দলে কট্টর মমতা-বিরোধীদের প্রচারের সামনে আনছে প্রদেশ কংগ্রেস।
রাজ্য থেকে অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সিকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোক্ষম চাল দিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। এ বার টিভিতে রাজ্য সরকারের সমালোচনার দুই মুখ নির্বেদ রায় এবং অরুণাভ ঘোষকে সংগঠনের দায়িত্বে এনে দলকে উজ্জীবিত করতে চাইছে রাজ্য কংগ্রেস।
খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই) নিয়ে বিরোধিতার জেরে যে ভাবে মমতা জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। মমতা-বিরোধিতার সুর চড়াতে ইতিমধ্যেই প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে নির্দেশও দিয়েছে দিল্লি। সেই সূত্রেই এ বার পাঁচ সদস্যের এফডিআই প্রচার কমিটি গড়ে রাজ্য কংগ্রেস সাংগঠনিক স্তরেও কট্টর মমতা-বিরোধীদের অন্তর্ভুক্ত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। সেই কমিটিরই চেয়ারম্যান করা হচ্ছে নির্বেদবাবুকে। ওই কমিটির অন্যতম সদস্য করা হয়েছে অরুণাভবাবুকে।
টেলিভিশনের সান্ধ্য বিতর্কে নিয়মিত হাজিরা দিলেও দলের কার্যালয় বা সংগঠনের কাজে প্রায় গরহাজির নির্বেদ-অরুণাভকে নিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে। ক্ষোভ মিটিয়ে যাতে তাঁরা দলের অভ্যন্তরেও সময় বেশি দেন, তাঁদের বক্তব্য দলের কর্মী, সাধারণ মানুষের কাছে বেশি পৌঁছয়, সেজন্যই এফডিআই কমিটি গড়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। সুবক্তা ওই দুই নেতার গ্রহণযোগ্যতার কথা উল্লেখ করে প্রদীপবাবু বলেন, “টিভিতে ওঁরা যে ভাবে যুক্তি দিয়ে রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করেন, দর্শকদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। তাকে কাজে লাগিয়ে দলের কর্মী এবং জেলায় জেলায় ওঁদের বক্তব্য নিয়ে যেতে চাই।”
অথচ তৃণমূলের জন্ম থেকেই মমতার সঙ্গী ছিলেন নির্বেদ-অরুণাভ। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তৃণমূলের বিধায়কও ছিলেন ওই দু’জন। তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে মত পার্থক্যের জেরে তৃণমূল ছেড়ে ফের কংগ্রেসে ফেরেন নির্বেদ-অরুণাভ। দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের সভাপতিও হন নির্বেদ। সাধারণ সম্পাদকের পদ নিতে অস্বীকার করেন অরুণাভ। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি-ঘনিষ্ঠ নির্বেদ-অরুণাভ কংগ্রেসে ফিরলেও, দলের কাজে তাঁরা সক্রিয় ছিলেন না।
কেন দলে বেশি সময় দেন না, ব্যাখ্যা করে পেশায় আইনজীবী অরুণাভবাবু বলেন, “কংগ্রেসে সে ভাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব কোনওদিনই পাইনি। আলাদা পেশা ছেড়ে রাজনীতিতে পুরো সময় দেওয়া সম্ভব নয়। তা-ও এখন প্রদীপবাবু যে দায়িত্ব দিচ্ছেন, যথাসম্ভব চেষ্টা করব পালন করতে।” লেখালেখি-প্রকাশনার দায়িত্ব সামলে দলীয় অফিসে নিয়মিত হাজিরা দেওয়া যে তাঁর পক্ষেও অসম্ভব, তা স্বীকার করে নির্বেদবাবু বলেন, “লেখালেখি, প্রকাশনার কাজে অনেকটা সময় চলে যায়। সেই কাজ ছেড়ে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে গিয়ে গল্প করে সময় কাটানো সম্ভব নয়। তবে এফডিআই এলে কী সুবিধা হবে, তা স্পষ্টভাবে বোঝানোর কাজটা অবশ্যই জেলায় জেলায় ঘুরে করব।” আজ, বৃহস্পতিবার নির্বেদ-অরুণাভকে সংগঠনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব দেওয়ার কথা। দায়িত্ব পেয়ে কমিটি সদস্য ও প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি ঠিক করবেন বলে নির্বেদবাবু জানিয়েছেন। |