দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
স্মৃতিতে মগরাহাট
চোলাই-রাজ

স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশে ছোট বাঁশের সাঁকো। সাঁকো পেরিয়ে কিছুটা এগোলেই বসতি। একটি বাড়ির সঙ্গে অন্য বাড়ির তফাৎ বড় জোর ফুট দু’য়েক। বাড়ির মাঝখানের এই সরু অলিগলি চলে গিয়েছে পিছনের বসতির দিকে। পাশেই মেয়েদের প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। অলিগলি দিয়ে গেলে হঠাৎই চোখে পড়বে ছোট উঠোন। সেখানে সকাল থেকেই বসে লোকজনের আড্ডা । সামনে কাচ বা প্লাস্টিকের গ্লাসে পানীয়। চাইলে প্লাস্টিকের পাউচ। এটি চোলাইয়ের ঠেকের ছবি।
অভিযোগ উঠেছে, এ ভাবেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার আক্রা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় চলছে চোলাইয়ের ব্যবসা। শুধু চোলাই নয়, অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে স্টেশনের বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকায় বসে সাট্টা এবং গাঁজার ব্যবসা। বছর দুই আগে এই জেলারই মগরাহাটে বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে ১৭২ জনের মৃত্যু হয়। অসুস্থ হয়ে পড়েন ৩৬৭ জন। ঘটনার পরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চোলাইয়ের বিরুদ্ধে প্রশাসন অভিযানে নামে। ভেঙে দেওয়া হয় চোলাইয়ের ঘাঁটি। গ্রেফতার করা হয় চোলাইয়ের ব্যবসায় অভিযুক্ত খোঁড়া বাদশা, তাঁর স্ত্রী-সহ কয়েক জনকে। তার পরেও আক্রা স্টেশন সংলগ্ন এলাকার চোলাই ব্যবসার ছবিটি বদলায়নি।

অলঙ্করণ: অনুপ রায়
কী ভাবে চলে এই ব্যবসা?
স্থানীয় সূত্রে খবর, আগে ট্রেনে করে চোলাই আসত। এখন গভীর রাত বা ভোরের দিকে আমতলা এলাকা থেকে চোলাই ভর্তি জার নিয়ে কয়েকটি গাড়ি আসে। সেখানে জার থেকে বোতলে কিংবা প্লাস্টিকের পাউচে চোলাই ভরা হয়। আগে চোলাই আসত ক্যানিং, ভাঙড়, লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশকে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তা ছাড়া, পুলিশ অভিযান চালাতে আসার আগেই এলাকায় খবর পৌঁছে যায়। ফলে পুলিশ এসেও কিছুই পায় না। অভিযোগ উঠেছে, এই ব্যবসায় এলাকার কিছু মানুষকে সাহায্য করেন স্থানীয় এবং জেলার অন্যান্য জায়গা থেকে আসা যুবকদের একাংশ। এরই পাশাপাশি, সাট্টা বা গাঁজার ব্যবসাও রমরমিয়ে চলছে বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ। যদিও মহেশতলা থানা সূত্রে বলা হয়, ওখানে গাঁজা বা সাট্টার টুকটাক ব্যবসা চললেও, চোলাইয়ের কোনও ব্যবসা চলে না। প্রতি দিনই এলাকায় নজরদারি চলে।
এই এলাকা মহেশতলা বিধানসভার অন্তর্গত। বিধায়ক তৃণমূলের কস্তুরী দাস। চোলাইয়ের ব্যবসার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “আক্রা স্টেশন সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় চোলাইয়ের ব্যবসার খবর শুনেছি। পুলিশকে জানিয়েছি। আবারও জানাব।” দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “এখনও পর্যন্ত ওই এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে বলে কোনও খবর নেই। তবে এই সব অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখব।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.