শিল্প-বিরোধ থেকে হলদিয়াকে বাঁচাতে আর্জি
বন্দর-সমস্যা সামলাতে দিল্লিকে চায় বণিকসভা
ন্ত্রী হওয়ার পরপরই হলদিয়ায় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছিলেন দীপা দাশমুন্সি। মনমোহন সিংহ তাঁকে বলেন জাহাজমন্ত্রী জি কে ভাসানের সঙ্গে কথা বলতে। এ বার সেই হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিল বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স। তাদের আবেদন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসুক কেন্দ্র। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীকেও।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি এখনও এমন কোনও চিঠি হাতে পাননি। বলেছেন, “চিঠি পেলে ওঁদের (বেঙ্গল চেম্বার) সঙ্গে কথা বলব।”
মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই বলে আসছেন, হলদিয়ায় কিছু হয়নি। কিন্তু শিল্পমহল তাদের উদ্বেগ চেপে রাখতে পারছে না। এবিজি যে দিন জানাল তারা চলে যাচ্ছে, সে দিন প্রাথমিক ভাবে এই প্রতিক্রিয়াই এসেছিল শিল্পমহল থেকে। শুক্রবার বেঙ্গল চেম্বারের বন্দর বিষয়ক এক আলোচনাসভায় সেই বিষয়টিই আর এক বার উঠে এল। বণিকসভার বক্তব্য, শিল্প ক্ষেত্রে রাজ্যের ভাবমূর্তি একেবারেই উজ্জ্বল নয়। তার উপরে হলদিয়া বন্দরে যা হল, তার ফল মারাত্মক হতে পারে। বিনিয়োগকারীরা আরওই পিছু হটবেন। একই সঙ্গে তাঁরা মনে করেন, কী ভাবে শিল্প সংস্থা কাজ করবে, সেটা কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ঠিক করে দিতে পারেন না।
শুক্রবারের আলোচনাসভায় সরাসরি হলদিয়ার নাম না-করলেও বক্তারা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন, সেখানে এবিজি-কে ঘিরে যা চলছে, তা পুরোপুরি শিল্প-বিরোধী। তাঁদের দাবি, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত মাল খালাসের যে ব্যবস্থা, ভারতের কিছু কিছু জায়গায় তার বিরোধিতা করা হচ্ছে। এর ফলে শুধু বন্দরই নয়, সামগ্রিক অর্থনীতিরই ক্ষতি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা।
শিল্পমহলের যুক্তি, বন্দরে মাল যত তাড়াতাড়ি খালাস হবে, তত দ্রুত নতুন জাহাজ সেখানে ভিড়তে পারবে। ফলে বন্দরের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতিও। পুরনো পদ্ধতিতে একটা জাহাজ খালাস হতে কখনও কখনও এক সপ্তাহ লেগে যায়। জাহাজ সংস্থাগুলি তাই এ ধরনের বন্দরে জাহাজ পাঠাতে চায় না। বরং যেখানে দ্রুত মাল খালাসের ব্যবস্থা আছে, সেই বন্দরই খোঁজে তারা। যে বন্দর এই যুক্তি না-মেনে পুরনো পদ্ধতিতে থেকে যেতে চাইবে, ক্ষতি তাদেরই। আর সেই অদক্ষ বন্দরের উপরে নির্ভরশীল শিল্পসংস্থাকে দূরের বন্দর থেকে মাল আনতে বাড়তি খরচ বইতে হবে।
হলদিয়ার বন্দরের ক্ষেত্রেও এখন সেই দক্ষতার প্রশ্নই উঠেছে। এবং তা নিয়েই শঙ্কিত বেঙ্গল চেম্বার। জন্মলগ্ন থেকে কলকাতা বন্দরের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বণিকসভাটির প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্ত হলদিয়া বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর দাবি, হলদিয়া বন্দরের কর্মদক্ষতা কমে গেলে শুধু এ রাজ্যই নয়, সমস্যায় পড়বে সংলগ্ন রাজ্যগুলিও। তাই বিতর্ক মেটাতে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের পাশাপাশি প্রয়োজনে চেম্বারের বিশেষ ‘সেল’ সাহায্যের হাত এগিয়ে দিতে পারে বলেও জানিয়েছেন কল্লোলবাবু।
হলদিয়ার ঘটনাটিকে শুধুমাত্র শ্রম-বিরোধী বলে চিহ্নিত করতে রাজি নয় শিল্পমহল। বরং এর পিছনে রাজনীতির ছায়া দেখছেন তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, রাজনীতির বাধ্যবাধকতার ফলে বাড়তি কর্মীর চাপে যদি সংস্থার কর্মদক্ষতাই কমে যায়, তা হলে কার লাভ? তবে ইচ্ছেমতো কর্মী ছাঁটাই ঠেকাতে প্রয়োজনে শ্রম-আইন সংশোধনের দাবিও তুলেছে শিল্পমহল।
এ দিন বেঙ্গল চেম্বারের সভায় জওহরলাল নেহরু পোর্ট ট্রাস্টের (জেএনপিটি) চেয়ারম্যান এল রাধাকৃষ্ণন, যোজনা কমিশনের উপদেষ্টা (পরিবহণ) মনোজ সিংহ প্রমুখ উপস্থিত থাকলেও হলদিয়া নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু দক্ষতা বাড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্বের কথা স্পষ্টই জানিয়েছেন তাঁরা। রাধাকৃষ্ণনের মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্দরেও প্রযুক্তির পরিবর্তন জরুরি। মনোজ সিংহ বলেন, “পণ্য পরিবহণে অনেকেই (সংস্থা) আধুনিক যন্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও কোথাও কোথাও তাদের তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহার করতে গিয়ে কর্মী ছাঁটাই করলে কি অসন্তোষ তৈরি হবে না? এ কথা মেনেও রাধাকৃষ্ণনের বক্তব্য, প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি। পুরনো বন্দরগুলির ক্ষেত্রে সেই বদল সহজ না হলেও সমাধানসূত্র বের করতেই হবে। তা করতে হবে সুষ্ঠু পরিচালন ব্যবস্থার মাধ্যমে। বেঙ্গল চেম্বারের সেক্রেটারি জেনারেল পি রায় মনে করেন, সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তিই বিকল্প সূত্র হতে পারে। তাঁর মতে, প্রযুক্তির হাত ধরে উন্নয়ন ঘটবে। তা কর্মসংস্থান বাড়াবে। ফলে উদ্বৃত্ত কর্মীরাও চাকরির সুযোগ পাবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.