প্রযুক্তির কাছে হার মানছে উৎসবের শুভেচ্ছাপত্র
নীল রঙের ‘ইনল্যান্ড’ চিঠি লুপ্তপ্রায়। গোটা বছর জুড়ে বাড়ির চিঠির বাক্স গাদা গাদা ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, ইলেকট্রিক, ফোন বিলের মতো কেজো কাগজে ভর্তি। শুধু বিজয়া, দীপাবলি, নববর্ষ বা জন্মদিনের গ্রিটিংস কার্ড-এর দৌলতেই চিঠির বাক্স খোলার উৎসাহ এখনও বজায় রয়েছে।
ভাব দেওয়া নেওয়ার বাজারে এ বার সেই গ্রিটিংস কার্ডও পিছু হটছে। এস এম এস, ই-মেল, ফেসবুক, অর্কুট, জি-টকের জমানায় উৎসবের শুভেচ্ছা জানাতে রঙবেরঙের কার্ড ফিকে হয়ে যাচ্ছে। বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষা অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে দীপাবলি গ্রিটিংস কার্ডের চাহিদা ৭০% কমেছে। এই ছবি দীপাবলির শুভেচ্ছাতেই সীমাবদ্ধ নয়। নববর্ষ, দুর্গাপুজো, বড়দিন যে কোনও উৎসবেই শুভেচ্ছা জানাতে কার্ড নয়, ফোন ও ইন্টারনেটই জেনারেশন এক্স-এর প্রথম পছন্দ।
গ্রিটিংস কার্ড-এর পড়তির বাজারে মার খাচ্ছে ডাক ও তার বিভাগও। কয়েক বছর আগেও দীপাবলির সময়ে কার্ড বিলি করতে হিমসিম খেতেন ডাক ও তার বিভাগের কর্মীরা। দেশ জুড়ে ডাকঘরে প্রতিদিন ৮,০০০ কার্ড সামলাতেন তাঁরা। এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০০-য়।
শুধুই উৎসব নয়। অন্যান্য কার্ড-এর ক্ষেত্রেও বিক্রি কমছে। প্রায় ৪০০কোটি টাকার কার্ডের বাজার ইন্টারনেটের গতির কাছে ক্রমশ হেরে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত বলেন, “ইন্টার -নেট ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সামাজিকতা সেরে ফেলার প্রবণতা বাড়ছে। মোবাইলেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং বা এসএমএস মারফত পৌঁছে যাচ্ছে বার্তা।”
বাজারের এই হালের কথা উঠে এল আর্চিজ-এর বক্তব্যেও। কার্ডের বাজারের ৫০% আর্চিজ-এর দখলে। তারা জানিয়েছে, গত দু’বছরে উৎসব সংক্রান্ত কার্ড কম বিক্রি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বাড়ছে ‘ফাদার্স ডে’, ‘মাদার্স ডে’-র মতো বিশেষ দিনগুলির জন্য কার্ড কেনার প্রবণতা। তবে এ সব কার্ডের বিক্রি উৎসবের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে পারছে কি না, তা নিয়ে অবশ্য মন্তব্যে নারাজ তারা।
মনের কথা আদান-প্রদানের এই বাজারকে গুরুত্ব দিতেই আঞ্চলিক ভাষার দিকে ঝুঁকছে তথ্য -প্রযুক্তি সংস্থা। ইংরেজিতে ‘চন্দ্রবিন্দু’ লেখা। বা যুক্তাক্ষর ভেঙে লিখতে গিয়ে এক গাদা ইংরেজি অক্ষর লেখার ঝক্কি সব মিলিয়ে ছন্দপতন। এই সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজে ফেলছে তারা। ব্যবসার টানে আঞ্চলিক ভাষায় নিজেদের প্রযুক্তি পৌঁছতে ঝাঁপাচ্ছে মাইক্রোসফট, গুগল, নোকিয়ার মতো সংস্থা।
নেটের গতির কাছে হেরে যাচ্ছে গ্রিটিংস কার্ড বা শুভেচ্ছাপত্র। এই ছবি স্পষ্ট তরুণ প্রজন্মের কথাতেও। কলেজ ছাত্রী মৃত্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মতে কার্ড দেওয়াই শুভেচ্ছা জানানোর শ্রেষ্ঠ উপায়। কিন্তু হাতে সময় কম। তাই ‘বিশেষ’ বন্ধু ছাড়া এসএমএস ও ফেসবুকই ভরসা। বার্তার সঙ্গেই পৌঁছে যাবে হাসি মুখের ‘স্মাইলি’ও। একই বক্তব্য তরুণ সফট্ওয়্যার ডিজাইনার রমিত চট্টোপাধ্যায়েরও। কাছের মানুষকে কার্ড দেওয়ার সময় করে নিলেও বাকিদের জন্য এসএমএস ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট বেছে নেন তিনি।
হেল্প এজ, ইউনিসেফ, ক্রাই-সহ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অবশ্য অন্য দাবি। সমাজের জন্য কিছু করার টানেই মানুষ তাদের তৈরি কার্ড কেনেন। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে কর্পোরেট জগৎ। নববর্ষ বা অন্য সময়ে শুভেচ্ছা জানাতে এ সব সংস্থার কার্ডই প্রথম পছন্দ বলে দাবি ক্রাই মুখপাত্রের। প্রসঙ্গত রাজনীতিবিদরাও শুভেচ্ছা জানাতে কার্ডই পছন্দ করেন। যেমন গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিশিষ্ট জনদের কার্ড পাঠাচ্ছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.