বোনাস নিয়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে বন্ধ হতে চলেছে
বিষ্ণুপুরের একটি কারখানা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি লিখিত ভাবে সে কথা জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। আজ, বৃহস্পতিবার কারখানার গেটে তাঁরা লক-আউট নোটিস ঝুলিয়ে দেবেন বলেও জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি টানা ১৪ দিন ধরে সিটুর বিক্ষোভ-আন্দোলনে মালদহের একমাত্র রেশম কারখানার উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার জেরে কারখানার ভিতরেই পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ১০ লক্ষ টাকার সিল্কের সুতো। বিষ্ণুপুরের কারখানা কর্তৃপক্ষেরও অভিযোগ, উৎপাদিত পণ্য কারখানা থেকে বের করতে দিচ্ছেন না কিছু শ্রমিক। এ ক্ষেত্রে
অবশ্য অভিযোগের কাঠগড়ায় তৃণমূলের শ্রমিক শাখা আইএনটিটিইউসি।
প্রায় শিল্পহীন বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলে কারখানাটি গড়ে ওঠে ২০০৪ সালে। চুক্তির ভিত্তিতে কাজ পান ৬৪ জন কর্মী। স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ২০। এই কারখানায় জামার কলার তৈরির কাপড় তৈরি হয়।
সংস্থার ডিরেক্টর অনিলকুমার পাতোদিয়া বুধবার জানান, আগে সিটুর শ্রমিক সংগঠন ছিল।
কিন্তু, গত লোকসভা নির্বাচনের পর সেটি আইএনটিটিইউসি-তে পরিণত হয়। তিনি বলেন, “গত বছর অবস্থা
ভাল থাকায় শ্রমিকদের বোনাস ১২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৩.৫ শতাংশ করা হয়েছিল। কিন্তু, আইএনটিটিইউসি ১৫ শতাংশ বোনাসের দাবি করছে। এ বার বাজার ভাল না হওয়ায় বোনাসের একই হারই রাখতে চেয়েছিলাম।”
অনিলবাবুর অভিযোগ, “প্রায় ২৫০ কোটি টাকা টাকায় এই কারখানা গড়ে তুলেছিলাম। কোম্পানি এখন লাভজনক অবস্থায় নেই। বিষয়টি তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বকে বারবার জানিয়েও তাঁরা ১৫ শতাংশ বোনাসের দাবিতে অনড়। পাঁচ দিন ধরে উৎপাদিত পণ্য কারখানার ভিতরে ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে। দেড় লক্ষ মিটার জামার কলারের কাপড় রয়েছে, যার দাম প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। ট্রাক এলেও মাল তুলতে দেওয়া হয়নি। সময়ে ক্রেতার কাছে পণ্য না পোঁছনোয় আমরা আর্থিক ভাবে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত।” সোমবার মহাকরণে লিখিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে সব জানিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রমিক অসন্তোষ চললে কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ার কথাও তাঁরা জানিয়েছেন ওই চিঠিতে। অনিলবাবুর কথায়, “এর পরেও জট ছাড়ানোর কোনও উদ্যোগ দেখতে না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে লক-আউট ঘোষণা করছি।”
বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ওই কারখানার সমস্যা নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। কারখানা কর্তৃপক্ষও আমাদের বলেননি। তবে ঠিক কী হয়েছে, বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসককে তা খোঁজ নিয়ে জানাতে বলেছি।” কেন মহকুমা বা জেলা প্রশাসনকে কিছু জানাননি? অনিলবাবুর জবাব, “স্থানীয় প্রশাসন ও তৃণমূল নেতৃত্বকে বলে কাজের কাজ খুব একটা হত না বলেই আমার ধারণা। একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা সিটু নেতা স্বপন ঘোষের কটাক্ষ, “বোনাস নিয়ে জোরাজুরি করায় কোনও সংস্থা চলে যাক, তা আমরা চাই না।”
ওই কারখানার আইএনটিটিইউসি-র নেতা শমীক সেন অবশ্য বলেন, “এ বার আমরা বোনাস বাড়াতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু পুজোর মধ্যে শ্রমিকদের কিছু না জানিয়ে, তিনি কলকাতায় চলে যান। ফিরে আসার পরেও আমরা তাঁকে বোনাস বাড়িয়ে দিতে বলেছিলাম। জোরাজুরি করা হয়নি।” |