কলকাতা বিমানবন্দরের এক কর্মীর বিরুদ্ধে অধিকর্তার কাছে দুর্ব্যবহারের লিখিত অভিযোগ করেছেন অনাবাসী এক ভারতীয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি বিমানবন্দরের বাইরে গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কাজে নিযুক্ত উর্দি পরা রক্ষীদের এক জন। নিজের শহরের বিমানবন্দরে নেমে চৈতালীর যে দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়েছে, তার বিবরণ দিয়ে ওই মহিলার উক্তি, “টার্মিনালের বাইরে গাড়ি সামলাতে যে আপনাদের কর্মীরা ব্যর্থ, তা দৃশ্যতই স্পষ্ট।”
যখন এক সঙ্গে অনেক যাত্রী কলকাতায় নামেন, তখন অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বাইরের চেহারাটা কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। তার উপরে এখন পুজো ও দীপাবলি উপলক্ষে যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে, টার্মিনালের বাইরে থেকে গাড়ি ধরতে গিয়ে বিভিন্ন ভাবে যাত্রীদের হেনস্থা হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। অনাবাসী চৈতালী দত্ত এই দৃশ্যের সঙ্গে অভ্যস্ত নন। |
টার্মিনালের সামনে গাড়ির জটের চেনা ছবি। বৃহস্পতিবার। ছবি: শৌভিক দে |
কেন এই ব্যর্থতার ছবি? বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সন্ধ্যায় চারটে উড়ান পরপর নামলে একই সময়ে প্রায় ৫৫০ জন যাত্রী বেরিয়ে আসেন। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বাইরের জায়গাটি অত যাত্রীর তুলনায় অপ্রশস্ত। বিমানবন্দরের কর্মী ইউনিয়নের নেতা দীপঙ্কর ঘোষের কথায়, “যাত্রী-সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় টার্মিনালের ভিতরে বিল্ডিং বাড়ানো হয়েছে। ফলে টার্মিনাল আর পার্কিংয়ের জায়গার মাঝের ব্যবধান আরও কমে গিয়েছে।”
তার উপরে টার্মিনালের বাইরে ভিড় করেন ভাড়ার গাড়ির চালকেরা। দাঁড়িয়ে থাকে বড় বাসও। কাছেই ট্যাক্সির বিশাল লাইন। অন্য বড় বিমানবন্দরে ট্যাক্সি ধরতে এক দিকে হেঁটে যেতে হয়, নিজস্ব গাড়ি ধরতে অন্য দিকে। এখানে সব গাড়িই সামনে এসে দাঁড়ায়। দীপঙ্করবাবু বলেন, “দিল্লিতে দেখেছি, হুইস্ল শুনে বিমানবন্দরের সামনে থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান চালক। এখানে তার পরোয়া করেন না কেউ।” অভিযোগ, নিয়ম ভাঙার পরেও এখানে চালকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
কলকাতা বিমানবন্দরে ট্রলির অবস্থাও খারাপ। শহরের এক উদ্যোগপতি সৈকত বসু বলেন, “শহরে নামলেই বাইরের মানুষের কাছে একটি ভুল বার্তা যায়। যেখানে গাড়ি দাঁড়ানোর কথা নয়, সেখানে সব চেয়ে বেশি সরকারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রলি নিয়ে পার্কিং পর্যন্ত পৌঁছনো যায় না। মাঝে পাঁচিল দিয়ে দিয়েছে। কেন যাত্রী নিজের স্যুটকেস বয়ে পার্কিং পর্যন্ত হেঁটে যাবেন? তাই তাঁরা গাড়ি ডেকে নেন।”
পার্কিং পর্যন্ত বা আরও দূরে ট্রলি চলে গেলে, তা নিয়ে আসার লোকের অভাব বিমানবন্দরে। তাই এই পাঁচিল দেওয়া হয়েছে বলে খবর। একটি বহুজাতিক সংস্থার কর্মী সন্দীপ মিত্র প্রায়ই যাতায়াত করেন এই বিমানবন্দর দিয়ে। বললেন, “বৃষ্টি হলে খুব অসুবিধা হয়। বয়স্ক এবং বাচ্চাদের নিয়ে গাড়ি ধরতে সমস্যা হয়।”
গত মঙ্গলবার রাতে হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় নামেন চৈতালী। তাঁর গায়ে তখন বেশ জ্বর ছিল। চৈতালী ফোনে চালককে গাড়ি নিয়ে টার্মিনালের সামনে আসতে বলেন। অভিযোগ, টার্মিনালের বাইরে দেখেন অনেক গাড়ির ভিড়। অভিযোগ, সেই পরিস্থিতিতে গাড়িতে মালপত্র নিয়ে ওঠার সময়ে চৈতালীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ওই রক্ষী। বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “যাত্রীদের সুবিধার্থেই অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসারদের ওই কাজে নিয়োগ করা হয়। আগে এমন অভিযোগ পাইনি। কী ভাবে ট্রাফিক সামলাতে হবে, যাত্রীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে, সবই শেখানো হয় তাঁদের।” |