রাস্তা থেকে কোথাও পিচ উঠে গিয়েছে। কোথাও আবার পিচ, বোল্ডার নেই। রাস্তায় ও রাস্তার পাশে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া-খাতড়া, খাতড়া-রাইপুর, খাতড়া-সারেঙ্গা ও খাতড়া-সিমলাপাল রাস্তার এমনই বেহাল দশা।
রাস্তার এই বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। খানাখন্দে ভরা ওই চারটি রাস্তার অবিলম্বে পূর্ণ সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। বাঁকুড়া থেকে খাতড়া পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাটি রাজ্য পূর্ত দফতর (সড়ক) এর অধীনস্থ। স্থানীয় সূত্রের খবর, বাঁকুড়া শহরের কেরানিবাঁধ থেকে ওই রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। ইঁদপুর, বাংলা, বহড়ামুড়ি, হাতিরামপুর, সুপুর, খাতড়া এলাকায় রাস্তা প্রায় ভেঙেচুরে গিয়েছে।
খাতড়া থেকে রাইপুর, সারেঙ্গা ও সিমলাপাল যাওয়ার তিনটি রাস্তার দেখভালের দায়িত্ব রাজ্য পূর্ত দফতরের। খাতড়া থেকে রাইপুর পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিমি রাস্তার অবস্থা শোচনীয়। রানিবাঁধের আকখুটা থেকে হলুদকানালি পর্যন্ত রাস্তার অর্ধেক অংশে পিচ নেই বললেই চলে। খাতড়া থেকে কাঁকড়াদাঁড়া, গোপালপুর হয়ে সারেঙ্গা যাওয়ার রাস্তাতেও বর্তমানে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। একই অবস্থা খাতড়া-সিমলাপাল রাস্তার। দহলা, কাশীপুর, লক্ষীসাগর এলাকায় রাস্তার কিছু জায়গা প্রায় ছোটখাটো ডোবায় পরিণত হয়েছে। এই চারটি রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বাস, ট্রাক-সহ প্রায় হাজার খানেক ছোট-বড় গাড়ি যাতায়াত করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাগুলি সংস্কার করা হচ্ছে না। গর্তগুলিও সাময়িক ভাবে মোরাম-পাথর কুচি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে না। |
রাইপুরে দেবব্রত দাসের তোলা ছবি। |
ফলে ওই রাস্তা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। রাস্তা সংস্কারে প্রশাসনেরও হুঁশ নেই বলে তাঁদের অভিযোগ।
খাতড়া শহরের বাসিন্দা দুঃখভঞ্জন হালদার, হলুদকানালি গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত মণ্ডল, স্থানীয় দেউলি-শুক্লা হাইস্কুলের শিক্ষক সম্পদ খাঁড়াত বলেন, “খাতড়া মহকুমার সব ক’টি রাস্তা এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে উঠেছে। পিচ-পাথর উঠে গিয়ে গর্তে ভরে উঠেছে। ফলে যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। খাতড়া-বাঁকুড়া রুটের বাসকর্মী শেখ আনোয়ার, অশ্বিনী মণ্ডলদের ক্ষোভ, “এই ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচলের জন্য প্রায় দিনই গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙছে। সময়মতো গাড়ি গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারছে না। ফলে যাত্রীদের সঙ্গে গোলমাল হচ্ছে। গাড়ির সময় নিয়েও একই রুটের বাসকর্মীদের মধ্যেও ঝামেলা হচ্ছে।”
অবিলম্বে জঙ্গলমহলের গুরুত্বপূর্ণ ওই চারটি রাস্তার পূর্ণ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। মহকুমাশাসক (খাতড়া) দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “মহকুমার যে রাস্তাগুলির অবস্থা বেশ খারাপ, সেগুলি অবিলম্বে মেরামতির জন্য রাজ্য পূর্ত দফতর ও পূর্ত দফতর (সড়ক) এর কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। দুই দফতর থেকেই রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে।” রাজ্য পূর্ত দফতর (সড়ক) বাঁকুড়া ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সৌগত সরকার বলেন, “বাঁকুড়া থেকে খাতড়া হয়ে রানিবাঁধ পর্যন্ত রাস্তাটি পূর্ণ সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়েছে। কাজের ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।” রাজ্য পূর্ত দফতরের বাঁকুড়া ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন মণ্ডলেরও আশ্বাস, “খাতড়া থেকে সারেঙ্গা, সিমলাপাল এবং আকখুটা থেকে রাইপুর-সহ বেশ কয়েকটি রাস্তা খুব শীঘ্রই মেরামত করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।” |