কোথাও গভীর রাত পর্যন্ত তারস্বরে মাইক বাজানো হয়েছে। আবার কোথাও প্রায় রাতভর বিকট শব্দের বাজি ফাটানো হয়েছে। মালদহ থেকে শিলিগুড়ি, কোচবিহার থেকে জলপাইগুড়ি, অনেক এলাকার বাসিন্দারাই ওই অভিযোগ করেছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। অধিকাংশ জায়গাতেই ‘ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে’ এমন আশঙ্কায় পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ জানানোর ঝুঁকি নেননি।
মালদহ শহরের পূর্বপ্রান্তের বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, সোম ও মঙ্গলবার, দুরাত ধরে নিষিদ্ধ শব্দবাজি পাঠানো হয়েছে। মালদহের প্রবীণ আইনজীবি সুবীর ভৌমিক বলেন, “দুদিন ধরে শব্দাসুরের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছি। জানালা পর্যন্ত বন্ধ করে রাখতে হয়েছে।” শিলিগুড়ি পুর এলাকার অন্তত ১০টি ওয়ার্ডে রাতভর কয়েক দফায় নিষিদ্ধ শব্দবাজি পাঠানো হয়েছে। সেবক রোডে এলাকার বাসিন্দাদের কয়েকজন জানান, বাজির শব্দের প্রাবল্য এতটাই ছিল যে কয়েকটি বহুতল আবাসনের কাচে চিড় ধরেছে। শিলিগুড়ি লাগোয়া গ্রামাঞ্চলেও রাতভর তারস্বরে মাইক বাজানোর ঘটনাও একাধিক জায়গায় ঘটেছে। শিলিগুড়ি শহরে লক্ষাধিক টাকার বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
কোচবিহারের শহর ও লাগোয়া এলাকায় সোমবার রাত থেকেই শব্দবাজির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হন বাসিন্দারা। দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জে বিস্তীর্ণ এলাকাতেও দেদার শব্দবাজি ফাটানো হয় বলে অভিযোগ। কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি রাজু রায় বলেন, “সোমবার রাত থেকেই শহর জুড়ে পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারির খামতির সুযোগ নিয়ে দেদার শব্দবাজি ফেটেছে। তার মধ্যে পি এন রোড, এন এন রোড , ভবানীগঞ্জ বাজার ও লাগোয়া এলাকায় ওই তান্ডব ছিল সব থেকে বেশি।”দিনহাটার বাসিন্দারাও শব্দবাজির দৌরাত্ম্যে বিরক্ত এলাকাবাসী। দিনহাটা নাগরিক উন্নয়ন মঞ্চের সম্পাদক জয়গোপাল ভৌমিক বলেন, “পুলিশী নজরদারি ঢিলেঢালা না হলে বিভিন্ন দোকানে সামান্য রাখঢাক করে শব্দবাজি বিক্রির সুযোগ থাকত না।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস অবশ্য লাগাতার অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। পুলিশ সুপার বলেন, “শব্দবাজির ব্যবহার বন্ধে লাগাতর অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে আড়াই হাজার প্যাকেট শব্দবাজি উদ্ধার করে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” একইভাবে মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল জানান, জেলায় কয়েকশো কেজি শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি, শব্দবাজি বিক্রি রুখতে নজরদারি চলছে বলে তিনি দাবি করেন।
উত্তর দিনাজপুরের বেশ কয়েকটি এলাকাতেও একই অভিযোগ শব্দবাজি নিয়ে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “এ বছর উত্তর দিনাজপুর জেলায় কানফাটানো শব্দবাজি ফাটছে না বলেই আমাদের কাছে খবর রয়েছে। কিছু শব্দবাজি তো ফাটবেই। তবে পুলিশ প্রশাসনের সক্রিয়তায় পরিস্থিতি আপাতত ঠিকই রয়েছে।” রায়গঞ্জের ডিএসপি প্রদীপ সিংহ জানান, নিষিদ্ধ শব্দবাজির কারবার ও ফাটানো রুখতে জেলা জুড়ে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান চলছে। জলপাইগুড়ি, ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি বীরপাড়াতে অবাধে শব্দ বাজি পুড়েছে। ময়নাগুড়ি বাজার, জলপাইগুড়ির দিনবাজারে নিষিদ্ধ শব্দবাজি রমরমিয়ে বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা সুব্রত সরকার বলেন, “অনেক দোকানেই নিষিদ্ধ শব্দবাজি মিলেছে। তাই সন্ধ্যের পর থেকে শব্দবাজির দাপট বেড়েছে।”
জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ অবশ্য প্রচুর শব্দবাজি আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে। মঙ্গলবার দেওয়ালির দিনেই জলপাইগুড়ি শহরে শব্দবাজি বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে তিন জন। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকার নিষিদ্ধ শব্দবাজি। ধূপগুড়ি নাগরাকাটা, ময়নাগুড়ি সহ ডুয়ার্সে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার টাকার শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে. জেলায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “শব্দবাজি নিয়ে লাগাতার অভিযান চালানো হয়েছে। যেখান থেকে অভিযোগ এসেছে সেখানেই হানা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি থানা এলাকা থেকেই শব্দবাজি আটক করা হয়েছে।” জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী মনে করেন, শব্দবাজির প্রকোপ পুরোপুরি বন্ধ করতে সকলেরই সচেতন হওয়া দরকার। পাশাপাশি, পুলিশকেও আরও নজরদারির অনুরোধ করেছেন তিনি। |