এক দিকে অন্ধকার ঘনাচ্ছে শিল্প-শহর হলদিয়ায়। অন্য দিকে আলোকবৃত্তে ফিরছে শেঠ-সাম্রাজ্য!
নন্দীগ্রাম-বিতর্কের ধাক্কায় চলতি বছরের গোড়ায় রাজ্য সম্মেলনে সিপিএমের রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়েছিলেন হলদিয়ার দাপুটে নেতা লক্ষ্মণ শেঠ। দলের ভাবমূর্তির প্রশ্নে আপস করতে চান না বলে রাজ্য কমিটিতে লক্ষ্মণের অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তার পরে হলদি নদীতে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করে হলদিয়া পুরসভা দখলে রেখেছে বামেরা। সেই জয়েরই যিনি কাণ্ডারী ছিলেন, লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকা পণ্ডা শেঠকে রাজ্য কমিটিতে এনে এ বার দলের অন্দরে স্বীকৃতি দিতে চাইছে আলিমুদ্দিন। হলদিয়া বন্দর ঘিরে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই তৎপরতাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে সিপিএমের অন্দরের রাজনীতিতে।
আগামী সপ্তাহে ৬-৭ নভেম্বর আলিমুদ্দিনে বসছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। যেখানে উপস্থিত থাকার কথা দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের। রাজ্য কমিটিতে এখন সাতটি জায়গা খালি রয়েছে। তার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জন্য বরাদ্দ একটি আসন। ওই জায়গাতেই হলদিয়া পুরসভার চেয়ারপার্সনকে নিয়ে আসার কথা ভাবা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে এক প্রস্ত আলোচনা হয়েছে। তমলুকের প্রাক্তন সাংসদের ভাবমূর্তি নিয়ে যতই অস্বস্তি থাকুক দলে, পূর্ব মেদিনীপুরে সংগঠন যে মূলত তাঁর উপরেই নির্ভরশীল এই সত্য আলিমুদ্দিনের অজানা নয়। চতুর্দিকে দলের লাগাতার নির্বাচনী ভরাডুবির মধ্যে হলদিয়ায় দুর্গ রক্ষা করতে পারার স্বীকৃতি হিসাবে তমালিকাকে রাজ্য কমিটিতে জায়গা করে দেওয়ার পক্ষপাতী সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একটি বড় অংশই। দলের একাংশ আবার পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি নিরঞ্জন সিহিকে তুলে আনতে চায়। তবে এখনও পর্যন্ত পাল্লা ভারী লক্ষ্মণ-জায়ার দিকেই।
সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আলোচনায় তমালিকার নামে আপত্তি জানাননি বুদ্ধবাবু। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যায়, তমলুকের প্রাক্তন সাংসদের স্ত্রীকে রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই দিতে পারলে এক সঙ্গে বেশ কিছু উদ্দেশ্য পূরণ হবে। হলদিয়া-জয়ের স্বীকৃতির পাশাপাশি কমিটিতে মহিলা মুখ বাড়বে। সরাসরি লক্ষ্মণকে ফিরিয়ে নেওয়ার অস্বস্তি হজম করতে হবে না, আবার তাঁর ঘরের লোককেই নেওয়া হবে। নন্দীগ্রাম সংক্রান্ত মামলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে লক্ষ্মণকে জেলে যেতে হয়েছিল। নন্দীগ্রামের দায় তাঁর ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়ে দল তাঁর পাশে পূর্ণ সমর্থন নিয়ে দাঁড়ায়নি, এই মর্মে কিঞ্চিৎ অভিমান তৈরি হয়েছিল লক্ষ্মণের ঘনিষ্ঠ-মহলে। তমালিকার অন্তর্ভুক্তি সেই ক্ষোভেও খানিকটা উপশমের কাজ করতে পারে। রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কিছু জোনাল কমিটির দায়িত্ব এখন লক্ষ্মণবাবুর কাছের নেতাদের হাতেই রয়েছে। সংগঠনে যাতে ভারসাম্য বজায় থাকে, তা দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
মামলায় অভিযুক্ত লক্ষ্মণ গত ফেব্রুয়ারিতে দলের রাজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে পারেননি। এখন জামিনে মুক্ত হয়ে নিজের জেলায় তাঁর যাওয়া বারণ। তবে সিটু নেতা হিসাবে আগামী সপ্তাহে হাওড়ায় শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনে তিনি যোগ দিতে পারেন বলেই দলীয় সূত্রের খবর। প্রসঙ্গত, ওই সম্মেলন থেকেই সিটুর রাজ্য নেতৃত্বে কিছু রদবদল হতে পারে। বয়সজনিত কারণে কালী ঘোষ সিটুর রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন। আলিমুদ্দিনের সঙ্গে সিটুর সেতু হিসাবে শ্যামল চক্রবর্তীকে রেখেই কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন এক সদস্যকে রাজ্য সংগঠনের দুই শীর্ষ পদের কোনও একটিতে আনতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ। |