|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
পাড়ার ঐতিহ্য থিমে নেই |
দেবাশিস বসু |
কলকাতার অলিগলি দিয়ে হাঁটলে অবিরত চোখে পড়ে পুরনো বাড়ি, ঠাকুরদালান, মন্দির-মসজিদ। সন্ধিৎসু পথিকের মনে এ সবের নেপথ্যকাহিনি জানার ইচ্ছে জাগা স্বাভাবিক। কিন্তু কলকাতার ইতিহাস মানেই যেন জোব চার্নক, হেস্টিংস, ফিলিপ ফ্রান্সিসদের কেচ্ছা-কাহিনি, বড় জোর মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব বা ‘ব্ল্যাক জমিদার’ গোবিন্দরাম মিত্রের প্রবেশাধিকার থাকলেও গলিঘুঁজির বাসিন্দারা সেখানে অচ্ছুৎ।
অতীতচর্চার দিক থেকে কলকাতার সবচেয়ে ভাগ্যবান পল্লি বাগবাজার। সেই কবে পূর্ণচন্দ্র দে উদ্ভটসাগর এ পাড়ার ইতিহাস লেখেন (‘উদয়ন’, ১৩৪০ এবং দেশ, ১৯৪০), কিরণচন্দ্র দত্ত ‘ভারত’ পত্রিকায় নথিবদ্ধ করেন এখানকার নানা অবস্থাপন্ন পরিবারের ইতিহাস (১৩৪৩-’৪৫)। সেই দুষ্প্রাপ্য প্রবন্ধমালা বই হয়েছে (বাঙলার মুখ, ২০০৯)। বিপুলকায় ধন্য বাগবাজার সংকলনগ্রন্থ দু’টি সংস্করণ নিঃশেষ করে তৃতীয়টির প্রহর গুনছে। একই গোষ্ঠী এখন চালাচ্ছেন শ্যামপুকুরের ইতিবৃত্তের কাজ। অনেক আগেই অবশ্য সুতানুটি পরিষদের শ্যামপুকুর শাখা সুতানুটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও শ্যামপুকুর অঞ্চলের ইতিবৃত্ত প্রকাশ করেছিল। দুঃখ এটাই, যে সুতানুটি পরিষদের তরফে এমন প্রয়াস আর দেখা গেল না। শ্যামবাজার নিয়ে সম্প্রতি একটি ক্ষীণকায় উদ্যোগ দেখা গিয়েছে, কিন্তু তার সবটাই চর্বিতচর্বণ, আঠা-কাঁচির কারিকুরি।
ব্যক্তিগত অতৃপ্তি থেকে দু’টি অঞ্চল নিয়ে লিখেছি। নিমতলা বিষয়ক আলোচনা আবর্তিত হয়েছে শ্মশানঘাট-প্রবাদপুরুষ-পুরাকীর্তি ঘিরে (‘কৌশিকী’, ১৯৯৬)। অন্য দিকে ঝামাপুকুর লেনে সংগৃহীত হয়েছিল প্রতিটি বাড়ির অধিবাসীদের পরিচয় (ব্রাহ্ম বয়েজ স্কুল শতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ, ২০০৩)। ১৯৮৬-তে তল্লাশি চালানো হয়েছিল পটলডাঙার আনাচেকানাচে। তবে সে-উপকরণ আজও ছাপার মুখ দেখেনি। প্রশিক্ষিত শিষ্যমণ্ডলীকে দিয়ে এমন কাজ করিয়েছিলেন নির্মলকুমার বসুও। সেই দলের সদস্য শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় মুসাবিদা করেছিলেন বালিগঞ্জের ইতিহাসের, কিন্তু সে পাণ্ডুলিপিও অপ্রকাশিত। ‘ম্যান ইন ইন্ডিয়া’-য় প্রকাশিত হয়েছিল মীরা গুহ-র বড়বাজার (১৯৬৪) ও অঞ্জনা রায়চৌধুরীর ভবানীপুর (১৯৬৫) সংক্রান্ত নৃতাত্ত্বিক ভাষ্য সে সবও সহজলভ্য নয়। কালীঘাট স্বভাবতই বহু আলোচিত, বাকি দক্ষিণ কলকাতা অবহেলিত। তুলনায় দক্ষিণ শহরতলি গরীয়ান, বেরিয়েছে সুধীন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেহালা জনপদের ইতিহাস (প্রগ্রেসিভ রাইটার্স গিল্ড, ১৩৯৮), সুধাংশু মুখোপাধ্যায়ের বৃহত্তর গড়িয়ার ইতিবৃত্ত (শিশুমেলা, ১৯৯৯)।
শিবনারায়ণ দাস লেন ও গুরুপ্রসাদ চৌধুরী লেন-সহ বিধান সরণির সংলগ্ন অঞ্চলটুকু পরিক্রমা করেছিলেন রাধারমণ মিত্র। কলকাতায় তো আরও কত রাস্তা! পুজোর মরশুম চলছে, আর পুজো মানেই এখন থিম। বাইরের থিম সবাই আমদানি করছেন, কই কেউ তো নিজের পাড়ার ঐতিহ্যকে থিম করার কথা ভাবেন না। বাহির পানে তো অনেক চোখ মেলা হল, এ বারে একটু নিজেদের হৃদয় পানে চাইলে ক্ষতি কি! |
|
|
|
|
|