|
|
|
|
লগ্নির সংশয় |
আইন-শৃঙ্খলার রাশ ধরে আস্থার বার্তা দিক রাজ্য, চাইছে শিল্পমহল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হলদিয়ায় এবিজি-কাণ্ডের জেরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে শিল্পমহলে। তাদের একাংশের বক্তব্য: এমন চললে পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশ কতটা লগ্নি-সহায়ক, সে সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের মনে সংশয় দানা বাঁধতে বাধ্য।
আর তাই শিল্প ও বণিকমহল একান্ত ভাবে চাইছে, হলদিয়ার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না-হয়। তেমনটা যে হবে না, তার প্রমাণ দিতে প্রশাসনকেও আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানাচ্ছে তারা। এই মহলের আশঙ্কা, প্রশাসনের ‘সদিচ্ছা’র নমুনা না-থাকলে রাজ্যের প্রতি শিল্পের আস্থা ফেরানো কঠিন হবে।
শনিবার রাতে এক জনের পরিবার-সহ এবিজি-র তিন কর্তাকে ‘অপহরণের’ অভিযোগ ওঠার পরেও রাজ্যে আইনের অনুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বণিকসভাগুলি। বুধবার তারা যে ভাবে গোটা ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছে, তাতে শিল্পমহলের শঙ্কার জায়গাটাই ফের প্রকট হয়ে উঠেছে। এবং সেই সূত্রেই উঠে পড়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা ‘ঝুঁকি’র বিষয়টিও। যে ঝুঁকির সুবাদে পশ্চিমবঙ্গ তাঁদের লগ্নি-মানচিত্রে ঠাঁই পাচ্ছে না বলে জানিয়েছিলেন ফোর্ড ইন্ডিয়ার কর্তা মাইকেল বোনহ্যাম। যে আশঙ্কায় চার বছর আগে এ রাজ্য থেকে প্রকল্প গুটিয়ে নিয়েছেন রতন টাটা।
রাজ্য সরকার কী বলছে?
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য হলদিয়া-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের দায় মানতে নারাজ। এ দিন এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সরকারের সঙ্গে কি ওদের (এবিজি’র) চুক্তি হয়েছিল? হয়েছিল বন্দরের সঙ্গে। ওদেরই জিজ্ঞাসা করুন।” কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা তো রাজ্যেরই বিষয়?
এ প্রশ্নের কোনও জবাব মন্ত্রী দেননি। বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্ত এবং ইন্ডিয়ান চেম্বারের সেক্রেটারি জেনারেল রাজীব সিংহ অবশ্য আপাতত হলদিয়া-কাণ্ডকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসেবেই দেখতে চাইছেন। রাজীবের দাবি, এটি স্থানীয় সমস্যা। কোনও স্থানীয় গোষ্ঠীর মদতও থাকতে পারে। তবে এমন ঘটনায় যে আখেরে রাজ্যের ভাবমূর্তি ধাক্কা খায়, তা জানাতে ভোলেননি তিনি। মার্চেন্ট চেম্বারের প্রেসিডেন্ট দীপক জালান ও ফিকি-র পূর্বাঞ্চলীয় চেয়ারম্যান গৌরব স্বরূপও মনে করেন, এর পরিণাম রাজ্যের শিল্প-স্বার্থের পরিপন্থী হয়ে ওঠে।
তাই এ সবের পুনরাবৃত্তি রুখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে জোর দিচ্ছে শিল্পমহল। পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবিজি-কর্তা গুরপ্রীত মালহি এ দিন বিবৃতিতে জানিয়েছেন, যেখানে প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব নিতে অপারগ, সেখানে তাঁরা কাজ করতে পারবেন না। বিনিয়োগকারীরা এর পরে অন্যত্র ‘শিল্পবান্ধব’ জায়গা খুঁজবেন বলেও মন্তব্য করেছেন গুরপ্রীত। অন্য দিকে হলদিয়ার ঘটনা দীর্ঘ মেয়াদে রাজ্যের লগ্নিক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না বলে দাবি করলেও আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নটি যে শিল্পমহলকে যথেষ্ট ভাবাচ্ছে, অ্যাসোচ্যাম-কর্তা ডি এস রাওয়াতের বক্তব্যে তা স্পষ্ট। কী রকম?
রাওয়াত বলেন, “যারা আইন ভাঙছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের বিন্দুমাত্র দেরি করা উচিত নয়। একই সঙ্গে তথ্যানুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গড়ে সরকার বার্তা দিক যে, আইন যাঁরা মেনে চলেন, তাঁরা এ রাজ্যে সম্পূর্ণ নিরাপদ।” বেঙ্গল চেম্বারের কল্লোলবাবু বলেন, “রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাক। শিল্প শিল্পের জায়গায়। জঙ্গি
আন্দোলন কখনওই কাম্য নয়। ২৭৫ জন বেকার হয়ে পড়লে আন্দোলন হওয়া স্বাভাবিক। তবে রাজ্যেরও উচিত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।”
এবিজি হলদিয়া ছেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে আধুনিকীকরণ ও সার্বিক উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় রাজ্যের অবস্থান নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে শিল্পমহলে। গুরপ্রীতের দাবি, হলদিয়া বন্দরে মাল খালাসের যে আধুনিক পদ্ধতি তাঁরা এনেছিলেন, তাতে উৎপাদন প্রায় তিন গুণ বেড়েছিল, লাভ হচ্ছিল কলকাতা বন্দরেরও। রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে আধুনিকীকরণ ও দক্ষতাবৃদ্ধির পথটি মার্চেন্ট চেম্বারের দীপকবাবুর কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। “এখন বড় জাহাজ অন্য বন্দরে ভিড়বে। তাতে শুধু যে হলদিয়ার ব্যবসা মার খাবে তা-ই নয়, পশ্চিমবঙ্গ আধুনিকীকরণের বিরোধী বলেও বার্তা ছড়াবে। ধাক্কা খাবে রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধি।” মন্তব্য করেন তিনি। |
|
|
|
|
|