কালী-কার্তিক গড়তে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী
শারদোৎসব ও লক্ষ্মীপুজোর আরাধনার রেশ কাটতে না কাটতেই পিঠোপিঠি হাজির কালীপুজো, কার্তিক পুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো। এ বছর আবার কালীপুজোর দিন দু’য়েক পরেই শুরু হচ্ছে কার্তিক পুজো। আর কার্তিক পুজো শেষ হতে না হতেই শুরু জগদ্ধার্থীর। তবে বেলডাঙায় কার্তিক পুজো হয় ধুমধাম করে। কার্তিক পুজো উপলক্ষে ‘কার্তিক লড়াই’ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করেন। ১৫-১৮ ফুট উচ্চতার কার্তিক, সঙ্গে লক্ষ্মী, শিব, গণেশ, কমলেকামিনী, রাম, রামকৃষ্ণ, চৈতন্য সকলের আরাধনা হয়ে থাকে। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০০ প্রতিমার পুজো হয়। তাই প্রতিমা নির্মাণে তুমুল ব্যস্ততা বেলডাঙা জুড়ে। পুজো উপলক্ষে বেলডাঙার মৃৎশিল্পীদের মধ্যে চলছে এখন প্রতিমা নির্মাণের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। তার উপর আবার তরুণ প্রজন্ম এই পেশার প্রতি বিমুখ হওয়ায় সংকট চরমে উঠেছে। নতুন কোনও স্থানীয় শিল্পী এই কাজে আগ্রহ না দেখানোয় প্রতিমা নির্মাণে ডাক পড়ছে বহিরাগতদের। পুজোর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিমা তৈরির সংখ্যাও বাড়ছে দিনকেদিন।
সেই প্রতিমা তৈরি নিয়েই সমস্যা চরমে উঠেছে। বেলডাঙা হাতি কার্তিক সর্বজনীন পুজো কমিটির সম্পাদক মৈনাক ঘোষ বলেন, “এবার কালীপুজো ও কার্তিক পুজোর মাঝে কার্যত সময় না থাকায় মৃৎশিল্পীদের দুটি পুজোর প্রতিমাই এক সঙ্গে তৈরি করতে হচ্ছে। ফলে তাঁদের দম ফেলবার ফুরসত নেই। এক একজন বড় আকারের ১৫ থেকে ২৫টি প্রতিমা তৈরিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে পুজো কমিটি থেকে মৃৎশিল্পী সকলেই চরম ব্যস্ততা।” বেলডাঙা মণ্ডপতলা সর্বজনীন ভৈরব পুজো কমিটির মনোতোষ চৌধুরী বলেন, “মৃৎশিল্পীর অভাবে এবার প্রতিমা নির্মাণে সমস্যা হচ্ছে। অধিকাংশ শিল্পীর হাতেই সময় কম। তাই নতুন কোনও প্রতিমা তৈরি করতে তাঁরা রাজি হচ্ছেন না।” বেলডাঙার স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও প্রতিমা নির্মাণে বহিরাগত শিল্পীরাও এসেছেন। কান্দির মৃৎশিল্পী মধুসূদন সরকার বলেন, “কার্তিক পুজোর প্রতিমা নির্মাণ বিরাট ব্যাপার। মৃৎশিল্পীর অভাব প্রতি বারই হয়। তবে এবার কার্তিক পুজো আর কালীপুজোর মধ্যে সময়ের ব্যবধান না থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। শরীর ভালো না থাকলেও আমায় প্রতিমা নির্মাণ করতে আসতে হয়েছে।” বেলডাঙার মৃৎশিল্পী মহাদেব মিস্ত্রি বলেন, “প্রচুর ছোট-বড় কালীপ্রতিমার সঙ্গে কার্তিকও তৈরি করতে হচ্ছে। এখন কার্তিক লড়াইয়ের বাবু কার্তিক নির্মাণ করছি। প্রথমে মাটির কাজ দ্রুত শেষ করেই কালী প্রতিমা কাজ শেষ করতে হবে।” অন্য এক মৃৎশিল্পী নির্মল মিস্ত্রীর কথায়, “কার্তিক পুজোয় এত বেশি প্রতিমা তৈরি করতে হচ্ছে যে, অনেক সময় নতুন অর্ডার নিতে পারছি না। এদিকে সকলেই আমাদের উপর রাগ দেখাচ্ছে। তাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”
বেলডাঙা বাথানগোরের শিবপুজো হল কার্তিক পুজোর সেরা আকর্ষণ। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সৌগত পাল বলেন, “মহুলার এক শিল্পী আমাদের প্রতিমা তৈরি করছেন। এই সময়ে মৃৎশিল্পীদের আকাল দেখা দেয়। ফলে গত বছর থেকে বেলডাঙার বাইরের শিল্পীদের দিয়ে মূর্তি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” মহুলার মৃৎশিল্পী তাপস ঘোষ বলেন, “দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে কার্তিক পুজোর প্রতিমা আমি ও আমার বাবা মিলে তৈরি করছি। তবে হাতে সময় কম থাকায় সমস্যায় পড়েছি।” যদিও সব প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে কালী ও কার্তিক পুজোকে ঘিরে বেলডাঙায় এখন সাজো সাজো রব। প্রতিমা নির্মাণের পাশাপাশি চলছে চাঁদা সংগ্রহ থেকে মণ্ডপ সজ্জার কাজও। এখন কেবল অপেক্ষা কার্তিক লড়াই কেমন জমবে তা দেখার।

ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.