মর্গ্যানের চওড়া কপাল বনাম কোলাসোর লিগ-ভাগ্যের লড়াই
ভারতে আপনার দেখা সেরা বিদেশি কোচ কে? এক সেকেন্ডও সময় নিলেন না ডেম্পো কোচ। “ট্রেভর মর্গ্যান। এক টানা তিন বছর সফল কোচিং করাচ্ছেন। একই টিম ধরে রেখেছেন।”
আর্মান্দো কোলাসো আপনাকে সেরা বিদেশি কোচ বেছেছেন, শুনেছেন? “নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। যে লোকটা পাঁচবার আই লিগ জিতেছে, সে প্রশংসা করলে তো ভাল লাগবেই। পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে ও কী রকম কোচ,” কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টা অকপট লাল-হলুদের ব্রিটিশ কোচ।
একে অন্যের প্রশংসা করলে কি কোচেদের টিআরপি বাড়ে? কিছুদিন হল ময়দানে সুভাষ ভৌমিক আর সুব্রত ভট্টাচার্য এটা শুরু করেছেন! ভারতীয় ফুটবলের ‘এল ক্লাসিকো’র চব্বিশ ঘণ্টা আগে দুই কোচের একে অন্যকে প্রশংসা করার স্টাইল দেখে কিন্তু মনে হল না, এর মধ্যে কোনও পেশাদারিত্ব লুকিয়ে আছে। বা কোনও অঙ্ক। বরং শোনা যাচ্ছে, কোঙ্কনি ভাষায় ফুটবল নিয়ে আর্মান্দো যে বই লিখছেন, তাতে মর্গ্যানের জন্য কিছু লাইন বরাদ্দ থাকবে।
লক্ষ্য স্থির। অনুশীলনের পর মাথায় বরফ চাপিয়ে চিডির ‘কুল-ডাউন’। শুক্রবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে।
আসলে আর্মান্দো এবং মর্গ্যান এমন উচ্চতায় নিজেদের নিয়ে গিয়েছেন যে, পারস্পারিক একটা শ্রদ্ধামিশ্রিত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। হবে না-ই বা কেন? দু’জনের পারফরম্যান্সই চমকে দেওয়ার মতো। এখনও আই লিগ না জিতলেও ম্যাচ জেতার দৌড়ে কিন্তু আর্মান্দোকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন মর্গ্যান। বারো বছর গোয়ার অফিস ক্লাবের কোচ হয়ে ২২৮ ম্যাচে আর্মান্দো জিতেছেন ১১৯টি। জয়ের গড় ৫২.১৯। আর মর্গ্যানের তিন মরসুমের কোচিং জীবনে ১৩০ ম্যাচ খেলেছে ইস্টবেঙ্গল। জয় ৮০ টি। সাফল্যের গড় ৬১. ৫৪। আরও আছে। গোয়ান বনাম ব্রিটিশ যুদ্ধেও এগিয়ে মর্গ্যান। ৬-১। কিন্তু আবার ট্রফির দিকে তাকান! সেখানে কোলাসোর জয়জয়কার। পাঁচবার আই লিগ ছাড়াও ফেড কাপ, ডুরান্ড কাপ। এ দেশের ক্লাব ফুটবলের এক মাত্র কোচ যিনি এএফসি কাপে শেষ চারে তুলেছিলেন নিজের টিম ডেম্পোকে।
নেভিল কার্ডাস ক্রিকেটের স্কোরবোর্ডকে ‘গাধা’ বলেছিলেন। ফুটবল মাঠে জয়-পরাজয়ের হিসেবের সঙ্গে ট্রফি জয়ের অমিল দেখলে কি একই কথা বলতেন? হেসে ফেলেন আর্মান্দো। “রেকর্ড নিয়ে আমি কখনও ভাবি না। ডেম্পোর ফুটবলাররাও ভাবে না। আমার টিম সব সময় খেলে চাপমুক্ত হয়ে।” যুবভারতী থেকে শুক্রবার সকালে ইস্টবেঙ্গল মাঠে ঢুকেও শোনা গেল একই রকম মন্তব্য। বক্তাই যা আলাদা মর্গ্যান। রেকর্ড বলছে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে আপনার টিমই এগিয়ে? জবাব এল, “রেকর্ড নিয়ে ভাবার কোনও মানে হয় না। কাল নতুন ম্যাচ। এর বাইরে এই খেলার আলাদা কোনও গুরুত্ব নেই আমার কাছে।”
রিকেটস-সুয়েকা। লাল-হলুদ রক্ষণে যাঁদের শ্যেন দৃষ্টি।
আই লিগের এক বনাম দু’নম্বর টিমের ম্যাচ। জিতলে ইস্টবেঙ্গল লিগ টেবিলের শীর্ষে চলে যাবে। মর্গ্যানের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকবে। আর ডেম্পো জিতলে একসঙ্গে দু’টো লক্ষ্যপূরণ হবে গাউলি-ক্লাইম্যাক্সদের। শিলিগুড়ি ফেড কাপের ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি লিগ টেবিলেও অনেকখানি এগিয়ে যাবে ডেম্পো। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটির আগে কী শান্ত ‘গোয়ার বার্সেলোনা’ আর ‘বাংলার ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের’ শিবির! নিখুঁত স্ট্র্যাটেজি আর ট্যাকটিক্সের জাল বুনতে দুই কোচই এমন বুঁদ, অন্য কিছু ঢোকার সুযোগ-ই নেই সেখানে। আসলে ম্যাচটা তো হবে তাঁদের হাতে থাকা অদৃশ্য রিমোটেই।
কিন্তু সমস্যা কি কিছুই নেই দুই শিবিরে? অভিজিৎ মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে প্রবল খচখচানি। পারবেন গুরপ্রীত সিংহ গোল লাইনে দাঁড়িয়ে অভিজিতের মতো অতিমানব হয়ে উঠতে? মর্গ্যান নিজেও মনে হল বেশ সংশয়ে। সম্ভবত সে জন্যই অনুশীলন শেষ হওয়ার পর দলের চার ডিফেন্ডার নওবা, ওপারা, অর্ণব, সৌমিককে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়ে রইলেন। কিপার ছাড়া লাল-হলুদে পুণে ম্যাচের টিমই থাকছে। সামনে চিডির সঙ্গে মননদীপ। মাঝমাঠে খাবরা, পেন, মেহতাব, ইসফাক। রিজার্ভ বেঞ্চে সঞ্জু প্রধান আর লালরিন্দিকা। ডেম্পোতে আবার সমস্যা আর্সেনাল থেকে আসা রোহন রিকেটসকে নিয়ে। ‘দ্য হোয়াইটস’-এর জার্সি গায়ে আট ম্যাচ খেলা রোহন এর মধ্যেই কামান দেগেছেন কোচের বিরুদ্ধে। ডেম্পোর ইতিহাসে যা বিরলতম ঘটনা। তাতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ গোয়ার টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশেষ টিমমিটিংয়ে কোচের কাছে ক্ষমা চেয়ে আপাতত রেহাই মিললেও, রোহনকে নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে ডেম্পো শিবিরে। মাঝমাঠে ক্লিফোর্ড, অ্যান্টনি, পিটারের সঙ্গে ক্লাইম্যাক্স না রোহন তা রাত পর্যন্ত ঠিক করেননি আর্মান্দো। তবে আক্রমণে কোকোর সঙ্গে সুয়েকা খেলবেন। চিডির জন্য মার্কার রাখছে ডেম্পো। তা নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার। বলে দিলেন, “নব্বই মিনিট কাউকে আটকানো যায় না। আমি না থাকলে অন্য কেউ গোল করবে। জেতাটাই আসল।”
সেয়ানে সেয়ানে
ইস্টবেঙ্গল ডেম্পো
সুবিধা
১) শক্তিশালী মাঝমাঠ।
২) দর্শক সমর্থন।
৩) টানা ২৬ ম্যাচে অপরাজিত।
১) দীর্ঘদিন এক টিম।
২) সুয়েকার ভাল ফর্ম।
৩) দলে কোনও চোট-আঘাত নেই।
অসুবিধা
এক্স ফ্যাক্টর
১) দুর্দান্ত রিজার্ভ বেঞ্চ।
২) সঞ্জু প্রধান, লালরিন্ডিকার মতো ফুটবলার।
১) লিগে ভাল খেলে।
২) রোমিওর মতো প্রতিভাবান ফুটবলার রিজার্ভ বেঞ্চে।
মর্গ্যান
“এই ম্যাচ ড্র হলে, সেটা হবে
সবচেয়ে খারাপ রেজাল্ট।”
কোলাসো
“ফেড কাপের বদলা নয়।
এটা একেবারে অন্য ম্যাচ।”
ডেম্পোতে আট বছর ঘর করে আসা লাল-হলুদ কিপার অভিজিৎ হাতে বরফ ঘষতে ঘষতে বলছিলেন, “ডেম্পো নক আউট টুর্নামেন্টের টিম নয়। লিগের টিম। ফেড কাপের সঙ্গে আই লিগকে গুলিয়ে ফেললে কিন্তু ভুল হবে।” আর্মান্দোর টিমকে চার বার আই লিগ জেতানো বঙ্গসন্তান ভুল বলেননি ঠিক। কিন্তু এই ম্যাচে মর্গ্যান যে চওড়া কপাল নিয়ে নামেন! সেটাও তো ঠিক।

শনিবারে
আই লিগ
ইস্টবেঙ্গল: ডেম্পো (যুবভারতী ২-০০)
সালগাওকর: মুম্বই এফসি (পুণে)।
ছবি: উৎপল সরকার




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.