পূর্ব কলকাতা
এ ভাবেই বাস
জীবন-সংগ্রাম
পুর-উদ্যোগে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। তার জন্য গার্ড ওয়ালও তৈরি হয়েছে। কিন্তু দু’দিকের গার্ড ওয়ালের মাঝে মাটি ফেলা হয়নি। ফলে ফুট খানেক চওড়া গার্ড ওয়াল আর কিছু বাঁশের সাঁকোই যাতায়াতের মাধ্যম। কয়েক ফুট উঁচু ঝোপঝাড়ের মধ্য দিয়ে বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য কয়েকটি ইট পেতে রাখা হয়েছে। পরিকল্পিত বিদ্যুদয়নের কাজও শেষ হয়নি।
এমনই অবস্থা রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংগ্রামপুরে। অসমাপ্ত গার্ড ওয়ালের জন্য বৃষ্টি হলেই স্থানীয় ৬০-৭০টি পরিবারের জীবনযাত্রা দুঃসহ হয়ে ওঠে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, সমাধানের কোনও আশু সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সংগ্রামপুরে ১৫-২০ বছর আগে বসবাস শুরু হয়। জমিগুলি প্রথম থেকেই নিচু ছিল। তবে আগে নিচু মাঠ দিয়ে জল বেরিয়ে যেত। কিন্তু জনবসতি বাড়ার কারণে কয়েক বছর ধরে নিকাশির মুখগুলি আটকে গিয়েছে। ফলে সারা বছরই মাঠে জল জমে থাকে। এর জেরে গোটা এলাকা জুড়ে বড় বড় ঘাস-আগাছা গজিয়ে উঠেছে। বিষাক্ত সাপ ও মশা-মাছির উপদ্রবের মধ্যেই বাস করতে হচ্ছে ২৫০-৩০০ বাসিন্দাকে। সারা বছরই যাতায়াতের জন্য দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
সংগ্রামপুরে ঢোকার জন্য রয়েছে পাঁচটি রাস্তা। তার মধ্যে একটি প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ, বাকিগুলি ২০০-২৫০ মিটার দীর্ঘ। কমবেশি ১২ ফুট চওড়া ওই রাস্তাগুলির দু’দিকে পুর-উদ্যোগে এক ফুট চওড়া পাকা গার্ড ওয়াল এবং এক দিকে পাকা নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু গার্ড ওয়ালের মাঝে মাটি ভরাট না করায় বর্ষার সময়ে কয়েক ফুট জল জমে নদীর আকার নিয়েছিল। নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় গার্ড ওয়ালের পাশের পাকা নর্দমা থেকে জল বেরোতে পারে না। রাস্তা আর নর্দমার জমা জল মশা-মাছির আঁতুর হয়ে যায়। একটু ভিতর দিকের বাসিন্দাদের আরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দরকারের সময় অসুস্থ মানুষকে বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে জেরবার হতে হয়। সন্ধ্যার পরে বয়স্কদের পক্ষে যাতায়াত করা অত্যন্ত ঝুঁকির হয়ে ওঠে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে যে কোনও মুহূর্তে সরু গার্ড ওয়াল বা সাঁকো থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এলাকাবাসীদের আরও অভিযোগ, দীর্ঘ দিন এলাকার উন্নয়নে নজর দেওয়া হয়নি। বছরখানেক আগে রাস্তাগুলির গার্ড ওয়াল ও নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় দিন-দিন দুর্ভোগ বাড়ছে। এক বাসিন্দার কথায়: “নিচু মাঠ হলেও ১৫-২০ বছর আগে এখানে জল জমত না। এখন চতুর্দিকে বাড়িঘর হয়ে যাওয়ায় জল বেরনোর পথ আটকে গিয়েছে। ফলে নিকাশি ব্যবস্থা বলতে কিছুই নেই। ১২ মাসই জল জমে ঝোপঝাড় জন্মায়। রাস্তা নেই। বাড়ির চারপাশে বনবাদাড়। মশা-মাছি, কীটপতঙ্গের উপদ্রবে আমাদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। পরিকল্পিত উন্নয়নের আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে পুরসভার পক্ষ থেকে। কিন্তু কবে কাজ শুরু হবে তার কোনও ঠিক নেই। বহু টাকা খরচ করে গার্ড ওয়াল তৈরি করা হয়েছে। মাটি ফেলে গার্ড ওয়ালের মাঝের রাস্তা উঁচু করা হলে দুর্ভোগ অনেকটা কমত। কিন্তু সে কাজ আজও হল না।”
অবশ্য পুর-চেয়ারম্যান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই ওয়ার্ডে পরিকল্পিত রাস্তার কাজ ঢালাই করে সম্পূর্ণ করা হবে। পানীয় জলের সমস্যা ছিল। সেটা মিটেছে। বর্ষার আগে রাস্তাঘাট ও নিকাশির কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। বর্ষার জন্য কাজ সাময়িক থেমে ছিল। শীঘ্রই বেসিক সার্ভিসেস ফর আর্বান পুওর (বিএসইউপি) প্রকল্পের অধীনে ধারাবাহিক ভাবে কাজ হবে। কাজ যাতে কোনও ভাবে না থামে, সে দিকেও নজর রাখা হবে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.