহার বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা হবে। এই দুই মতের লোকেদেরই ঠাঁই হয়েছে কমিটিতে।
এর পাশাপাশি সমন্বয় কমিটির তিনটি সাব গ্রুপও তৈরি করে দিয়েছেন সনিয়া। প্রথম গোষ্ঠীটি প্রাক্ ভোট জোট গঠনের বিষয়টি দেখবে। এতে রয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী তথা গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন এ কে অ্যান্টনি, পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি, মুকুল ওয়াসনিক, সুরেশ পচৌরি, জিতেন্দ্র সিংহ, এবং মোহন প্রকাশ।
দলের ইস্তাহার ও সরকারের কর্মসূচি রূপায়ণ সংক্রান্ত সাব গ্রুপে থাকছেন অ্যান্টনি, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে, বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা, বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ-সহ দশ জন। আর প্রচার সংক্রান্ত সাব গ্রুপে রাখা হয়েছে, দিগ্বিজয় সিংহ, অম্বিকা সোনি, মণীশ তিওয়ারি, দীপেন্দ্র হুডা, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, রাজীব শুক্ল এবং ভক্তচরণ দাসকে।
বস্তুত কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমীকরণ ও উত্থানপতনের ছবিটাও আজ পরিষ্কার হয়েছে এই কমিটি গঠনের মধ্যে দিয়ে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদলের সময় কংগ্রেসের অন্দরমহলের তৎপরতায় আহমেদ পটেলের অনুপস্থিতি তাঁর ক্ষমতা খর্ব হওয়ার জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছিল। কিন্তু আজ তাতে ইতি পড়েছে।
একই ভাবে উত্তরপ্রদেশ ভোটে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর দিগ্বিজয় সিংহের মর্যাদা কমেছে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটের কৌশল রচনা করার কাজেও তাঁর উপর আস্থা রাখলেন রাহুল। গত দু’টি লোকসভা ভোটের মতো এ বারও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্ব পেলেন জয়রাম রমেশ।
তবে অম্বিকা সোনির এখনও তেমন প্রাপ্তি হল না। কেন্দ্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে প্রচার সংক্রান্ত সাব গ্রুপে আনা হল বটে, কিন্তু জোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সন্দীপ দীক্ষিত, দীপেন্দ্র হুডা ও জিতেন্দ্র সিংহের মতো তরুণ প্রজন্মই বেশি গুরুত্ব পাবেন বলে কংগ্রেস সূত্রের ধারণা। |
|
|
|
|
|