হাসপাতাল চত্বরেই দুই গাড়িচালককে বেধড়ক মারধর করছে এক পেটানো চেহারার দুষ্কৃতী। হঠাৎ কোমর থেকে ভোজালি বার করে এক জনকে কোপাতে শুরু করল সে। তিনি পড়ে যেতেই পড়ে থাকা একটি লোহার রড দিয়ে মারল অন্য যুবকের মাথায়।
কোনও সিনেমার চিত্রনাট্য নয়। দৃশ্যটি খাস কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। তবে ‘তাণ্ডব’ চালানোর পরে পালাতে পারেনি ওই দুষ্কৃতী। মোটরবাইকে চেপে পালানোর সময়েই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। ঘটনায় জখম দুই যুবকের নাম ছোটন হাজরা ও শানু মান্না। তাঁরা হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স চালান। শানু আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানায়, ওই দুষ্কৃতীর নাম বাদল কর্মকার ওরফে বাবাই। মধ্য কলকাতার বিভিন্ন থানায় তার নামে তোলাবাজি-সহ একাধিক অভিযোগে মামলা ঝুলছে। লালবাজারের গুন্ডা-দমন শাখাও তাকে খুঁজছে। ধৃতের কাছ থেকে ভোজালি ও লোহার রড বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ডিসি (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ জানান, ধৃতের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের হয়েছে। শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট বাবাইকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত দেয়।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ মেডিক্যাল কলেজের দু’নম্বর গেটের সামনে গোলমালের খবর মেলে। পুলিশ দেখে পালানোর চেষ্টা করে বাবাই। কিন্তু বৌবাজার থানার অফিসার সুদীপ্ত ঘোষ ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকড়াও করেন তাকে।
কী নিয়ে গোলমাল? গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মেডিক্যাল কলেজ এলাকায় হাসপাতালের ছাঁট জিনিসের ব্যবসা, গাড়ি পার্কিং বা দালাল-চক্রের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে বাবাই। এ ছাড়া বৌবাজার, মুচিপাড়া-সহ মধ্য কলকাতায় তোলাবাজিও করে সে। মাসখানেক আগে প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষও হয় তার। পুলিশ জেনেছে, গাড়ি পার্কিং করার তোলা আদায় নিয়েই ছোটন ও শানুর সঙ্গে বচসার জেরে তাঁদের উপরে চড়াও হয় বাবাই।
পুলিশের দাবি, মেডিক্যাল চত্বরে ছাঁট ব্যবসা, হাসপাতালে দালালি নিয়ে একাধিক দুষ্কৃতী গোষ্ঠীর লড়াই আছে। আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দ্বন্দ্বও। বছরখানেক আগেও এ নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে গুলি চলার ঘটনায় এলাকার এক সমাজবিরোধী ‘ড্রাকুলা’ গুলিবিদ্ধ হয়। তখন দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য কমলেও ফের তা মাথাচাড়া দিয়েছে। বাবাইকে ধরার পরে পুলিশের একাংশের দাবি, হাসপাতাল চত্বরে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমবে। |