পরিকাঠামোর উন্নতি হলেও উন্নতি হয়নি চিকিৎসা পরিষেবার। এমনই অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের।
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিধায়ক তহবিলের টাকায় সম্প্রতি বেশ কিছু সংস্কার করা হয়েছে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের। আনা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। হাসপাতাল চত্বরে বসেছে বৈদ্যুতিক টাওয়ার। রোগীর আত্মীয়দের তথ্য জানানোর জন্য রাখা হয়েছে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম। এই সমস্ত কাজে ইতিমধ্যেই খরচা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা।
তবে পরিকাঠামোর কিছুটা উন্নতি হলেও হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। বর্তমানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও কর্মীর অভাব হাসপাতালের প্রধান সমস্যা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশেষজ্ঞ-সহ হাসপাতালে মোট চিকিৎসকের পদ ২৪টি। কিন্তু আছেন ১৭ জন। মেডিসিন বিভাগে ৩ জন ও শল্য বিভাগে ২ জন চিকিৎসকের থাকার কথা থাকলেও সব পদই শূন্য। অভাব রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও। কর্মী ও সুইপার মিলিয়ে মোট ২০ জন থাকার কথা। আছেন মাত্র ৮ জন। |
শুধু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাই কম নয়, সমস্যা রয়েছে আরও। হাসপাতালে মাত্র ১৩১টি শয্যা থাকলেও ভর্তি থাকেন প্রায় ৩০০ রোগী। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে হাসপাতালের সুপার সাত্যকি হালদার বলেন, “মেডিসিন ও শল্য বিভাগে রোগী ভর্তি থাকলেও পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসক না থাকার বিষয়টি জেলা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে।” রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা ও জেলার সদ্য প্রাক্তন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকান্ত শীল বলেন, “শুধু হাবরাই নয়। সমস্যা রয়েছে বারাসত জেলা হাসপাতালেও। বিষয়টি সম্পর্কে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর অবহিত রয়েছে। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
হাবরার রুদ্রপুরের বাসিন্দা কাকলি হীরা সম্প্রতি পথ দুর্ঘটনায় ডান কাঁধে ও মাথায় চোট পান। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ সংক্রান্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় গাড়ি ভাড়া করে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে আসেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু এখানেও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় তাঁকে বারাসাত বা আরজিকরে নিয়ে যেতে বলা হয়। বছর ষাটেকের যোগেন দাস রাউতের বাড়ি হাবরার সালকিয়ায়। বুকে ব্যাথা হওয়ায় তাঁকে হাবরা হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু সেই একই কারণে তাঁকে আরজিকরে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয়। হাবরা ছাড়াও গাইঘাটা, গোবরডাঙা, হরিণঘাটা প্রভৃতি এলাকার মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। হাবরার পাশেই রয়েছে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু তার অবস্থা হাবরার চেয়েও শোচনীয়।
স্থানীয় বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “হাবরা হাসপাতালের উন্নয়নে ৪৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তাতে চারপাশে পাঁচিল দেওয়া হবে। তৈরি হবে প্রতীক্ষালয়। কেনা হবে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। ধীরে ধীরে হাসপাতালটিকে উন্নত মানের করার চেষ্টা হচ্ছে।” |