আমানতকারীদের কাছ থেকে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফরাক্কা থেকে রাতারাতি পাততাড়ি গুটিয়ে পালাল একটি চিটফান্ড সংস্থা। প্রতারিত আমানকারী ও এজেন্টরা এ ব্যাপারে সংস্থার ৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসন ও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে ৬ জনেরই বাড়ি মালদহে, অপরজন হরিয়ানার বাসিন্দা। অভিযুক্তদের মধ্যে আবার ১ জন মালদহে কংগ্রেসের কাউন্সিলর। মোবাইল বন্ধ করে সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা সকলেই গা ঢাকা দিয়েছে। ফরাক্কা ব্লকের বিডিও সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, “এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমানতকারীরা মহাকরনেও অভিযোগ জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগের নথিপত্র-সহ তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে ফরাক্কা থানাকে বলা হয়েছে। ওই সংস্থা প্রায় ১০ হাজার লোকের কাছ থেকে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা নিয়ে ফরাক্কা ছেড়ে পালিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি।”
এতে করে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন সংস্থায় কর্মরত প্রায় সাড়ে চারশো জন এজেন্ট। এখন তাঁরা হেনস্থার ভয়ে কার্যত গ্রামছাড়া। ঘোলাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ওই সংস্থার এজেন্ট সুফিয়ান শেখ বলেন, “আমার বেকার ছেলে। তাই সংস্থার হয়ে কাজ করেছি। ২০১০ সালের ২০ জুলাই ফরাক্কার এনটিপিসি মোড়ে ওই সংস্থা অফিসও খোলে। চড়া সুদের লোভে দু’বছরেই কোটি টাকার উপরে জমা পড়তেই ম্যাটিউরিটির টাকা ফেরত না দিয়ে ওই সংস্থা ফরাক্কা থেকে অফিস গুটিয়ে পালিয়ে যায়।” আর এক এজেন্ট তাসলিম শেখ বলেন, “গ্রামবাসীরা আমাদের চাপ দিলে আমরা ওই সংস্থার কর্তাদের খোঁজ শুরু করি। ২৭ অগস্ট তাদের ফরাক্কায় দেখতে পেয়ে গ্রামবাসীরা রাতভর আটকে রাখে। পরে এক আইনজীবীর উপস্থিতিতে টাকা ফেরতের লিখিত অঙ্গীকার করে ছাড়া পায় তারা। কিন্তু অঙ্গীকার রক্ষা না করে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।” আর তাই নিশ্চিন্তপুরের বিড়ি শ্রমিক সারিনা বিবি, ঘোলাকান্দির নওনারা বেওয়ার মত প্রায় ১০ হাজার আমানতকারী আজ পথে বসেছেন। ফরাক্কার আইনজীবী রবিউল আলম বলেন, “আমার সামনে সংস্থার দুই কর্তা টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তারা টাকা না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন আইনত পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।” ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক ও রাজ্য কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মইনুল হক বলেন, “গরীব মানুষের রক্ত জল করা সঞ্চয়ের টাকা যারা আত্মসাৎ করে পালিয়েছে, তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। প্রতারণাতে যুক্ত কংগ্রেস কাউন্সিলরকেও ধরতে হবে। দল এ জাতীয় কাজকে কোনওমতে প্রশয় দেবে না। তবে এই ধরনের সংস্থায় টাকা জমা দেওয়ার ব্যাপারে মানুষকে সচেতন হতে হবে।” |