শুধু পুকুরের ভরসায় নয়। এ বার আগুন নেভানোর জলের জোগানে শহরে ২১টি গভীর নলকূপও প্রস্তুত। একডালিয়া, দেশপ্রিয় পার্ক, কালীঘাট ও চেতলা-সহ বিভিন্ন এলাকায় ওই নলকূপগুলি দমকলকে জল দিতে গড়ে তোলা হয়েছে। দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া জানান, শহরে সমীক্ষা চালিয়ে মোট ৮১টি জায়গায় জলের উৎস বার করা হয়েছে। পুরসভা ও দমকল বিভাগের যৌথ উদ্যোগে আপাতত ২১টি গভীর নলকূপ তৈরি। বাকিগুলিও শীঘ্র চালু হয়ে যাবে।
জলের অভাবে আগুন নেভানোর কাজে বিঘ্ন ঘটার কথা প্রায়ই শোনা যায় দমকলের মুখে। দুর্গাপ্রসাদবাবু জানান, গত মার্চে হাতিবাগান বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জল পাওয়া নিয়ে রীতিমতো সমস্যায় পড়ে দমকল। জল জোগাতে দেরি হওয়ায় বাসিন্দাদের রোষ গিয়ে পড়ে তাঁদের উপরেই। শহরে জলাশয় কম থাকায় আগুন নেভাতে বারংবার সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জলের উৎস খোঁজা শুরু হয়। মেয়র পারিষদ (নলকূপ) তারক সিংহ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মতো শহরের কোথায় কোথায় পুকুর আছে, তার একটি তালিকা দমকলের কাছে পাঠানো হয়। সেই তালিকা ধরে পুরসভা ও দমকল যৌথ ভাবে ওই নলকূপগুলি চিহ্নিত করে।”
পুরসভার ডি জি (জল সরবরাহ) বিভাস মাইতি জানান, ওই সব নলকূপের মুখে দমকলের পাইপ লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা জুড়ে দিয়ে মাত্র ৩-৪ মিনিটে দমকলের গাড়ি ভর্তি করা যাবে। সম্প্রতি রিপন স্ট্রিটের একটি গভীর নলকূপে ওই ব্যবস্থা চালু করেন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। জাভেদ বলেন, “শহরে পুকুর কম। বহু পুকুরে জল নেই। নলকুপের জলে দমকলের গাড়ি ভর্তির পাশাপাশি সেখানে হোসপাইপ লাগিয়েও আগুন নেভানো যাবে।” জলের অভাবেই যে অনেক জায়গায় সময়ে আগুন নেভানো যায় না, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি। মন্ত্রীর কথায়, “কালীঘাট, অকল্যাল্ড প্লেস, ওয়েলিংটন, লালদিঘি-সহ গুটি কয়েক জায়গা জলের উৎস আছে। ওই ক’টি মাত্র উৎস নিয়ে এত বড় শহরের অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ খুবই কঠিন।”
শহরের ঘিঞ্জি গলিতে আগুন লাগলে সেখানে বড় গাড়ি ঢোকানোর ব্যবস্থা থাকে না। নলকূপের জল ছোট গাড়িতে ভরে ঘটনাস্থলে সহজেই পাঠানো সম্ভব বলে জানান দমকলমন্ত্রী। পুরসভার যে সব ওয়ার্ডে জলাশয়ের অভাব, সেখানে আগুন নেভানোর জন্য নলকূপের ব্যবস্থা করা হবে বলে দমকল সূত্রে জানানো হয়েছে।
আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের পক্ষ থেকে তা নেভানোর কাজ শুরু করার জন্য কাউন্সিলরকে হোসপাইপ কিনে রাখার অনুরোধ করছেন জাভেদ খান। তাঁর মতে, নলকূপের জলের চাপ চারতলা পর্যন্ত যেতে পারে। কোনও কারণে দমকলের আসতে দেরি হলে স্থানীয়েরাই নলকূপ চালিয়ে কাজ শুরু করতে পারবেন। |