এক ঘণ্টারও কম ব্যবধানে ফের জোড়া ছিনতাই দক্ষিণ কলকাতায়।
ছকটা পুরনোই। মোটরসাইকেলে চেপে আসে দু’তিন জন দুষ্কৃতী। রাস্তায় একলা মহিলাকে পেয়ে আচমকা গয়না ছিনিয়ে নেয়। তার পরে চম্পট দেয় মোটরবাইকে চেপে। বাধা পেলে অস্ত্র বার করে ভয়ও দেখায় পথচারীদের। গত কয়েক মাসে দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলির বুকে ছিনতাইয়ের এই ছকটা পরিচিত হয়ে গিয়েছে।
শুক্রবার সকালে পৌনে এক ঘণ্টার ব্যবধানে দক্ষিণ কলকাতার কসবা ও গড়িয়াহাটে এমনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ফের ঘটেছে। মাসখানেক আগে একই ভাবে মিনিট কুড়ির ব্যবধানে ছিনতাই হয়েছিল ঢাকুরিয়া ও সার্ভে পার্কে। ঢাকুরিয়ায় গুলিও চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এ দিন কসবায় ছিনতাইবাজেরা রিভলভার বার করলেও গুলি চালায়নি। শহরের বাসিন্দারা বলছেন, লাগাতার এমন ঘটনায় আতঙ্কিত তাঁরা। কিন্তু সেই আতঙ্ক দূর করতে কার্যত ‘অসহায়’ পুলিশ। এই ছিনতাইগুলির পিছনে কোন চক্র কাজ করছে, তার উত্তরও দিতে পারেননি লালবাজারের কর্তারা।
এ দিন প্রথম ঘটনাটি ঘটে সকাল ন’টা নাগাদ, কসবার রুবি পার্ক (পূর্ব) এলাকার ভদ্রপাড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পেশায় স্কুলশিক্ষিকা সুমনা মজুমদার কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছিলেন। বাড়ির কাছেই খালপাড়ের মুখে মোটরবাইকে এসে দুই যুবক তাঁর গলা থেকে হার ছিনতাই করে পালায়। হারের একটি অংশ সুমনাদেবীর শাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ায়, তা নিতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। এক বাসিন্দা ছিনতাইবাজদের আটকানোর চেষ্টা করলে তারা রিভলভার বার করে। স্থানীয় বাসিন্দা নীলিমা হালদার বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে এই পাড়ায় আছি। আগে কখনও এমন ঘটেনি।” সুমনাদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, দুই যুবকের মাথায় হেলমেট ছিল না। দু’জনেই টি-শার্ট পরা ছিল।
সকাল পৌনে দশটা নাগাদ গড়িয়াহাটের ফার্ন রোডে শাশ্বতী দত্ত নামে আর এক মহিলার হার ছিনতাই হয়। শাশ্বতীদেবী জানান, ছেলেকে নিয়ে মন্দিরে যাচ্ছিলেন তিনি। বাড়ির সামনে গলির মুখে এই ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, “দু’টি ছেলে বাইকে করে গোলপার্কের দিক থেকে আসছিল। এক জন বাইকটি দূরে দাঁড় করায়। অন্য জন ছিনতাই করে। তার পরে বাইক নিয়ে আমার বাড়ির সামনে দিয়েই পালায়।” এই ঘটনায় আতঙ্কে দত্ত পরিবার। শাশ্বতীদেবীর স্বামী কল্যাণবাবু বলেন, “আমরা এই এলাকার দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা। কখনও এমন ঘটেনি। এখন নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।”
মাসখানেক আগে এমনই ঘটতে পারত যাদবপুরে এক মহিলার সঙ্গেও। ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ মোটরবাইকে চেপে দুই যুবক তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায়। তার পরে তাঁকে ভাল করে লক্ষ করে বলে ওঠে, “কিছু নেই।” তাই সেখান থেকে চলে যায় তারা।
শুক্রবারের ঘটনার তদন্তে নেমে রাত পর্যন্ত কোনও বিশেষ সূত্র পায়নি পুলিশ। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ শুধু বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে।”
এ দিকে শহরের একটি বড় অংশ জুড়ে পরপর ছিনতাই হলেও পুলিশ মোকাবিলা করতে পারছে না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। লালবাজারের একাংশের দাবি, পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনায় নানা সূত্র মিললেও সুরাহা করা যায়নি। কয়েকটি ক্ষেত্রে গড়িয়া, বেহালা লাগোয়া অপরাধীরা এই কাজে জড়িত বলে গোয়েন্দারা দাবি করেছিলেন। কিন্তু কেউ ধরা পড়েনি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে পোস্তায় এক ব্যবসায়ীর ব্যাগ ছিনিয়ে পালানোর সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দীনেশ ভরদ্বাজ নামে এক দুষ্কৃতী। |