|
|
|
|
পর্যটন মরসুম শুরু হয়ে গেলেও উদাসীন লালবাগ |
শুভাশিস সৈয়দ • লালবাগ |
যা ভেবে লালবাগ যাচ্ছেন, গিয়ে পড়ছেন ঠিক তার উল্টো একটা জগতে। আর সেই বিভ্রম কাটতে কাটতেই ভ্রমণপর্ব শেষ।
মুর্শিদাবাদের লালবাগ বললেই মনে পড়ে নবাবি আমল, সম্পদ ও গরিমার চোখধাঁধানো আলো। আর মুর্শিদাবাদ স্টেশনে ট্রেন থেকে নামলে পরিস্থিতি দেখে মনে পড়ে যায় নবাবি আমলটা সত্যি বেশ কয়েকশো বছর পুরনো কথা। চারপাশ নোংরা, ধুলোয় ভর্তি। টাঙা চলছে কোনও নিয়ম ছাড়াই। যততত্র পড়ে ঘোড়ার মলমূত্র। রাস্তাগুলি পর্যন্ত সংস্কার হয়নি। বেশিরভাগ পর্যটকই অবশ্য ট্রেনে বা বাসে বহরমপুর পৌঁছে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে কিংবা অটোতে লালবাগ যান। সেক্ষেত্রেও প্রথমেই তাঁদের লড়াই করতে হয় গাড়ি বা অটো চালকদের নবাবি মেজাজের সঙ্গে। কে কত ভাড়া নেবেন, তা নির্ভর করে তাঁর মর্জির উপরে। লালবাগে সাধারণত পর্যটকেরা যান এক বা দু’দিনের জন্য। তাতে এত ঝক্কি পোহাতে হলে, তা যে এই পর্যটন কেন্দ্রের পক্ষে খুব ভাল বিজ্ঞাপন নয়, তা সব পক্ষই বোঝেন। কিন্তু বছর ঘুরে যায়, সমস্যার সমাধান হয় না। |
|
—ফাইল চিত্র |
পর্যটন ব্যবসায় যখন বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা চলছে, তখন লালবাগের মতো পরিচিত ও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলিরই সমস্যা কাটছে না কেন?
ব্যবসায়ীদের দাবি, তার দায় প্রধানত সরকারের। স্বীকৃত পর্যটনকেন্দ্র বলেই প্রতি বছর পর্যটন মরসুম শুরু হওয়ার মুখে হোটেল মালিক থেকে ব্যবসায়ী, পুরসভা, টাঙা মালিক-সহ সব পক্ষকে নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে যে বৈঠক হয়ে থাকে, তা পর্যন্ত এখনও হয়নি। লালবাগের মহকুমাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষ বলেন, “আমি ছুটিতে রয়েছি। ফলে ওই বৈঠক করা হয়নি। ফিরে বৈঠক করব।” কিন্তু দুর্গাপুজো থেকেই শুরু হয়ে যায় পর্যটন মরসুম। কিন্তু এই সময়টাই সরকারি ছুটি থাকে। সেই ছুটি এ বার শুরু হয়েছে ষষ্ঠীর দিন, চলেছে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত। আর এই সময়েই পর্যটকের ভিড় উপছে পড়েছিল হাজারদুয়ারি দেখতে। শুধু অক্টোবরেই প্রায় ৫৬ হাজার পর্যটক টিকিট কেটে হাজারদুয়ারি সংগ্রহশালা দেখতে গিয়েছিলেন। তাই সরকারের ঘুম ভাঙার আগেই পর্যটকদের ভোগান্তি শুরু হয়ে যায়।
মুর্শিদাবাদের পুরপ্রধান কংগ্রেসের শম্ভূনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “পুর-এলাকার চারটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সিংহী হাইস্কুল, আস্তাবল, চক বাজার ও নসিপুরে হাইমাস্ট লাইট (এইচএমএল) বসানো হয়েছে। সেই সঙ্গে নিমতলা মোড় থেকে পাঁচরাহা বাজার হয়ে আস্তাবল মোড় পর্যন্ত ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ম্যাস্টিক রাস্তা তৈরির পাশাপাশি পাঁচরাহা বাজার থেকে নারকেলতলা ঘাট পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার হয়েছে। এ ছাড়াও আস্তাবল মোড় থেকে নাকুরতলা, নশিপুর থেকে নসিফুর সেতু পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। রাস্তা-নর্দমা ও জলনিকাশি ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য সব মিলিয়ে ১৬টি ওয়ার্ডে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।”
কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। অভাব রয়েছে প্রয়োজনীয় শৌচাগারের। পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। হাজারদুয়ারি চত্বর এলাকা থেকে ইমামবাড়ার পিছন পর্যন্ত এবং পাহাড় বাগান এলাকায় পর্যাপ্ত আলো নেই। তোপখানা-মতিঝিল-কাঠগোলা বাগান, নসিপুর রাজবাড়ি, জাফরাগঞ্জ সমাধিক্ষেত্র, আজিমুন্নেষার সমাধি, ফৌতি মসজিদ যাতায়াতের রাস্তা সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। টাঙা চালকদের ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করতে এবং নির্দিষ্ট একটি জায়গা থেকে পর্যটকদের ওঠানো-নামানোর ব্যবস্থা করার কথা বারবার বলা হলেও কাজের কাজ হয়নি।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার বলেন, “অটো-গাড়ি ভাড়া নিয়ে পর্যটকদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। টাঙা নিয়েও তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।” অটোটালকদের লালবাগ-বহরমপুর শাখার সংগঠনের সহ সম্পাদক সৌমেন রক্ষিত অবশ্য বলেন, “পর্যটকদের উপরে ভাড়া নিয়ে জুলুমের কোনও অভিযোগ পাইনি। তেমন কোনও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।” |
|
|
|
|
|