‘শুভ মহরত’ যেন হয়েও হল না।
শুভময় দাসের ব্যাটে বাংলার রঞ্জি অভিযানের শুরুটা ‘শুভ’ হতে পারত। আটকে গেল দুটো কারণে। এক, খারাপ আলো। আর দুই, আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে শুভময়ের আউট হয়ে যাওয়া।
রঞ্জি চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে এত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাট করতে হবে, তা-ও আবার ওপেনিংয়ে, সেটা ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগেও তাঁর জানা ছিল না। জানতে পারেন বৃহস্পতিবার রাতে। কারণ, ততক্ষণে তাঁর বরাত খুলে দিয়েছে দুই নিয়মিত ওপেনারের জোড়া চোট। প্রস্তুতি বলতে প্রায় কিছুই ছিল না। ম্যাচের আগের দিন তো নেটের ধারেকাছেও যাননি। কিন্তু স্রেফ অভিজ্ঞতা দিয়ে কী ভাবে রঞ্জি চ্যাম্পিয়নদের পেস বোলিং সামলে দেওয়া যায়, হাতেগরম দেখিয়ে গেলেন শুভময়।
উদাহরণ হিসেবে দু’টো পার্টনারশিপকে ব্যবহার করা যাক। জয়জিৎ বসু ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার পর ঋতম পোড়েলের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৮ রান। পরে অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারিকে সঙ্গে নিয়ে আরও ৯৫ রান বাংলার স্কোরশিটে জমা করা। |
শুক্রবারের ইডেনে হাজির ছিলেন পূর্বাঞ্চল নির্বাচক সাবা করিম। তবে তাঁর সামনে এ দিন বেশি দূর এগোতে পারেননি মনোজ। কিন্তু সে সব ঢেকে শুভময় বুঝিয়ে দিলেন, কেন তাঁর নাম বাংলা কোচ ডব্লিউ ভি রামনের ‘গুড বুকে’ থাকে। শুভময়ের সবচেয়ে বড় ‘ইউএসপি’ হল, এক থেকে সাত যে কোনও পজিশনে খেলতে পারেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার নোটিশেও তাই মাঠে নেমে পড়তে অসুবিধা হয় না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, দুই নিয়মিত ওপেনারের অনুপস্থিতি বুঝতেই দেননি বাংলাকে।
ব্যাটিংয়ে দেখনদারি কম। চরিত্রের হুবহু ছবি যেন ধরা পড়ে তাঁর ব্যাটিংয়ে। শান্ত, ঝুঁকিহীন মেজাজের ব্যাটিং। কিন্তু সংকল্পে অটুট। বাংলার সিনিয়র ওপেনার অরিন্দম দাসের বাদ পড়া নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে চলতি মরসুমে। কিন্তু দেখা গেল, বাংলা ক্রিকেটের ‘ডন’-এর চেয়ে নতুন বলটা তিনি মোটেই খারাপ সামলান না। রাজপুত পেসারদের মধ্যে পঙ্কজ সিংহকেই সবচেয়ে মারাত্মক দেখিয়েছে। কিন্তু শুভময়কে বিশেষ চাপে ফেলতে পারেননি। বরং ২৪৮ মিনিট ক্রিজে থেকে ৯৫ রানের ইনিংসে পনেরোটা বাউন্ডারির সঙ্গে একটা ওভার বাউন্ডারি। আলো কমে যাওয়ায় এ দিন ৫৯ ওভার খেলা হল। যার মধ্যে শুভময় ছিলেন ৫৪ ওভার পর্যন্ত। কপাল না ডোবালে তাঁর সেঞ্চুরিও আসে। পঙ্কজের যে বল লেগস্টাম্পের বাইরে যাচ্ছিল, সেটাতেই কিনা উঠে গেল আম্পায়ারের আঙুল! বাংলা শিবিরেও দিনের শেষে কিছুটা টেনশনের আবহ। ১৮৭ তো স্বস্তির ঘুম আনার মতো স্কোর নয়।
শুভময়কেও সেঞ্চুরি ফস্কানোর চেয়ে বেশি করে ম্যাচে বাংলার ভবিষ্যৎ ভাবাচ্ছে। “গত বছর আমি খুব ভাল খেলিনি। তাই এ বার প্রথম ম্যাচেই বড় রান পেয়ে ভাল লাগছে। কিন্তু টিমের আরও বেশি রান দরকার ছিল। সেই কাজটা করতে না পারার দুঃখও তাই থেকেই যাচ্ছে,” বিকেলের ইডেনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন দিনের নায়ক। তবে বাংলা ব্যাটিং লাইন আপের পরের তিনটে নামে চোখ বোলালে তাঁর দুঃখ আর আশঙ্কা কিছুটা কমতেই পারে। যে তিনটে নাম যে কোনও সময় অশুভ-বার্তা বয়ে আনতে পারে বিপক্ষের ড্রেসিংরুমে। অনুষ্টুপ মজুমদার। ঋদ্ধিমান সাহা। লক্ষ্মীরতন শুক্ল!
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ১৮৭-৪ (শুভময় ৯৫, মনোজ ৪২, ঋতম ২২, পঙ্কজ ৩-৩০)। |