গডকড়ীর বিকল্প কে, দল-সঙ্ঘে প্রবল ঘোঁট
রবিন্দ কেজরিওয়ালের তোপ নিতিন গডকড়ীর কুর্সি নড়িয়ে দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু পরবর্তী বিজেপি সভাপতি কে হবেন, তা-ই নিয়ে বিজেপি তো বটেই, সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যেও চলছে প্রবল অন্তর্কলহ।
চেন্নাইয়ে আরএসএসের দু’দিনের বৈঠক গত কাল শেষ হয়েছে। সেই বৈঠকের অনেকটাই জুড়ে ছিল গডকড়ী প্রসঙ্গ। আর সেই আলোচনা থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট, গডকড়ীকে ঘিরে সঙ্ঘের মধ্যে তৈরি হয়েছে আর একটা সঙ্ঘ। তাদের জনা দশেক শীর্ষ নেতা সম্ভাব্য বিজেপি সভাপতির নাম নিয়ে প্রচার এবং পাল্টা প্রচার শুরু করেছেন। ফলে নিতিনের সভাপতিত্বকে কেন্দ্র করে এক দিকে যখন বিজেপির সঙ্গে বিজেপির সংঘাত চলছে, অন্য দিকে তখন আরএসএসের সঙ্গে আরএসএসের লড়াই শুরু হয়েছে।
এর সঙ্গে রয়েছে বিজেপি-আরএসএস দ্বন্দ্বও। নিতিনকে আঘাত করে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতকে শিক্ষা দিতে তৎপর বিজেপির একাংশ। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে সনিয়া-মনমোহন যখন মন্ত্রিসভায় রদবদল করে সরকারের ভাবমূর্তি ফেরাতে সক্রিয়, তখন বিজেপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নানা স্তরে এই জটিল কলহ দলে এক হতাশার জন্ম দিয়েছে।
মোহন ভাগবত বিজেপি নেতাদের বলছেন, গডকড়ীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। তার আগে তাঁকে সরানো হলে মনে হবে, কেজরিওয়ালের চাপেই এই কাজ করতে হল। তাতে কেজরিওয়ালের লাভই বেশি হবে। দ্বিতীয়ত, বিজেপির ভিতর যাঁরা আরএসএস বিরোধী, তাঁরা এই সুযোগে সঙ্ঘকে আঘাত করতে চাইছেন। তাই এখন সভাপতি পরিবর্তন করা মানে সঙ্ঘকে দুর্বল করা। তৃতীয়ত, ভাগবত মনে করেন, এখন নিতিনকে সরালে মনে হবে যে, বিজেপিতে গডকড়ী-বিরোধী গোষ্ঠীর চাপে সঙ্ঘ এই কাজ করতে বাধ্য হল।
ভাগবত লালকৃষ্ণ আডবাণীকে বলেছেন, বিজেপি যদি নেতা পরিবর্তন করতে চায়, তা হলে কে নেতা হবেন, সেটা তারাই ঠিক করুক। ভাগবতের এই মোক্ষম চালে বিজেপি কুপোকাত। সঙ্ঘপ্রধান ভাল করেই জানেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীর পর বিজেপিতে এখন এমন কেউ নেই, যাঁর নতুন সভাপতির নাম ঘোষণা করে দেওয়ার মতো কর্তৃত্ব আছে। বিজেপির শীর্ষ নেতারা প্রায় সকলেই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এমনকী, আডবাণীও সেই দৌড়ে থাকায় দলের মেন্টরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারছেন না। আরএসএস নেতা ভাইয়াজি জোশীর সঙ্গে কথা বলে গডকড়ীর মতো নাগপুরের নেতাকে অপসারণের বিরুদ্ধে সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে জোট তৈরি করছেন ভাগবত। এমনকী মনমোহন বৈদ্য, যাঁর সঙ্গে একদা ভাগবতের সংঘাত ছিল, তিনিও গডকড়ীর পক্ষে রায় দিয়েছেন।
তা সত্ত্বেও অবশ্য গডকড়ীর পরিবর্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে সঙ্ঘের বৈঠকে। অরুণ জেটলি, মুরলীমনোহর জোশী এমনকী আডবাণীর নামও এসেছে। সঙ্ঘের অন্দরে ভাগবতের বিরুদ্ধে যিনি সব চেয়ে বেশি সক্রিয়, তিনি হলেন সুরেশ সোনি। মধ্যপ্রদেশের এই নেতা বিজেপি-আরএসএস সম্পর্কের সেতু। সোনি দীর্ঘদিন আডবাণী-বিরোধী ছিলেন। সেই ছবি অবশ্য বদলে গিয়েছে। এখন তাঁর মূল লড়াই মোহন ভাগবতের বিরুদ্ধে। সুরেশ আরএসএস নেতাদের বলছেন, ভোটের আগেই নরেন্দ্র মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হোক। মোদীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল বলে জেটলিকে বিজেপি সভাপতি করা হোক।
এমনিতেই এই দৌড়ে জেটলির নাম পয়লা নম্বরে রয়েছে। কিন্তু সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ, বেঙ্কাইয়া নায়ডু থেকে আডবাণী পর্যন্ত জেটলিকে সভাপতি করার বিপক্ষে। কয়েক দিন আগে তাঁরা দিল্লিতে সঙ্ঘের সদর দফতরে গিয়ে সুরেশ সোনি ও ভাইয়াজি জোশীর কাছে জেটলির নামে আপত্তির কথা জানিয়েছেন। জেটলিকে ঠেকাতে বরং নিতিনকেই রাখতে চাপ দিচ্ছেন সঙ্ঘ, বিজেপি-র অনেকে।
সুরেশ সোনির পর সঙ্ঘের যে নেতা বিজেপিকে নিয়ে সব চেয়ে বেশি মাথা ঘামান, সেই উত্তরপ্রদেশের প্রতিনিধি কৃষ্ণগোপালের মতে, মুরলীমনোহরই সভাপতি হওয়ার সঠিক লোক। তিনি হিন্দিবলয়ের লোক। শিক্ষাবিদ, বিদগ্ধ মানুষ। পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে তাঁর ভূমিকাও নজর কেড়েছে। সঙ্ঘে কর্নাটকের প্রতিনিধি হোসবোলেও জেটলিকে সভাপতি করার বিপক্ষে। তিনি এবং মদনদাস দেবী আডবাণীকে অন্তর্বর্তিকালীন সভাপতি করার পক্ষে। সেই বৈঠকে আর এক নেতা মধুভাই কুলকার্নি স্পষ্ট বলেছেন, সঙ্ঘ যখন প্রথম দিন থেকে দুর্নীতি সহ্য না-করার কথা বলছে, তখন নিতিনকে রাখা ঠিক হবে না। এই মতের সমর্থক বজরংলাল গুপ্তও। তাঁর প্রস্তাব, এমন কাউকে আনা উচিত, যাতে মনে হবে সঙ্ঘের বিচারধারা থেকে বিজেপি সরছে না। সে ক্ষেত্রে জোশীই তাঁর পছন্দ।
শ্রীকান্ত জোশী এবং অরুণ কুমার বলেন, বিজেপি সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে সঙ্ঘ যদি বেশি জেদাজেদি করে আর তাতে যদি সংঘাতের সৃষ্টি হয়, তা হলে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাবে। এই ডামাডোলে ভিএইচপি নেতা অশোক সিঙ্ঘল ভাগবতকে বলেছেন, যিনি রামমন্দির বানাবেন, রামমন্দিরের আন্দোলন শুরু করবেন, পঞ্চকোশীতে মসজিদ না-করার পক্ষে রায় দেবেন, তাঁকেই সভাপতি করা হোক।
অতএব আরএসএস বৈঠক শেষে হাতে পেন্সিলও রইল না। বরং স্পষ্ট হল, শুধু বিজেপি নয়, গডকড়ীকে নিয়ে আরএসএসের কলহও এখন চরমে পৌঁছেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.