স্কুলের মধ্যে ৫ ঘণ্টা আটকে থাকা প্রথম শ্রেণির এক শিশুকে দরজার তালা ভেঙে উদ্ধার করলেন পড়শিরা। স্কুলে তালা দেওয়ার আগে ক্লাস ঘর ভাল করে পরীক্ষা না করাতেই ওই শিশু আটকে পড়েছিল বলে মেনে নিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও। সোমবার মানবাজারের ভালুবাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটনা। পুলিশের কাছে সে দিন রাতেই স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন শিশুটির অভিভাবক ও পড়শিরা।
ভালুবাসা গ্রামের উদ্দীপ্ত রায়মাহাতো নামের ওই শিশুকে এ বছরের জুলাই মাসে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। তার দাদু প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক পরমেশ্বর রায়মাহাতো জানান, প্রতিদিন তিনি নাতিকে স্কুলে দিয়ে আসেন ও নিয়ে আসেন। তাঁর কথায়, “সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ দেখি উদ্দীপ্তর স্কুলের কয়েকজন পড়ুয়া বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। উদ্দীপ্ত কোথায় জানতে চাইলে ওরা কিছু জানাতে পারেনি। স্কুলে গিয়ে দরজায় তালা দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই।” উদ্দীপ্তর বাবা অনিল রায়মাহাতো বলেন, “স্কুল ছুটির পরে ছেলেটা কোথায় গেল এই দুর্ভাবনায় চারদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিই। কয়েকদিন আগে গ্রামেরই এক শিশু পুকুরে ডুবে মারা যায়। তাই আশপাশের পুকুরেও লোকজনকে নামিয়ে খোঁজ করা হয়। সন্ধ্যায় স্কুলের স্কুলের কার্নিশ বেয়ে দোতলায় প্রথম শ্রেণির ক্লাস ঘরে পাড়ার এক যুবক উঁকি মেরে মেঝেতে উদ্দীপ্তকে কাঁদতে দেখে।” এরপরে বাসিন্দারা স্কুলের দরজার তালা ভেঙে তাকে নামিয়ে নিয়ে আসে। |
মঙ্গলবার সকালে উদ্দীপ্ত বলে, “একতলায় ছিলাম। পরে দোতলায় ক্লাসে গিয়ে খাতায় লেখালেখি করছিলাম। কখন সবাই চলে গিয়েছে জানতে পারিনি। পরে নীচে নেমে দেখি স্কুল বন্ধ। চিৎকার করে কাঁদতে থাকি। কেউ শুনতে পায়নি।” এলাকার বাসিন্দা প্রবোধ রায়মাহাতো, শংকর রায়মাহাতো, অজিত রায়মাহাতোরা বলেন, “ক্লাস ঘরগুলো ভাল করে না দেখেই শিক্ষকরা স্কুলের দরজায় তালা দিল কী করে? ছেলেটার কিছু হয়ে গেলে কী হত?” স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, “ব্যাঙ্কে কাজ থাকায় আমি দেড়টায় চলে গিয়েছিলাম। অন্য দুই শিক্ষক পরে স্কুলে ছুটি দিয়ে যান।” সহ শিক্ষক আলাউদ্দিন আনসারির দাবি, “ওই দিন স্কুলে মাত্র ১২ জন পড়ুয়া আসায় একতলাতেই সবাই ছিল। কখন উদ্দীপ্ত দোতলায় চলে গিয়েছিল জানতে পারিনি। তবে স্কুলে তালা দেওয়ার আগে ক্লাসঘরগুলো ভাল করে দেখা উচিত ছিল।” পুলিশ জানিয়েছে, স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে তারা কথা বলবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নীলকমল মাহাতো বলেন, “ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। শিক্ষকদের আরও সতর্ক ও দায়িত্ববান হওয়া উচিত। ছুটির পরে স্কুল খুললে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেব।” |