বন্ধ হল না সম্প্রচার, আরও তিন সপ্তাহ সেট টপ ছাড়াই চলবে টিভি
ময়সীমা ছিল ৩১ অক্টোবর মাঝরাত। তার পরেও অবশ্য সেট টপ বক্স ছাড়াই টিভি চলল কলকাতায়। আরও তিন সপ্তাহ এই সুযোগ পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস দিল এমএসও-রা।
বুধবার রাত বারোটার পর থেকেই দেশের বাকি তিন মেট্রো শহরের মতো কলকাতা মেট্রো এলাকাতেও সেট-টপ বক্সহীন টিভিতে সম্প্রচার সম্পূর্ণ বন্ধ করার নির্দেশ জারি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই নির্দেশ কতটা মানা হচ্ছে তা দেখতে এ দিন সকালে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের হয়ে ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্টস ইন্ডিয়া লিমিটেড (বেসিল) সংস্থার ৮ জন অফিসার কলকাতায় পৌঁছে যান। শহরের ছোট বড় মিলিয়ে ৬টি এমএসও-র সম্প্রচার দফতরে ‘ডিজিটাইজেশন’ প্রক্রিয়ার কাজ কী ভাবে হচ্ছে, তা জরিপ করেন প্রতিনিধিরা। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ এমএসও-দের দফতরে আবার যাওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের। কিন্তু এমএসও এবং অপারেটরদের দুটি বৈঠকের ফলাফল জেনে এবং দিল্লিতে তাঁদের সদর দফতর থেকে শুধু রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ শুনে এমএসও-দের দফতরে দ্বিতীয় বার পরিদর্শনের আর প্রয়োজন হয়নি।
বুধবার বিকেলে কেব্ল অপারেটরদের সংগঠন ‘কেব্ল অপারেটর্স ডিজিটাইজেশন কমিটি’ এবং এমএসও-গুলি নিজেরা আলাদা ভাবে বৈঠক করে। সেই সময়ে গোটা কেব্ল পরিষেবাই বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন অপারেটটরা। তাঁদের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মৃণাল চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “এখন শুধু কলকাতা মেট্রো এলাকায় কেব্ল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৪২ লক্ষ। এর মধ্যে ১৬ লক্ষ গ্রাহককে ওই সেট-টপ বক্স সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি গ্রাহকদের আমরাই দিতে পারিনি। সে ক্ষেত্রে ওই সব গ্রাহকদের বঞ্চিত করে অন্যদের পরিষেবা দিতে গেলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। তাই আমরা ওই পরিষেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছি।”
তবে শেষ পর্যন্ত আর কেব্ল অপারেটরদের পরিষেবা বন্ধের হুমকি কার্যকর করতে হয়নি। কারণ, এমএসও-দের বৈঠকেই সাময়িক বন্দোবস্ত হিসেবেই আরও তিন সপ্তাহ পুরনো ব্যবস্থা চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। এমএসও-গুলির তরফে এক মুখপাত্র বলেন, “টিভি কোম্পানিগুলির কাছ থেকে অ্যানালগের জন্য আলাদা ডিকোডার আনতে হবে। টিভি কোম্পানিগুলোকেও তো এখানে ব্যবসা করে খেতে হবে। তাই তারাও এই বাড়তি সময় নিয়ে প্রতিবাদ করছে না।”
তবে ‘ডিজিটাইজেশনের’ সিদ্ধান্ত থেকে কেন্দ্রীয় সরকার আর পিছু হঠতে চায় না, তা এ দিনও সরকারি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়। কেন্দ্রের এক সূত্রের কথায়, “কলকাতার পরিস্থিতির উপর দিল্লি নজর রাখছে।”
তথ্য মন্ত্রকের আরও বক্তব্য, তৃণমূল যদি গরিব মানুষকে টিভি দেখানোর জন্য এতটাই আগ্রহী হয়, তবে রাজ্য সরকার সেট-টপ বক্স কেনার জন্য ভর্তুকি দিক। বেসিল-এর জেনারেল ম্যানেজার আর এন স্বামী বলেন, “ডিজিটাইজেশন একটা আইন। সেটা না-মানা মানে নৈরাজ্য (অ্যানার্কি) সৃষ্টি করা। একটা রাজ্যের নির্বাচিত সরকার এ কাজ করছে কোন যুক্তিতে। অন্য কোনও রাজ্যে তো আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।”
এ দিন মহাকরণে অবশ্য নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, তাঁরা ডিজিটাল সেট-টপ বক্সের বিরুদ্ধে নন। তিনি বলেন, “আমরা শুধু বলেছি সাধারণ মানুষের উপরে আচমকা জোর করে আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।” সরকারের পক্ষ থেকে এমএসও এবং অপারেটরদের অল্প কিস্তিতে সেট-টপ বক্স সরবরাহ করতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
মহাকরণে মন্ত্রী আমলাদের ঘর মিলিয়ে প্রায় ৮৫-৯০টি টিভি সেটের কোনওটিতেই সেট-টপ বক্স নেই।
নেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরেও। রাত থেকে পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের টিভিটি যাতে চালু রাখা যায় তার জন্য একটি সেট-টপ বক্স জোগাড় করে রাখা ছিল। তবে এ দিন সন্ধ্যায় মহাকরণ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার টিভিতেও তো সেট-টপ বক্স নেই। বন্ধ করে দিলে দেবে। কিন্তু বন্ধ করে দেখুক না। কোথাকার জল কোথায় গড়ায় দেখিয়ে দেব।”
যে-কেব্ল অপারেটর দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মহাকরণে পরিষেবা দিয়ে আসছেন, তাঁকেও কিন্তু এত দিন টাকাই দেওয়া হয়নি। এই খবর জানতে পেরে তড়িঘড়ি তথ্য দফতর তৃণমূল সরকারের দেড় বছরের টাকা হিসেব করে প্রায় এক লক্ষ টাকা দিতে অনুরোধ করে অর্থ দফতরের কাছে এ দিনই ফাইল পাঠায়। অর্থ দফতর অবশ্য তা মঞ্জুরও করে দেয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.