স্কুলগাড়ির পারমিট নিয়ে পুলিশ ও গাড়িমালিকের টানাপোড়েনে বিভ্রান্ত অভিভাবকেরা। সম্প্রতি পারমিটহীন স্কুলগাড়ি নিয়ে পুলিশের নির্দেশ ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বিভিন্ন স্কুলেও।
কী সেই নির্দেশ?
পুলিশ সূত্রের খবর, স্কুলগাড়ি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট ‘গাইডলাইন’ থাকলেও কলকাতা ও শহরতলির অধিকাংশ স্কুলগাড়িই তা মানে না। তাই সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নিয়মগুলি জানিয়ে বিভিন্ন স্কুলগাড়ির মালিক ও স্কুলকে নির্দেশিকা পাঠায় লালবাজারের ট্রাফিক দফতর। পারমিট ছাড়া স্কুলগাড়ি চালানো যাবে না, এ কথা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা আছে। পুলিশের নির্দেশে চালক ও গাড়ির নিরাপত্তার বিষয়ে বিধিনিষেধ, গাড়ির রং ও লোগোরও উল্লেখ রয়েছে নির্দেশিকায়।
পুলিশের একাংশের দাবি, এ শহরের অধিকাংশ স্কুলগাড়িই পারমিট ছাড়া চলছে। তাই ব্যবস্থা নিলে স্কুলে যাওয়ার গাড়ি মিলবে না, এমনটাই আশঙ্কা অভিভাবকদের। শহর ও শহরতলি এলাকার প্রায় ৩০ হাজার পড়ুয়া স্কুলগাড়িতে যাতায়াত করে। দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবক পারমিতা সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা কিছুটা আতঙ্কিত। রাস্তায় পুলিশ গাড়ি আটক করলে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরই ভোগান্তি হবে। সরকারি যদি এ বিষয়ে একটু গুরুত্ব দিয়ে চিন্তাভাবনা করে তো ভাল হয়।” |
হাওড়ার বাসিন্দা পৃথা ঘোষের মেয়ে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলগাড়িতেই যাতায়াত করে। পুলিশি তল্লাশির বিষয়ে আতঙ্কিত পৃথাদেবী বলেন, ‘‘এতটা দূরে যায়। রাস্তায় পুলিশ গাড়ি আটক করে থানায় নিয়ে গেলে বড় বিপদ হবে। মেয়ে তো ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করবে।”
দক্ষিণ কলকাতার কয়েকটি স্কুলের কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা বলেন, “এখন স্কুলগাড়ি ছাড়া পড়ুয়ারা যাতায়াতই করতে পারবে না। পারমিটের বিষয়ে পুলিশ ও রাজ্য সরকারের গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।”
কেন পারমিট ছাড়াই স্কুলগাড়ি চলছে, তার উত্তরে রাজ্য সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছেন স্কুলগাড়ি সংগঠনের নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, পরিবহণ দফতরের নানা টাল-বাহানার কারণেই পারমিট পাওয়া যাচ্ছে না। বাম আমলে কয়েকটি গাড়ির পারমিট মিলেছিল। তার পরে বর্তমান সরকার স্কুলগাড়ির পারমিটের বিষয়ে কোনও আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
স্কুলগাড়ি মালিক ও কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, প্রায় ৩,৫০০ স্কুলগাড়ি শহর ও শহরতলিতে চলাচল করে। পারমিট আছে মাত্র দেড় হাজারের। আরও হাজার দেড়েক গাড়ির পারমিটের আবেদন জমা রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে এই আবেদনপত্র জমা পড়লেও এখনও তার অনুমতি মেলেনি।
পুলকার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আবীর রায় বলেন, “গত দেড় বছরে পরিবহণ দফতরকে আমাদের সংগঠনের তরফে প্রায় পাঁচটি চিঠি দিয়ে পারমিটের বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিন্তু এ নিয়ে কোনও আলোচনাই করছে না পরিবহণ দফতর।” যদিও স্কুলগাড়ির সংগঠনের বক্তব্য অস্বীকার করেছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। পরিবহণ দফতর স্কুলগাড়ি সংগঠনগুলিকে আলোচনায় ডেকেছিল। কেউ আসেননি। মালিকদের বাড়ি গিয়ে তো পারমিট দেওয়া হবে না।” মদনবাবুর দাবি, “দফতরে এসে সরাসরি যোগাযোগ করলে পারমিটের সমস্যা মিটতে বাধ্য। সরকার পারমিটবিহীন গাড়ি চলতে দেবে না।”
নির্দেশিকা জারির পরে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। সম্প্রতি গড়িয়াহাট থানা নম্বরপ্লেটহীন দু’টি স্কুলগাড়ি আটক করে। তদন্তকারীরা জানান, পারমিট দূর অস্ৎ, ওই গাড়িটির রেজিস্ট্রেশনই নেই। তল্লাশি অভিযানের বিষয়ে ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের ‘গাইডলাইন’ অনুযায়ী নির্দেশিকা স্কুলগুলিতে গিয়েছে। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এই মুহূর্তে লাগাতার তল্লাশি অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত হয়নি। ওই নির্দেশিকার মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের সজাগ করা হয়েছে মাত্র।” |