অবশেষে অনাবাসী শিল্পপতির প্রস্তাবমতো ডায়ালিসিস যন্ত্র নিতে রাজি হল স্বাস্থ্য দফতর। বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর থেকে জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে চিঠি পাঠিয়ে অনাবাসী শিল্পপতি অলক বসু জলপাইগুড়ি হাসপাতালের জন্য যে তিনটি ডায়ালিসিস যন্ত্র নিখরচায় দিতে চেয়েছিলেন সেগুলি গ্রহণের
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তার আগে নিয়ম মতো সরকারি ভাবে যাবতীয় খোঁজখবর নেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে।
জলপাইগুড়ির ভূমিপুত্র শিল্পপতি অলকবাবুর এক আত্মীয়া ডায়ালিসিসের প্রয়োজনে জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তার সুযোগ না থাকায় তাঁকে অন্যত্র নিয়ে যেতে হয়। তাই অলকবাবু গত বছরের জুলাই মাসে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে একটি ডায়ালিসিস যন্ত্র দান করতে চেয়ে প্রস্তাব দেন। দুঃস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য তিনি জেলা হাসপাতালেই যন্ত্র দান করতে চান। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি জানতে পারেন একটি নয়, অন্তত তিনটি যন্ত্র পেলে তবেই একটি ইউনিট শুরু করা যায়। সেই মতো তিনি ৩টি ডায়ালিসিস যন্ত্র নিখরচায় এবং সারাজীবনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেন। প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার তিনটি যন্ত্রের সঙ্গে আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকার একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেওয়ার প্রস্তাবও লিখিতভাবে জানান তিনি। জেলার মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে প্রস্তাবও পাঠান তিনি। প্রায় বছর খানেক পরে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্য দফতর থেকে লিখিত ভাবে অলকবাবুকে জানানো হয়, তারা এই দান নিতে পারবেন না। নিজেরাই ডায়ালাসিস ইউনিট চালাবেন। রাজ্য জুড়ে যখন পিপিপি মডেলে স্বাস্থ্য পরিষেবা বৃদ্ধি করার কাজ শুরু হয়েছে, নতুন রাজ্য সরকার কেন অব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে দান প্রত্যাখান করল তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন অলকবাবু। সেপ্টেম্বরে আনন্দবাজার পত্রিকায় এই সংবাদ প্রকাশের পরে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অলকবাবুর ডায়ালাসিস যন্ত্র নিয়ে গরিব রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে। এর পরেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর।
বুধবার জলপাইগুড়ি জেলার মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “আজই স্বাস্থ্য দফতর থেকে চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে আশালতা বসু বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অলক বসু যে ডায়ালিসিস যন্ত্র জেলা হাসপাতালে দিতে চেয়েছিলেন, সেটি গ্রহণ করা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে। দান গ্রহণের আগে সরকারি ভাবে কিছু তথ্য যাচাই করে নিতে হবে। অলকবাবুর কাছে প্রথমে প্রস্তাব পেয়ে আমরা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে তা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।” দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি ক্ষেত্রে দান গ্রহণের প্রথামাফিক দাতার বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি মামলা রয়েছে কি না তা দেখা হবে।
অনাবাসী শিল্পপতির দান নিতে এত টালবাহানা করা হল কেন? জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, তাঁরা শিল্পপতির প্রস্তাব রাজ্যকে পাঠানোর পরে তা সেখান থেকে অজানা কারণে প্রত্যাখ্যাত হয়। পরে এক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্য দফতর দান নিতে রাজি হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের ওই সূত্র জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের চিঠির প্রতিলিপি অলকবাবুকেও পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি এখন কাতারের দোহাতে রয়েছেন। অলকবাবুর জলপাইগুড়ির প্রতিনিধি শ্যামল তলাপাত্র বলেন, “এখনও কোনও সরকারি কাগজ হাতে পাইনি। তবে অলক বসুকে এই খবর জানাব।” |