ক্ষোভ বিভিন্ন স্তরে
জেলার জন্মদিনটাই পালন করে না প্রশাসন
হাকরণে ঘটা করে গুণীজনদের জন্মদিন পালন করা হয়। অথচ, পুরুলিয়ার বঙ্গভুক্তির দিনটাই পালন করে না রাজ্য সরকার। এ নিয়েই ক্ষোভ পুরুলিয়ার আমজনতা থেকে শিক্ষানুরাগী মানুষজনদের। তাই এ বারও আজ বৃহস্পতিবার আরও একটা অনাড়ম্বর বঙ্গভুক্তি দিবস উদযাপন করতে চলেছেন পুরুলিয়ার বাসিন্দারা।
বাংলা ভাষাভাষি হিসাবে বঙ্গভুক্তির দাবিতে তৎকালীন বিহারের মানভূম জেলার একহাজার কলকাতা পর্যন্ত পদযাত্রা করেছিলেন। অনেককে গ্রেফতার করা হয়। সেই অন্দোলনের পর ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর মানভূম জেলার কিছুটা অংশ এ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। জন্ম হয় পুরুলিয়া জেলার। সেই থেকে ওই দিনটির স্মরণে বঙ্গভুক্তি দিবস পালন করে আসছে স্থানীয় কিছু সংস্থা। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ কই? প্রশ্নটা তুলেছেন এই অন্দোলনে জড়িয়ে থাকা মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্যের নতুন সরকার মহাকরণে বিভিন্ন গুণীজনের জন্মদিন পালন করছেন। কিন্তু এত মানুষের রক্তঝরা অন্দোলনে পাওয়া এই জেলার জন্মের দিনটি কেন পালন করার উদ্যোগ নিচ্ছে না রাজ্য সরকার? পরিবর্তনের সরকার আসার পরেও প্রশাসনিক এই অবহেলার কোনও পরিবর্তন হয়নি।
লোকসেবক সঙ্ঘের সচিব সুশীল মাহাতোর অভিযোগ, “আমরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন স্তরে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু রাজ্যে সরকারের পরিবর্তন হলেও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়নি।
অসম্পূর্ণ ভাষা আন্দোলনের স্মারক।—নিজস্ব চিত্র।
ঐতিহাসিক দিনটি পালন করার উদ্যোগ সরকারিস্তরে নেওয়া হয়নি।” তাঁদের আশঙ্কা, “ধীরে ধীরে এই ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যাবে।” লোকসেবক সঙ্ঘের দাবি, প্রাথমিকস্তর থেকে স্নাতকোত্তর অবধি পাঠক্রমে এই ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। পুরুলিয়ার জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক সিদ্ধার্থ বসু বলেন, “পুরুলিয়ার বঙ্গভুক্তি দিবস উদযাপনের কোনও নির্দেশ আসেনি।” সুশীলবাবুরা জানিয়েছেন, প্রতিবারের মতো এ বারও লোকসেবক সঙ্ঘ ও পুরুলিয়ার হরিপদ সাহিত্য মন্দির কিছু অনুষ্ঠান করবে। সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান পরীক্ষক প্রদীপ মণ্ডলও বলেন, “ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়ে সেই সময় কয়েক হাজার মানুষ ঘর হারিয়েছিলেন। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বহু লোককে জেলে ঢোকানো হয়। পুঞ্চার পাকবিড়রা থেকে এক হাজার পদযাত্রী কলকাতায় গিয়ে সত্যাগ্রহ করেছিলেন। এই ইতিহাস হারিয়ে গেলে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পূর্ণতা পাবে না।”
তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলির ইতিহাস পাঠক্রমে মানভূমের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্নাতকোত্তর স্তরেও পড়ানো শুরু হয়েছে। তবে এই ইতিহাস আরও বিস্তৃত ভাবে ছড়ান উচিত। পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নীলকমল মাহাতো বলেন, “পুরুলিয়াবাসী হিসাবে এই ইতিহাস অত্যন্ত গর্বের। ১ নভেম্বর দিনটিকে মর্যাদা সহকারে পালন করা উচিত ছিল। তবে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের কাছে এর গুরুত্ব পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।”
পুঞ্চার পাকবিড়রায় ভাষা আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তির স্মারক আজও সম্পূর্ণ হয়নি। পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মিথিলা মুর্মুর দাবি, ‘ওই স্মারক বেদী তৈরি করতে আরও টাকা লাগবে। তা না পাওয়ায় কাজটি শেষ করা যায়নি।” ভাষা আন্দোলনকারীদের এমনই নানা অভিমান-অনুযোগ রয়েছে। কিন্তু শুনছে কে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.