|
|
|
|
জয়পাল-অস্ত্রে শান দিচ্ছেন কারাটরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক থেকে জয়পাল রেড্ডির অপসারণ এখন গলার কাঁটা হয়ে উঠছে মনমোহন সিংহের। আরও নথিপত্র হাতে নিয়ে সংসদের আগামী অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে সরকারকে তুলোধোনা করতে তৈরি হচ্ছে বামেরা। সরকার ও মুকেশ অম্বানীর সাফাইয়ের পরেও গুরুদাস দাশগুপ্ত, প্রকাশ কারাটরা ক্রমশ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপ বাড়াচ্ছেন।
অক্টোবরে মন্ত্রিগোষ্ঠীর যে গোপন নথি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে অম্বানীর রিলায়্যান্স সংস্থা দাবি করলেও জয়পাল রেড্ডির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম এখনই না-বাড়ানোর বিষয়ে অনড় ছিল। সেই নথিতে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক স্পষ্ট করেই লিখেছিল, গ্যাসের দাম বাড়ালে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বিরাট বোঝা চাপবে। এই অবস্থায় ২০১৪-র এপ্রিলের আগে গ্যাসের দাম পর্যালোচনা করার পক্ষে নয় মন্ত্রক।
এই সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শও নিয়েছিল। তিনিও জানিয়েছিলেন, আইনগত দিক থেকে এই দাম বাড়ানোর ব্যাপারে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। এটি সরকারের নীতির বিষয়। কিন্তু এই বিষয়টিও উপেক্ষা করা যায় না,সরকার-রিলায়্যান্স চুক্তির শর্তই ছিল যে নির্ধারিত দাম ২০১৪ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
সিএজি-ও সে সময়ে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রককে চিঠিতে লিখেছিলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে রিলায়্যান্স প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে যেন তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। সিএজি-ও বলেছিলেন, অম্বানীর সংস্থাকে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়াটা ঠিক হবে না। কারণ ২০১৪ সাল পর্যন্ত দাম না-বাড়ার শর্তেই তারা কেজি বেসিনে গ্যাস উত্তোলনে নেমেছিল।
গত কাল সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটও এই প্রসঙ্গটিই তুলেছিলেন। তাঁরও দাবি, নতুন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি দায়িত্ব পাওয়ার পরই কেজি বেসিনের গ্যাসের দাম বাড়াতে তৎপর হয়েছেন। কিন্তু ২০১৪-এর আগে গ্যাসের দাম যেন কোনও অবস্থাতেই বাড়ানো না হয়, কারণ সেই শর্তে রাজি হয়েই কিন্তু অম্বানীরা এই গ্যাস উত্তোলনে নেমেছিলেন।
মনমোহন সিংহের অস্বস্তি বাড়িয়ে আজ সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তও বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে সার ও বিদ্যুতের উপর। সারের সঙ্গে কৃষকদের স্বার্থ জড়িত। বিদ্যুতের দামও বাড়বে। মন্ত্রিগোষ্ঠীর নোটেও লেখা রয়েছে, গ্যাসের দাম বাড়াতে হলে সরকারের উপরেও বাড়তি বোঝা চাপবে। সুতরাং কর্পোরেট সংস্থার ব্ল্যাকমেলের কাছে জয়পাল রেড্ডি মাথা নোয়ায়নি বলেই তাঁকে মন্ত্রক ছাড়তে হয়েছে। অতীতে মণিশঙ্কর আইয়ারকেও একই ভাবে চলে যেতে হয়েছিল। কিন্তু কর্পোরেট সংস্থার পছন্দের মন্ত্রী মুরলী দেওরা বহু দিন টিকে গিয়েছিলেন এই মন্ত্রকে। ২০০০-এ এই চুক্তির ন’বছর পর থেকে উৎপাদন শুরু হয়। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছে রিলায়্যান্স।
জয়পাল রেড্ডি অবশ্য ‘পুরনো’ মন্ত্রক নিয়ে মন্তব্য করতে চাইছেন না। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, এখনও পর্যন্ত যা যা তথ্য বাইরে এসেছে, তা সর্বৈব সত্য। কর্পোরেট সংস্থার চাপের কাছে নতিস্বীকার করেননি বলেই তাঁকে মন্ত্রক ছাড়তে হয়েছে এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মতো লঘু মন্ত্রকের ভার নিতে হয়েছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে রাজনীতির যোগসাজশ খোলসা করার পরই বিরোধী দলগুলি নেমে পড়েছে। বাম সূত্রের মতে, সরকারের অনেক আমলাও এ ব্যাপারে সাহায্য করছেন। প্রাক্তন অনেক আমলাও তলে তলে বিরোধীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই সব হাতিয়ার নিয়েই সংসদের আগামী অধিবেশনে যৌথ ভাবে মনমোহনকে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধীরা। |
|
|
|
|
|