দক্ষিণ কলকাতা
অবশেষে অধিগ্রহণ
হবে উদ্যান
তিন বছর আগেই কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিল প্রায় ১৭ কাঠা জমি অধিগ্রহণের জন্য। কিন্তু সেই থেকে কসবার গিরীন্দ্রশেখর বসু রোডে এই জমিটি ফাঁকাই পড়েছিল। অভিযোগ ওঠে, এই ফাঁকা সরকারি জমিটি জবরদখল হয়ে যাচ্ছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর যোগাযাগ করেন পুরসভার উদ্যান বিভাগের সঙ্গে। এর পরেই পুরকর্তৃপক্ষ এই জমিটি অধিগ্রহণ করেন। এখানে পুরসভা একটি পার্ক নির্মাণ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “কেএমডিএ পুরসভাকে যে জমি অধিগ্রহণ করে পার্ক নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছিল সেই জমিটির কাগজপত্র এবং নকশা দেখে তবেই অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এখানে একটি পার্ক নির্মাণ করা হবে। পুরসভায় খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সরকারি এই জমিটিতে বর্তমানে কোনও ব্যক্তি বা কোনও সংস্থার মালিকানা নেই। আমি নিজেও এলাকাটি ঘুরে দেখেছি। কেউ এই জমির মালিকানা দাবিও করেননি। সরকার বাদে কেউ যদি এই জমির মালিকানা দাবিও করে তবে তা আইনত বাতিল হয়ে যাবে।”
কেএমডিএ-র চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “এই জমির রেকর্ড অনুযায়ী জমিটি সরকারি। কেএমডিএ-র কাছ থেকে এই জমিটি কেউ কেনেনি। জমিটি ফাঁকাই পড়ে ছিল। এই জমি কেএমডিএ-র অধীনস্থ কেআইটি-র। বর্তমানে পার্ক তৈরির জন্য কলকাতা পুরসভা আমাদের কাছ থেকে এই জমি অধিগ্রহণ করেছে।”
পুরসভার ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে কসবার অনেক জমিই কেএমডিএ-র অধীনস্থ কলকাতা উন্নয়ন সংস্থার (কেআইটি) অধীনে রয়েছে। গিরীন্দ্রশেখর বসু রোডের এই জমিটি এলাকার মানুষ বহু বছর ধরেই পার্ক হিসেবে ব্যবহার করছেন। বাসিন্দাদের দাবি, এই ফাঁকা জমিটিকে পার্ক হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। এই ফাঁকা জায়গায় কোনও ভাবেই যাতে নির্মাণ করতে না দেওয়া হয় তার আর্জি জানিয়ে তাঁরা স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর দীপু দাসকে জানান।
২০০৮-এর নভেম্বরে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানান, কসবা অঞ্চলে এই জমিটি সমেত মোট ন’টি বিভিন্ন মাপের জমি ‘লিজ’ নেওয়ার জন্য নাগরিকেরা নিলামের জন্য কেএমডিএ-র কাছে আবেদন করতে পারবেন।
এর পরেই, দীপুদেবী সরাসরি কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে জানান, এলাকার বাসিন্দারা নির্দিষ্ট এই ১৭ কাঠা জমিটিকে পার্ক হিসেবে ব্যবহার করতে চান। সেই কারণে তাঁদের দাবি মেনে এই ফাঁকা জমিটিকে পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হোক। দীপুদেবী বলেন, “আমি কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে জানাই তাঁরা যদি এখানে পার্ক তৈরি করেন তা হলে তাঁরা নিজেরাই এখানে তা করতে পারেন। তাঁরা যদি একান্তই এই প্রকল্প এখানে না করতে পারেন সে ক্ষেত্রে জায়গাটি কলকাতা পুরসভাকে নির্দেশ দিলে তারাই সেখানে পার্ক তৈরি করবে। তৎকালীন পুরবোর্ডকেও এই জমিতে পার্ক নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করি। সম্প্রতি বেশ কিছু লোক এই ফাঁকা জায়গা জবরদখল করার চেষ্টা করছিল। দলমত নির্বিশেষে এলাকার অনেক মানুষই এই ঘটনার বিরোধিতা করেন।”

পুরসভার উদ্যান বিভাগের এক আধিকারিক জানান, পুরকর্তৃপক্ষ এই জমিটি ফের পরিদর্শন করেন। কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়। তাঁরা জানান, ৭০ নম্বর গিরীন্দ্রশেখর বসু রোডের ১৬.১৫ কাঠা জমি সরকারি। এই জমির মোট আয়তন ১০৮০ বর্গমিটার। জমিটি কেআইটি-র। কেএমডিএ-র অধীন কেআইটি। সেই সময়ে কেএমডিএ জানায়, পুরসভা এই জমিতে পার্ক নির্মাণ করতে পারবে। নিয়মানুযায়ী, সরকারি জমি হলেও এই প্রকল্প নির্মাণের আগে পুরসভাকে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে অনুমতি নিতে হবে।
২০০৮-এ পুরসভার তৎকালীন কমিশনার এই জমিটি পুরসভার অধিগ্রহণের ব্যাপারে কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে আর্জি জানান। তার পরেই, ২০০৯-এর জুলাইয়ে রাজ্য নগরোন্নয়ন দফতর পুরসভাকে কোনও রকম মূল্য ছাড়াই পার্ক নির্মাণ করার জন্য এই জমি শর্তসাপেক্ষে অধিগ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়। এই ফাঁকা জায়গায় পুরসভা একটি পার্ক নির্মাণ করতে পারবে। কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানান, ১৯৭৬ সালে আরবান ল্যান্ড শিলিং অ্যাক্টে রাজ্য সরকার এই জমিটি অধিগ্রহণ করে।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.