পূর্ব কলকাতা
ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট
অবশেষে উদ্যোগ
শা নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামো সংস্কারে উদ্যোগী হলেন বিধাননগর পুরকর্তৃপক্ষ। রাজ্য সরকারের কাছে ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট তৈরির প্রস্তাব দিতে চলেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। পুরসভার পরিকল্পনায় প্রাথমিক ভাবে সম্মতও হয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
২০০৫-এ বিধাননগরে ব্যাপক হারে ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়েছিল। হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। পরিকাঠামো রয়ে গিয়েছে তিমিরেই। এ বছর বর্ষায় বিধাননগরে ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে সেই তেল ছড়ানো, ধোঁয়া দেওয়া, জঙ্গল সাফ করার মতো সাবেক পদ্ধতিই ব্যবহার করছে বিধাননগর পুরসভা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এতে বিশেষ কাজ হচ্ছে না। উল্টো দিকে, জমা জল নিয়মিত সাফ না করার জন্য বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেছে পুরসভা।
বিধাননগর ও পাঁচ নম্বর সেক্টর এলাকায় নির্মীয়মাণ বাড়ির সংখ্যা অনেক। এ সব জায়গায় জমে থাকা জলে মশা জন্মায়। তা ছাড়া কেষ্টপুর খাল ও ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের বদ্ধ জল, জঙ্গল মশার প্রকোপ বাড়ার কারণ। শুধু বাসিন্দারাই নয়, স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশেরও এমনই মত। ফলে এ বছরের জুন মাসের শেষ থেকেই মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডেঙ্গির সংক্রমণ যে বাড়ছে প্রথম দিকে তা পুরপ্রশাসন স্বীকার করতে চায়নি। তাদের দাবি, কয়েক হাজার বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও পুরপ্রশাসনের দাবি ছিল, শতাংশের হিসেবে লোকসংখ্যার তুলনায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কম। তা ছাড়া, অনেক বেসরকারি হাসপাতালে যে ভাবে ডেঙ্গি রোগী চিহ্নিত করা হয়েছে তা নিয়েও পুরসভার আপত্তি রয়েছে।
অবশেষে ‘ঘরে-বাইরের’ চাপে পুরসভা অভিযান শুরু করে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা পুরপ্রশাসনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। নামানো হয় র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। দু’শোর বেশি প্রশিক্ষণরত নার্স বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি, রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা সম্পর্কেও সচেতনতার কাজ চলে। তিনশো বাসিন্দাকে ডেঙ্গি রোগী বলে চিহ্নিত করেছে পুরসভা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
বিরোধী দল সিপিএম, এমনকী, শাসক দলের অনেকেই মশা নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামোর সংস্কারের দাবি তোলেন। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, “মশার চরিত্র বদল হচ্ছে। এই অবস্থায় বর্তমান পরিকাঠামো দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট ও পতঙ্গ বিশারদ রাখা দরকার।” পুরপ্রশাসনের এমন পরিকল্পনায় সায় দিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “বিধাননগর পুরসভাই শুধু নয়, আমরা চাই সব পুরসভাতেই এই ব্যবস্থা তৈরি হোক। পুরসভাগুলি এমন প্রস্তাব পাঠালে আমরা বিবেচনা করব।” যদিও ভেক্টর কন্ট্রোল ইউনিট করলেই মশা কমবে বলে আশাবাদী নন বাসিন্দাদের একাংশ।
বাসিন্দাদের সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বললেন, “পুরসভার পরিকল্পনা কার্যকরী হলে ভাল হবে। প্রশাসন ডেঙ্গি রোগ সংক্রমণের তথ্য আরও বেশি করে জানালে বাসিন্দারা আরও সচেতন হতে পারতেন। শুধু প্রতিশ্রুতি না দিয়ে পরের বছরের জন্য এখনই ব্যবস্থা নিক প্রশাসন।”
বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আমরা কিছু দিন ক্ষমতায় এসেছি। এত বছর বামেরা পরিকাঠামোর উন্নতি করেনি। আমরা দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা নিতে চলেছি। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই আমাদের পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে। পরের বছরের জন্য আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.