বিপিএল তালিকায় যাঁদের নাম ওঠেনি, এ রকম অনেকেই রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আসছেন। সৌজন্যে, একশো দিন কাজের প্রকল্প।
বিপিএল তালিকার গরমিল নিয়ে বিতণ্ডা সর্বজনবিদিত। এ রকম অনেকেই আছেন, যাঁদের ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা। অথচ বিপিএল তালিকায় নাম ওঠেনি। প্রশাসনের চোখে তাঁরা ‘এপিএল’ অর্থাৎ দারিদ্র্যসীমার উপরে। এমনিতে কোনও রকমে টেনেটুনে তাঁদের সংসার চলে। কিন্তু বাড়ির কারও রোগবালাই হলেই তাঁদের ঘুম উড়ে যায়।
এ হেন লোকেদের কথা মাথায় রেখেই রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার পরিসর বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান দফতর নতুন নির্দেশিকায় জানিয়েছে, এপিএল তালিকায় থেকেও কেউ যদি বছরে ১৫ দিন একশো দিন প্রকল্পে কাজ করেন, তাঁর পরিবারও ওই বিমার আওতায় চলে আসবে। ইতিমধ্যেই বর্ধমান জেলার ২ লক্ষ ২৯ হাজার এ রকম পরিবারকে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জানান, সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ পরিবার ওই যোজনার আওতায় চিকিৎসার সুযোগ পাবে।
অসুস্থতার ক্ষেত্রে বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ২০০৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে ‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা’ নামে সরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প চালু করেছিল শ্রমমন্ত্রক। এর আওতায় থাকা পরিবারের ৫ জন পর্যন্ত সদস্য এককালীন ৩০ হাজার টাকা অবধি চিকিৎসার খরচ পেতে পারেন। প্রকল্পে নথিভুক্তির খরচ পরিবার পিছু ৩০ টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার বিমার কিস্তির ৭৫ শতাংশ (উত্তর-পূর্বের ৭টি রাজ্য এবং জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ) দেয়। রাজ্য দেয় বাকিটা।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নাম নথিভুক্ত হলে পরিবারটিকে একটি ‘স্মার্ট কার্ড’ দেওয়া হয়। তা দেখিয়ে বিধিবদ্ধ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ মেলে। বর্ধমান জেলায় সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৬৪টি হাসপাতালে এই বিমার আওতায় চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলার প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার এই স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেছে। ইতিমধ্যে ২৬ হাজারেরও বেশি মানুষ এই বিমার মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়েছেন। সেই বাবদ এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
বিপিএল তালিকায় কে আসবে তা ঠিক করতে কেন্দ্র কয়েকটি সূচক বেঁধে দিয়েছে। যেমন পাকা বা কাঁচা বাড়ি আছে কি না, শৌচাগার আছে কিনা, জামাকাপড় ক’টা, খাদ্য নিরাপত্তা, ক্রয়ক্ষমতা, সাক্ষরতা, পরিবারের সদস্যদের কর্মক্ষমতা, বাড়ির শিশুদের পড়াশোনা ইত্যাদি বিষয়ে সমীক্ষা চালিয়ে নম্বর দেওয়া হয়। মোট নম্বর ৫২। এর মধ্যে ১৫ নম্বরের বেশি পেলে সেই পরিবার বিপিএল তালিকায় আসে না। কম পেলে তবেই তালিকায় ঠাঁই মেলে।
কিন্তু সমস্যা হল, বিপিএল তালিকা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। প্রথমত, সূচকভিত্তিক এই পদ্ধতি নিয়ে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক বা অ্যন্য কোনও রকম প্রভাব খাটিয়ে অন্যায্য ভাবে তালিকায় নাম তোলার অভিযোগও রয়েছে ভুরি-ভুরি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রায়ই দেখা যায় যে আর্থিক দিক থেকে স্বয়ম্ভর পরিবার তালিকায় আছে, অথচ তাদের পাশেই থাকা দুঃস্থ পরিবারের ঠাঁই হয়নি। তালিকায় ঢুকতে না পারায় বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিতই রয়ে যায়। এ কারণে স্বাস্থ্যবিমা থেকেও বঞ্চিতই ছিল হাজার হাজার পরিবার। অসন্তোষও ছিল। একশো দিন প্রকল্পের হাত ধরে বিমার সুযোগ পাওয়া তাদের কাছে নতুন সুযোগ খুলে দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, বিপিএল তালিকায় নাম থাক বা না থাক, একশো দিনের প্রকল্পে সাধারণত যাঁরা কাজ করেন তাঁদের পরিবার আর্থিক ভাবে তত পোক্ত নয়। কাজেই নতুন সিদ্ধান্তে প্রথমত বিপুল সংখ্যক তেমন মানুষ সরকারি স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের আওতায় এলেন। দ্বিতীয়ত, একশো দিনের কাজ প্রকল্পেও নতুন উৎসাহের সঞ্চার করবে এই সিদ্ধান্ত। বর্ধমানের জেলাশাসকের মতে, “একশো দিন প্রকল্পে কাজ করা মানুষজনের জন্য এটা পুরস্কারস্বরূপ।” আগামী দু’মাসের মধ্যে নতুন পরিবারগুলির হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলেও তিনি দাবি করেছেন। |