বাঙালি ভাইয়ের কপালে নেপালি বোনের ফোঁটা
ছর পঞ্চাশ ধরেই চলছে এই প্রথা। নেপালি ‘ভাইদুজ’ আর বাঙালিদের ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার একত্র সহাবস্থান। এ বারও বার্নপুরে এই দুই রীতি মেনে একই সঙ্গে আয়োজিত হল ভাই ফোঁটা। নেপালি দিদি কখনো মঙ্গল কামনা করলেন তাঁর বাঙালি ভাইয়ের। আবার বাঙলি বোনও কোথাও বা তাঁর নেপালি দাদাকে ফোঁটা দিলেন। ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য ভুলে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের এই সাংস্কৃতিক বিনিময় দেখতে উপস্থিত ছিলেন এলাকার বাসিন্দারাও। অনুষ্ঠান শেষে মিষ্টি মুখ করলেন সকলে।
বার্নপুরের নিজস্ব চিত্র।
ষাটের দশকে ইস্পাত শহর বার্নপুরের ত্রিবেণী মোড় আবাসন কলোনিতে এই উৎসব শুরু হয়। পুরনো বাসিন্দারা জানান, একসঙ্গে বেড়ে ওঠা দুই সম্প্রদায়ের নবীন প্রজন্মের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্যেই মূলত এই প্রথা। এখন আড়ম্বর অনেকটাই কমেছে। কিন্তু আয়োজনের কোনও ত্রুটি নেই। খামতি নেই মানসিক প্রস্তুতিতেও। ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানটিকে নেপালি সম্প্রদায়ের মানুষজন ‘ভাইদুজ’ বলে ডাকেন। বাঙালিদের মতো ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিনেই নেপালি মেয়েরা ভাইদের মঙ্গল কামনায় এই আচার পালন করেন। প্রবীন বাসিন্দা সাধনা গুরুঙ্গ জানান, মূল দরজার চৌকাঠে আম্রপল্লব লাগানো মাটির ঘট বসানো হয়। সামনে রাখা হয় একটি গোটা আখরোট। ভাইকে চৌকাঠের সামনে দাঁড় করিয়ে বোনেরা ওই আখরোটটি ভাঙেন। শত্রু বিনাশের একটি প্রতীকী আচার এটি। এর পর ভাইকে ঘরে নিয়ে এসে আসন পেতে বসিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। কপালে পরানো হয় চালগুড়ি আর চন্দনের ফোঁটা। গলায় ‘থুঙে’ বা গাঁদার মালা পরিয়ে তেলরুটি, ফিনিরুটি (ঘরে তৈরি এক ধরণের নেপালী মিষ্টি) খেতে দেওয়া হয় ভাইকে। তার পর ফোঁটা।
বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সাজো সাজো রব। ফোঁটা দিতে তৈরি দুই সম্প্রদায়ের মেয়েরাই। বেলা একটা নাগাদ শুরু হল অনুষ্ঠান। দুই সম্প্রদায়ের ভাই-বোনেরা পারস্পরিক প্রথা মেনে অংশ নিলেন এই অনুষ্ঠানে। এ দিনের সবচেয়ে ছোট বাঙালী ভাই অঙ্কিত সেনকে নিজেদের রীতি মেনে ফোঁটা দিল তার নেপালি দিদি লাভলি শর্মা। আর নেপালি ভাই অশোক থাপাকে ভাইফোঁটা দিল বাঙালী দিদি মিঠু মাজি।
এলাকার প্রবীন বাসিন্দা দীলিপ ছেত্রী জানালেন, এক সময়ে এই কলোনিতে প্রায় পাঁচ হাজার নেপালি সম্প্রদায়ের মানুষ থাকতেন। কলোনির মাঠে ম্যারাপ বেঁধে ওই উৎসব পালন হত। এখন সংখ্যাটা কমেছে। তাই আড়ম্বর প্রায় নেই। অন্য এক বাসিন্দা বিজয় বর্মনের বক্তব্য, নেপালি সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা কমলেও অনুষ্ঠানের উষ্ণতা কমেনি কিছুই। পঞ্চাশ বছর আগের পরম্পরা চলছে এখনও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.