|
|
|
|
আগুনের গ্রাসে খনিকর্মীর ভাগ্য, কাঠগড়ায় ইসিএল |
নীলোৎপল রায়চৌধুরী • পাণ্ডবেশ্বর |
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আগুল লাগার পরে ৪৮ ঘণ্টা পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহির খনিতে কাজ বন্ধ রাখল ইসিএল। বৃহস্পতিবার ভোরে খোট্টাডিহির ১ নম্বর চানকের একাংশে আগুন লাগে। ইসিএল জানায়, জায়গাটি ঘিরে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সারা দিন কাজ বন্ধ রাখার পরে শুক্রবারও খনিকর্মীদের কাজে নামতে দেওয়া হয়নি। এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ মাইনস সেফটি (ডিজিএমএস) এবং সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর মাইনিং অ্যান্ড ফুয়েল রিসার্চের (সিআইএমএফআর) প্রতিনিধিরা।
ইসিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, কয়লা ক্রমাগত অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে উত্তপ্ত হওয়ার জেরেই আগুন লেগেছে। খনির পরিভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় ‘স্পনটেনিয়াস হিটিং’। আসানসোল-দুর্গাপুর খনি এলাকায় গত কয়েক বছরে এমন ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েক বার। বারবার এমন ঘটনায় খনির সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নানা মহল। খোট্টাডিহির ঘটনার পরে সরব হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগলিও। |
|
রোজই ডুলি ওঁদের নিয়ে যায় ঝুঁকির গর্তে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ। |
খননের পরে ফেলা রাখা কয়লায় ‘স্পনটেনিয়াস হিটিং’-এর জেরে ২০১০ সালে আগুন লাগে জামুড়িয়ার কুনস্তরিয়ার খনিতে। নাইট্রোজেন ফোম দিয়ে নেভানোর চেষ্টা হলেও দীর্ঘ দিন আগুন জ্বলেছে সেখানে। প্রায় দু’বছর কাজ বন্ধ থাকে সেখানে। গত জুনে বেলবাঁধ প্যাচেও এমন ঘটনা ঘটে। অন্ডাল-পাণ্ডবেশ্বরের এআইটিইউসি নেতা প্রভাত রায়ের দাবি, কয়লা কাটার পরে ফেলা রাখা হলে তাতে নিয়মিত জল ছেটানো ও রাসায়নিক প্রয়োগ করা উচিত। তা না হলে ‘স্পনটেনিয়াস হিটিং’-এর সম্ভাবনা থেকে যায়। প্রভাতবাবুর অভিযোগ, “প্রতি বছর সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য ইসিএল বহু কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু কোনও ফল হয় না। অন্ডালের জামবাদ খোলামুখ খনিতে কয়লা কাটার জন্য বিস্ফোরণ ঘটাতে গিয়ে দিন দুয়েক আগেই জল জমে গিয়েছে। খোলামুখ খনির নীচে থাকা ভূগর্ভস্থ খনিতে জল ছিল। বিস্ফোরণের জেরে তা উঠে আসতে পারে, এ কথা কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখেননি। এর জেরে সংলগ্ন সিএল জামবাদ ও পরাশকোল ভূগর্ভস্থ খনির ক্ষতি হবে। এ ভাবেই কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় খনি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।”
আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেসের নেতা নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর আবার দাবি, তাঁরা সমীক্ষা করে দেখেছেন, বাঁকোলা, কেন্দা, কাজোড়া, পাণ্ডবেশ্বর এরিয়ার খনিগুলিতে বিপদকালীন অবস্থায় বেরিয়ে আসার রাস্তা রাস্তা জলে ভরে রয়েছে। মাস তিনেক আগে পাণ্ডবেশ্বর এরিয়ার সাউথ শ্যামলা কোলিয়ারিতে প্রধান ডুলিটি বিকল হয়ে পড়ে। আপৎকালীন ডুলি চালাতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ দিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটিও বিকল। এর জেরে একুশ জন শ্রমিককে প্রায় ১২ ঘণ্টা ভূগর্ভে আটকে থাকতে হয়। অথচ দ্বিতীয় ডুলিটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাষ্প তৈরি করতে খাতায়-কলমে প্রতি দিন কয়েক টন কয়লা বরাদ্দ হয়েছে।
সিটু নেতা মনোজ দত্তের দাবি, কুনস্তরিয়ায় আগুন লাগার পনেরো দিন আগে থেকে এক ওভারম্যান খনি কর্তৃপক্ষকে বারবার ওই কয়লা তুলে নেওয়ার জন্য জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা করেননি। মনোজবাবুর কথায়, “এই গাফিলতির জেরে কয়েকশো কোটি টাকার উচ্চ মানের কয়লা নষ্ট হয়ে গেল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমন ঘটছে।”
ইসিএল কর্তৃপক্ষ অবশ্য সুরক্ষার ব্যাপারে গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রিবাবু বলেন, “আশিটির বেশি কোলিয়ারির দু’এক জায়গায় এমন ঘটনা ঘটেছে। যান্ত্রিক কারণে তা ঘটতেই পারে।” খোট্টাডিহির ঘটনা সম্পর্কে তাঁর দাবি, “খননের পরে ফেলে রাখার জন্য নয়, কয়লার স্তম্ভ উত্তপ্ত হয়ে এমন ঘটেছে। তবে ওই স্তম্ভটি কেটে নিয়ে জায়গা ভরাট করে দেওয়া উচিত ছিল।” এআইটিইউসি নেতা প্রভাতবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “নীলাদ্রিবাবুর কথায় পরিষ্কার, গাফিলতির জেরে এমন ঘটেছে।” |
|
|
|
|
|