অবশেষে ক্রিকেটসংসারে স্বস্তি
রাহানেকে সচিন বলেন, এ বার আমি পেটাব
য়াংখেড়ের পাশেই চার্চ গেট স্টেশন। যেখানে প্রতিদিনের মতো মিনিটে-মিনিটে ট্রেন আসছে-যাচ্ছে অনবরত। মুম্বইয়ের জীবনরেখা তো এই রেলই। সেখানে শুক্রবার না কোনও গোলমাল, না কোনও সিগন্যাল-বিভ্রাট। কিন্তু ওয়াংখেড়ের ভিতর যে এত বড় রেল-দুর্ঘটনা ঘটল, তা কয়েকশো ক্রিকেটপ্রেমী ছাড়া কেউ টের পেলেন না। ভরদুপুরে এক ঝড় এসে রীতিমতো তছনছ করে দিল রেলকে। সেই ঝড় স্যান্ডিও না, নিলমও নয়। সেই ঝড়ের নাম সচিন তেন্ডুলকর।
মাঠের সবাইকে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রেখে মাঠে পা রাখলেন সচিন। বিধ্বংসী ঝড় বোধহয় এ ভাবেই আসে। শোনা গিয়েছিল চার নম্বরে নামতে পারেন তিনি। কিন্তু যখন সেই জায়গায় রোহিত শর্মা নেমে এলেন ড্রেসিংরুমের সিঁড়ি দিয়ে, তখন অবাকই সবাই। ওয়াংখেড়ের প্রেসবক্সে গুঞ্জন, ফের কোনও ‘স্টোরি’ তৈরি হচ্ছে না তো মাস্টার ব্লাস্টারকে নিয়ে? আগের দিন পেটের গণ্ডগোলের জন্য মুম্বইয়ের প্র্যাক্টিসে থাকতে পারেননি। এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটের সাংবাদিক আবার সকালে জানালেন, আগের রাত পর্যন্তও তিনি নাকি তেমন কিছু খেতেই পারেননি। কিন্তু যখন সমস্ত জল্পনা নস্যাৎ করে দিয়ে সচিন ব্যাট হাতে উইকেটে এসে দাঁড়ালেন, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সারা দেশের ক্রিকেটমহল। চার বছর পরে ঘরোয়া ম্যাচে সচিনের আবির্ভাবের জন্যই তো এমন আপাত গুরুত্বহীন রঞ্জি ম্যাচেরও টিআরপি রীতিমতো ঊর্ধ্বমুখী।
ওয়াংখেড়েতে সেঞ্চুরির পর সচিন। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই
সচিনের জন্য তখন ক্রিজে অপেক্ষমান মুম্বইয়ের উঠতি ব্যাাটসম্যান অজিঙ্ক রাহানে। সচিনের সান্নিধ্য পেয়ে ২৪ বছরের টগবগে তরুণ যেন আরও চাঙ্গা হয়ে উঠলেন। দিনের শেষে ১০৫ রানে অপরাজিত অবস্থায় ফিরে বলছিলেন, “সেটাই তো স্বাভাবিক। সচিন তেন্ডুলকরের মতো এক জন কিংবদন্তির সঙ্গে ব্যাট করতে পারছি ভেবেই তো একটা আলাদা শিহরণ বয়ে যায় শিরদাঁড়ায়। সচিন স্যর আমাকে বললেন, নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলে যেতে।’’
কিন্তু আজ রাহানের সেঞ্চুরি নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। বড় রানের সন্ধানে মরিয়া সচিন (যে কারণে রঞ্জিতেও ফেরা) যে প্রথম রাউন্ডেই ১৩৭ (১৩৬ বল, ২১X৪, ৩X৬)। ১৩৭ রানের মধ্যে ১০২ রানই বাউন্ডারির বাইরে বল পাঠিয়ে। কিন্তু প্রথম বার বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতেই তাঁর লেগে গেল ৩১ বল। প্রচন্ড সতর্ক সচিন। খাদের উপর তৈরি সরু বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে চলার মতোই। আবার তিনিই চায়ের ঠিক আগে স্পিনার শিবকান্ত শুক্লকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে সোজা গ্যালারিতে পাঠালেন।
“চা-বিরতিতেই ঠিক হল, আমি এ বার ধরে খেলব আর সচিন স্যর পেটাবেন”, খেলা শেষে বলছিলেন রাহানে। এবং অবিকল সেটাই হল। চায়ের পর প্রাক্তন ভারতীয় পেসার সঞ্জয় বাঙ্গারের বল কভার ও পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে পঞ্চাশ পূর্ণ করলেন। সচিন-ঝড়ের সেই শুরু। ওই সময় মাস্টার ব্লাস্টারের রুদ্রমূর্তি যিনি সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছেন এ দিন, সেই রাহানে বললেন, “ওই সময় এত প্রত্যয়ী, এত মরিয়া লাগছিল ওঁকে, কী বলব! চেহারাটাই পাল্টে গিয়েছিল যেন।” বাঁহাতি স্পিনার আশিস যাদবের একই ওভারে একটা চার ও দুটো ছয়-সহ ২১ রান তুলে পৌঁছে গেলেন ৯৫-এ। রাহানে তখন ৯৪। পরের ওভারেই মুরলীর বলে ফ্লিক করে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে চার এবং স্কোয়ার লেগে ঠেলে এক রান নিয়ে শতকের দরজা খুলে ফেললেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একমাত্র সেঞ্চুরির সেঞ্চুরিয়ন। দুঃখের বিষয়, ঘরের মাঠে সচিনের এমন সেঞ্চুরির প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করলেন মুম্বইয়ের ক্রিকেটপ্রেমীরা। মেরেকেটে এক হাজার দর্শকও ছিলেন না এ দিন ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে। সচিন তেন্ডুলকরের নিজের নামে যে স্ট্যান্ড, তাতে কেউ নেই। মুম্বইয়ের এক তরুণ সাংবাদিক আস্ত একটা ব্লগই লিখে ফেললেন, যার মোদ্দা বক্তব্য, কোথায় গেল মুম্বইয়ের সেই ক্রিকেটপ্রীতির সুনাম? অথচ সচিন রঞ্জি খেলছেন শুনে এই ম্যাচের লাইভ টেলিকাস্টের জন্য স্টার ক্রিকেট চ্যানেলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন বেশ কিছু বিজ্ঞাপনদাতা। এমনই সচিনের মহিমা! কিন্তু সংশ্লিষ্ট চ্যানেলে বাংলা-রাজস্থান ম্যাচ দেখানোর ব্যবস্থা আগেই করা হয়ে গিয়েছিল। পরিকাঠামোগত বন্দোবস্ত না থাকায় একইসঙ্গে তারা দুটো ম্যাচ দেখাতে পারেনি।
রঞ্জিতে তারাদের কথা
সচিন: মুম্বই-রেলওয়েজ ম্যাচে ১৩৭ রান
সহবাগ: দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ লড়াইয়ে ২৫ রান
গম্ভীর: একই ম্যাচে ৩২ রান
কোহলি: ওই ম্যাচেই ১৪ রান
হরভজন: পঞ্জাব-হায়দরাবাদ ম্যাচে ০-৩৯
বিদর্ভ-হরিয়ানা লড়াইয়ে ৫-১৮
বাইশ মাস পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি। ঢাকায় (এশিয়া কাপে) তাঁর শততম সেঞ্চুরিকে আন্তর্জাতিক বলা যেতে পারে, কিন্তু প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি তো নয়। টেস্ট ক্রিকেট, রঞ্জি-দলীপ ম্যাচকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ধরা হয়। ২০১০-এ কেপটাউনের টেস্ট সেঞ্চুরিকেই তাই শেষ প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি বলে ধরা হত। ভারতীয় ক্রিকেটে সুনীল গাওস্করের সবচেয়ে বেশি প্রথম শ্রেণীর সেঞ্চুরির (৮১) থেকে আর তিন ধাপ দূরে সচিন। এত দিনে সেই খরা কাটিয়েও একফোঁটা উচ্ছ্বাস নেই তাঁর। বরং কেকেআরের প্রাক্তন পেসার ২৪ অনুরিত সিংহের কাঁধ সমান তোলা বলকে আপার কাট মারতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার সময় আফসোস আর বিরক্তিই সচিনের চোখেমুখে! এ জন্যই তিনি সচিন তেন্ডুলকর!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
মুম্বই: ৩৪৪-৪ (সচিন ১৩৭, রাহানে ১০৫ নঃআঃ)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.