উৎসব চলছে
রসনার উদযাপন
ই যাঃ! পুজো চলে গেল।
এক বছর ধরে তো এই ক’টা দিনের জন্যই হাপিত্যেশ করে বসে থাকা। তাই হুল্লোড়ের চারটে দিন ফুরোলেই মনটা বেজায় খারাপ হয়ে যায়। উৎসবের শহরে যদিও উদযাপনের উপকরণ কিছু কম নেই। আর উৎসবের এই মরসুমটাকে তো দুর্গাপুজোর পরেও টেনে লম্বা করা যায় লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো পার করে ভাইফোঁটা পর্যন্ত। তাই হইচই চলুক, সঙ্গে আড্ডাও। আর পেটপুজো তো ‘মাস্ট’। আর এ সবে যাতে এক দিনের জন্যও ভাটা না পড়ে, তাই শহর জুড়ে এই সাজ-সাজ ব্যাপারটা অন্তত মাসখানেক একই রকম রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ।
যেমন ‘পিয়ারলেস ইন’-এর আহেলি। বাঙালি খাবারে আমবাঙালির মন ভোলাতে তারা এ বারেও প্রস্তুত। উৎসবের মরসুমকে ভাল ভাবে সেলিব্রেট করতে গত ১৫ অক্টোবর থেকে টানা এক মাস তাদের ভাঁড়ারে ‘স্পেশাল মেনু’। তালিকায় নানা নিরামিষ পদের সঙ্গেই চিংড়ি-ইলিশের ছড়াছড়ি। ঘটি-বাঙাল বিবাদ ভুলে ঝাঁপ দেওয়া যায় চিংড়ি মোচার চপ, চিংড়ি আর বোনলেস ইলিশের পোলাও, পাতায় মোড়া চিংড়ি, পুঁইশাক দিয়ে চিংড়ি, গরবিনী গলদা কালিয়া, আমতেল ইলিশ, বরিশালি ইলিশ, ইলিশ পোস্তের সমুদ্রে। সঙ্গ দিতে থাকবে ভেটকি গন্ধরাজ, লাউ পাতায় কৈ মোড়া, তেল কৈ-এর হইচই অথবা গন্ধরাজ মাংস। নিরামিষ রান্নাও আছে হরেক রকম। যেমন, বড়ি দিয়ে শাকভাজা, নারকেল মাখা ছাঁচি কুমড়ো, মুগ আর আদা দিয়ে মুগ মোহন আর নারকেলি সর্ষে পটল।
স্বাদে একটু বদল চাই? তৈরি পূর্ণদাস রোডের ‘দ্য রেস্তোরাঁ অন দ্য ফার্স্ট ফ্লোর’। সেখানে প্যান টস্ড বেবি কর্ন দিয়ে কুরকুরে হরা মকাই, আচারি মশলায় জারানো চিকেন ড্রামস্টিক্স দিয়ে মুর্গ টেংরি আর পুদিনা-আনারদানায় মাখানো হরিয়ালি মাহি টিক্কা সহযোগে যদি শুরু করা যায় খানা, তা তো শেষ হতেই পারে তাওয়ায় তৈরি ভুনি মাচ্চি, প্রন মুফাজল আর মাংস বানজারা দিয়ে।
সল্টলেকের ‘দ্য স্ট্যাডেল’ আবার তাদের ‘ফার্স্ট ইনিংস’, ‘রসম’ ও ‘হেকা’ রেস্তোরাঁয় নিয়ে এসেছে দক্ষিণ ভারতীয় নিরামিষ থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি ডেলিকেসির সম্ভার। মন যদি চায় পুরনো স্বাদগুলোকেই একটু উল্টেপাল্টে চাখতে, জিভের সামনে হাজির হবে গরমগরম ঝিঙা আফগানি কাবাব, হায়দরাবাদি গোস্ত, মুর্গ বাদামি কাবাব অথবা মান্ডারিন ফিশ। মুর্গ বাদামি কাবাবে মুরগির টুকরোগুলোকে জারানো হবে হোয়াইট সস আর বাদামের ফ্লেভার দিয়ে। আসল আফগানি খানা ঝিঙা আফগানি কাবাবে আবার দই, কাজু আর কিছু বাছাই করা মশলা মিশিয়ে বানানো হবে চিংড়ির কাবাব। ‘দ্য স্ট্যাডেল’-এরই ‘বেকার বয়’ রেস্তোরাঁয় মিষ্টি স্বাদকোরকগুলোকে আর একটু উস্কে দিতে থাকবে চকোলেট এক্সেস, চকোলেট ডিভাইন, অরেঞ্জ গাতো আর চকোলেট রোমান্স পুডিং।
ভাইফোঁটা আর হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা দিন। জেন ওয়াই-এর ভাইদের জন্য রেস্তোরাঁয় রেস্তোরাঁয় বিশেষ মেনুর আয়োজন তো এখন আর নতুন কিছু নয়। আহেলি রেস্তোরাঁ যেমন এ বারেও নিয়ে আসছে ভাইফোঁটার থালি। সাবেক বাঙালি খাবার, বছরে মাত্র দু-একটা দিন ধুতি-পাঞ্জাবি পরা ভাইদের জন্য। সেই তালিকায় লুচি, বেগুন ভাজা, তোপসে মাছ ভাজার সঙ্গে থাকবে বাসমতি চালের ভাত, শুক্তো, বড়ি দিয়ে লাল শাক, পটলের দোর্মা, মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল, চিংড়ির মালাইকারি, ভেটকি ফুলকপির ডালনা, কষা মাংস, মাংসের পোলাও, আমসত্ত্ব খেজুরের চাটনি, কমলা ভোগ আর আর দই-কলস।
পুজো-পুজো গন্ধটা কি এত সহজে যাওয়ার? বিশেষ করে বাঙালির বারোটা মাস যখন শুধুই উদ্যাপনের ফিকির খোঁজে! তাই উৎসব চলবে বছরভর, সঙ্গে তো আছেই এ রকম সব ভুরিভোজের রকমফের!




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.