কারজাই-মনমোহন কথা
ভারতও এ বার তালিবান দমনের আফ-পাক অক্ষে
য়াদিল্লি-ইসলামাবাদ-কাবুল। নতুন এই কূটনৈতিক অক্ষ গড়ে তুলে আফগানিস্তানের পুনর্গঠন এবং তালিবান জঙ্গি নিশ্চিহ্ন করার এক সূত্র সন্ধান করা হচ্ছে। আফগানিস্তান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই তাঁর সাম্প্রতিক ভারত সফরে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে। এই কৌশল রচনায় যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে আমেরিকারও।
দ্বিতীয় বারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করাই শুধু নয়, বারাক ওবামার এখন অন্যতম লক্ষ্য, বিদেশ এবং নিরাপত্তা নীতির বাস্তবসম্মত রূপায়ণ। সেই সূত্রেই এখন ওবামা প্রশাসানের সামনে আফগানিস্তানে আল কায়দা এবং তালিবান বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করা অগ্রাধিকারের মধ্য পড়ছে। মার্কিন প্রশাসনের আপাতত সিদ্ধান্ত, পূর্বসিদ্ধান্তমাফিক আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হলেও ছোট কিন্তু দ্রুত মোক্ষম আঘাত হানতে সক্ষম একটা ‘লিথাল’ বাহিনী সেখানে রেখে দেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতেই কারজাইয়ের সদ্যসমাপ্ত সফরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তালিবান দমনের জন্য নয়াদিল্লি-কাবুল-ইসলামাবাদকে নিয়ে একটি সক্রিয় অক্ষ গড়ে তোলার চেষ্টা হোক। নয়াদিল্লি এবং কাবুল দু’পক্ষই একমত, পাক সামরিক প্রশাসন যতক্ষণ না জঙ্গি সংগঠনগুলির উপরে যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করবে ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি প্রক্রিয়া সাফল্য পাবে না। তাই ইসলামাবাদকে সঙ্গে রেখে এগোনোই (কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক দু’তরফেই) যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছে দু’দেশ।
রাজঘাটে গাঁধী মূর্তি হাতে হামিদ কারজাই। ছবি: পিটিআই।
আমেরিকাও এ কথা জানে। ওয়াশিংটনের তরফে রাওয়ালপিন্ডিকে বলা হয়েছে যে, পাক সেনা যদি কারজাই এবং নয়াদিল্লির সঙ্গে অক্ষ স্থাপনে আন্তরিক না হয়, তা হলে লাদেনকে মারার জন্য পাক সরকারকে অন্ধকারে রেখে যে ভাবে অভিযান চালানো হয়েছিল, ভবিষ্যতে তেমন ঘটনা বাড়বে। কারজাই এবং মনমোহন একমত যে, মার্কিন চাপ এবং পাক সেনার নেতৃত্বে পরিবর্তন সত্ত্বেও তালিবান-প্রশ্নে পাক সেনা সব সময়ই নরম মনোভাব নিয়ে চলছে। শীঘ্রই তালিবান বিরোধী বড় অপারেশন হতে পারে বলে খবর। তার আগে আমেরিকা ভারতকে জানিয়েছে, নয়াদিল্লি গোটা অঞ্চলে বাস্তবোচিত ভূমিকা নিক। অন্য দিকে পাকিস্তানকে বলা হয়েছে, জঙ্গি পরিকাঠামো দমনের ব্যাপারে যে অপারেশন হবে, তাতে ইসলামাবাদ সাহায্য না করলে তার পরিণতি ভাল হবে না। বার্তা স্পষ্ট, অনেক গুরুত্বপূর্ণ তালিবানি জঙ্গি, যারা পাকিস্তানের মাটিতে লুকিয়ে রয়েছে, তাদের কারজাই সরকারের হাতে তুলে দিক ইসলামাবাদ।
লাগাতার এই মার্কিন চাপের মধ্যেই আগামী ২৬ নভেম্বর ভারতে আসছেন পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক। তাঁর এই সফরকে কারজাইয়ের সফরের সঙ্গে জড়িয়েই দেখছে সাউথ ব্লক। নয়াদিল্লির বক্তব্য, জঙ্গি দমনের বিষয়টি নিয়ে এখন অনেকটাই সুর নরম করেছে পাকিস্তান। কিন্তু ভারতের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা কাশ্মীর প্রসঙ্গ। আফগানিস্তানে তালিবান দমনে আমেরিকার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার ‘দাম’ হিসেবে ইসলামাবাদ কাশ্মীর প্রসঙ্গে সরব হতে পারে। পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সঙ্গে অক্ষ তৈরি করতে গিয়ে তার নিজের স্বার্থ যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সে দিকটিওতে নজর রাখতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে। আমেরিকার অনুরোধ মেনে আফগানিস্তানে বাস্তবোচিত ভূমিকা নিতে গিয়ে তারা এমন কিছু করতে চাইছে না, যা ভবিষ্যতে বিপদ ডাকতে পারে। অর্থাৎ অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি ভুলে পেন্টাগনের সঙ্গে যৌথ ভাবে তালিবান দমনে সেনা পাঠানোর বিষয়টি থেকে দূরে থাকতে চাইছে নয়াদিল্লি। এ কথা জানানোও হয়েছে কারজাইকে।
তবে এটা ঠিকই যে, দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা ভারতের জন্য সুবিধাজনক। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, আফগানিস্তানকে ঘিরে বিভিন্ন দেশের স্বার্থ এখন একে অন্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এত দিন ধরে পাকিস্তান কাবুলে ভারতের গঠনমূলক ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছে, এমনকী ঘুরিয়ে হুমকি দিতেও ছাড়েনি। কিন্তু লাদেন পরবর্তী পর্যায়ে আমেরিকা যে ভাবে চাপ বাড়িয়েছে ইসলামাবাদের উপরে, তা নয়াদিল্লির পক্ষে সুবিধাজনক। কাবুলে ভারতের ভূমিকা ক্রমশই সুপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কারজাই দিল্লি এসে মনমোহনকে বলেছেন, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে ‘ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’ চুক্তি হয়েছে, তাতে ভারতও সামিল হোক। তাঁর কথায়, “ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক যত ভাল হবে, আফগানিস্তানের সমৃদ্ধির পথও তত সুগম হবে।” সব মিলিয়ে বল এখন অনেকটাই ভারতের কোর্টে। তবে সব দিক বিবেচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ভারতের নতুন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদের সঙ্গে পাক নেতৃত্বের ভবিষ্যতের আলোচনায় আফগানিস্তান প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাবে বলেই জানাচ্ছে বিদেশ মন্ত্রক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.