মনোরঞ্জন...
বিতর্কে তিন কন্যা
তুপর্ণা সেনগুপ্তের অভিনয়ে ঢাকা পড়ে যাওয়ার ভয় ছিল?
এটা জানা কথাই যে ঋতুপর্ণা, তাঁর অভিনয় দক্ষতার জোরে এইরকম একটা চরিত্র পাবেনই। তার উপর এর আগেও এই পরিচালকেরই করা ‘চারুলতা ২০১১’-য় অভিনয়ও করেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। “আমার তো মনে হয় না অন্য কারও ইনসিকিউরিটির জায়গা আছে। তিনটে মেয়ের চরিত্রই খুব ইন্টারেস্টিং। আমি তো বুঝতেই পারছি না ওরা তিনজন কেন রাজি হল না। অনন্যা তো দিব্যি অভিনয় করল,” বললেন ঋতুপর্ণা।
“আমার আগে কাকে ওই চরিত্রটা অফার করা হয়েছে, তাতে আমি একটুও চিন্তিত নই। আমি স্ক্রিপ্ট পড়েছি। তাই জানি এই চরিত্রে আমার অভিনয় করার সুযোগ কতটা। ঋতুদি সিনিয়র, উনি তো একটু বেশি জায়গা পাবেনই। আমার তাতে কোনও অসুবিধা নেই,” স্পষ্ট জবাব অনন্যার।
স্ক্রিপ্টটাই কি ইস্যু ছিল? নাকি আদৌ কোনও স্ক্রিপ্টই ছিল না?
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও উন্নতি দাভারা
এটা কিছুটা ঠিক। “স্ক্রিপ্টটা অসম্পূর্ণ। আমি তো বুঝতেই পারিনি রেপ ভিক্টিমের চরিত্রটা গোটা ছবিতে খাপ খাচ্ছে কী করে,” জানালেন পার্নো। স্বস্তিকাকে অফার করা হয়েছিল এক পুলিশের চরিত্র। তাঁরও মত একই,“কোনও স্ক্রিপ্ট নেই। তার ওপর এতগুলো চরিত্র। এই মেথডে আমি একদম কমফর্টেবল না।” ‘মাল্টিপল্ ন্যারেটিভ স্ট্রাকচার’-এ অনুপ্রাণিত হয়ে টলিউড তার নিজস্ব ‘ব্যাবেল’ আর ‘২১ গ্রামস্’ বানাতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে বারবার। নামে ‘তিন কন্যা’ হলেও, কেউ জানে না এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অনন্যা কী ভাবে যৌনকর্মী হলেন। বা উন্নতি দাভারা অভিনীত সেক্সি আইপিএস অফিসারের চরিত্রের ব্যাকস্টোরিটাই বা কী। এক ধর্ষিতার কাহিনী থেকে ছবিটি হঠাৎই হয়ে যায় এক ক্রাইম-থ্রিলার যখন ঋতুপর্ণার স্বামী হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান।
ধর্ষিতার চরিত্রে অভিনয় করাটায় কি কোনও সোশ্যাল-ট্যাবু ছিল?
ঠিক সেরকম নয়। একবাক্যে জানালেন সব অভিনেতা। কিন্তু কোথাও প্রশ্নটা থেকেই যায়। যে সমাজ মনে করে ইভ-টিজিংয়ের জন্য মেয়েদের পোশাকই দায়ী বা একজন যৌনকর্মী হলেই তাকে অনায়াসে ধর্ষণ করা যায়, সেখানে ঋতুপর্ণার এক টেলিভিশন শোয়ে অনন্যার এই প্রশ্নগুলো দর্শকদের কাছে ভীষণ আনসেটলিং। আজকালকার দিনেও মেল-শভিনিজমকে প্রশ্ন করে একটা চরিত্রে অভিনয় করাটা কি কঠিন? এ বিষয়ে অনন্যা বলেন, “সিনেমা একটা ফিকশন। যেখানে অভিনেতাদের ডায়লগ বলতে হয়। আমার কোনও অসুবিধা নেই এমন চরিত্রে অভিনয় করতে যে কিনা অস্বস্তিকর প্রশ্ন করে। একজন দর্শকও যদি এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবে, সেখানেই অডিও-ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার ক্ষমতার সার্থকতা।
না, আমার কোনও অসুবিধা ছিল না
প্রস্টিটিউটের রোলটি করতে।
সংশয় ছিল অন্য জায়গায়।
তনুশ্রী চক্রবর্তী
শুধু হলে দর্শক টানতে আমি পোস্টারে বিকিনি পরতে
পারব না। ছবিটায় কোনও স্ক্রিপ্ট নেই, এক্সটেম্পো
শ্যুটিং, দু’জন অভিনেত্রীকে দু’রকম কথা বলা। এটা কী?
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
ছবির কাহিনির সঙ্গে পাকস্ট্রিট ধর্ষণ কান্ডের কোথাও একটা মিল থাকায় কি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ভয় ছিল?
যদিও ছবিটি পার্কস্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের ওপর নয়, চিত্রনাট্যের সঙ্গে ঘটনাটির মিল সুস্পষ্ট। অন্তত ছবিটির প্রথম ভাগ তো তাই দেখায়। ধর্ষিতাকে পুরুষদের দিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর বিভীষিকা থেকে পুলিশ স্টেশনে সেই মেয়ের বিদ্রুপ সহ্য করা সবই দেখানো হয়েছে। এছাড়াও আছে সমাজের একাংশের এক অদ্ভুত মানসিকতা যেখানে ধরেই নেওয়া হয় যেযে মহিলা ডিস্কে গিয়ে মদ্যপান করেন তার চরিত্র নিয়ে সংশয় থাকাটা স্বাভাবিক। তনুশ্রী, যিনি ধর্ষিতার চরিত্রটি অভিনয় করতে রাজি হননি, বলেন, “না, আমার কোনও অসুবিধা ছিল না প্রস্টিটিউটের রোলটি করতে। কোনও সংশয় ছিল না পার্কস্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডের সঙ্গে মিল থাকা বা না থাকা নিয়ে। আমি এর আগেও এসকর্ট বা প্রস্টিটিউটের চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু ছবির প্রেক্ষিতে প্রত্যেকটি চরিত্রেরই একটা জার্নি থাকে। ছবিটি ও এই চরিত্রটির ক্ষেত্রে আমি সেটা ঠাহর করতে পারিনি।”
ছবিটা দেখে মনে হল যে তনুশ্রীর যুক্তিটি একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। ছবিটির দ্বিতীয়ার্ধে ধর্ষিতার চরিত্রটি আরও বেশি জায়গা পেলে মন্দ হত না।
ছবির সমকামিতার অ্যাঙ্গলটা কি অবাঞ্ছিত ছিল?
স্বস্তিকার বক্তব্য যে তাঁকে দময়ন্তী সেনের রেফারেন্স দেওয়া হয় রোলটা অফার করার সময়। “আমার কাছে এখনও সেই ই-মেলগুলো রয়েছে যেখানে রেফারেন্স ছবি পাঠানো হয় ফোটোশ্যুটের জন্য। আই ওয়াজ শকড্ টু সি ফোটোগ্র্যাফস অব থ্রি উইমেন ইনডালজিং ইন লেসবিয়ান অ্যাক্টস। দময়ন্তী সেনের রেফারেন্সের চরিত্রের সঙ্গে লেসবিয়ানিজম্ কী করে আসে? আমার লেসবিয়ান চরিত্রে অভিনয় করতে অসুবিধা নেই তবু আমি আশা করি যে আমার পরিচালকের প্রথম থেকেই একটা স্বচ্ছতা রাখা দরকার একজন অভিনেত্রীকে তার রোলটি বোঝানোর জন্য।
স্ক্রিপ্টটা অসম্পূর্ণ ছিল। আমি তো বুঝতেই
পারিনি রেপ ভিক্টিমের চরিত্রটা গোটা
ছবিতে খাপ খাচ্ছে কী করে?
পার্নো মিত্র
সিনেমা একটা ফিকশন। যেখানে অভিনেতাদের
ডায়লগ বলতে হয়। আমার কোনও অসুবিধা নেই এমন
চরিত্রে অভিনয় করতে যে কিনা অস্বস্তিকর প্রশ্ন করে।
অনন্যা চট্টোপাধ্যায়
পরে যখন আমি পার্নোকে জিজ্ঞেস করেছিলাম চরিত্রটির সম্বন্ধে, আমি তো দেখি ও অনেক কিছুই (হ্যালুসিনেটিং জার্নালিস্ট বা সমকামিতা) জানত না,” বললেন স্বস্তিকা। তিনি আরও জানান যে পরিচালককে তিনি বারবার জিজ্ঞেস করেছিলেন ছবির প্রোমোশনের সময়ে কি এই সব ফোটোশ্যুটের ছবিই ব্যবহার করা হবে? “যেমন করা হয়েছিল ‘চারুলতা ২০১১’-র সময়? ছবি একরকম, পোস্টার আর একরকম। শুধু হলে দর্শক টানতে আমি পোস্টারে বিকিনি পরতে পারব না। ছবিটায় কোনও স্ক্রিপ্ট নেই, দু’জন অভিনেত্রীকে দু’রকম কথা বলা। কেন করতে যাব আমি এই ধরনের ছবি?” স্বস্তিকার সাফ প্রশ্ন। অগ্নিদেবের অবশ্য অন্য যুক্তি। “সেন্সর বোর্ড একবারও ঝামেলা করেনি সমকামিতার দৃশ্যগুলো নিয়ে। ঋতুপর্ণাকে নিয়ে ইনসিকিউরিটি থাকলে আমি মানতে পারি। বা যদি অভিনেত্রীদের কোনও ভয় থেকে থাকে রাজনৈতিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার (যদিও আমরা রাজনৈতিক কোনও প্রসঙ্গের উল্লেখ রাখিনি)। কিন্তু অন্য সব যুক্তিগুলো একেবারেই ধোপে টেকে না। ওঁরা কেউই চরিত্রগুলো ঠিকভাবে বুঝতে পারেননি।”
পরিচালকের নিজস্ব মত থাকতেই পারে। অনেক উপাদান ছিল ছবিটিকে অন্য সুরে বাঁধার। তবে কোথাও যেন অনেক বিষয় ঢুকে গিয়ে মূল লক্ষ্য থেকে ছড়িয়ে গেল চিত্রনাট্য। প্রাপ্তি হল ঋতুপর্ণা আর অনন্যার অভিনয় আর ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সুরে রাশিদ খান, কৌশিকী দেশিকান আর শ্রেয়া ঘোষালের গান।

রেজাল্ট আউট
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আইপিএস অফিসারের চরিত্রটিতে অভিনয় না করে ঠিকই করেছেন। যদি কেরিয়ারের এই স্টেজে পার্নো মিত্র শক্তিশালী চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়ে থাকেন, তাঁর হয়তো দ্বিতীয় বার ভাবা উচিত ছিল ধর্ষিতার চরিত্রটি না করার আগে। তনুশ্রী চক্রবর্তীর অভিনয় না করার যুক্তিটা একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না যদি বিচার করা হয় ছবির কনটেক্সটে তাঁর চরিত্রের সাথর্কতা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.