|
|
|
|
সব ঠিক নেই, কোর্টে মানলেন কর্তৃপক্ষ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হলদিয়া বন্দরের পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক নয়, বুধবার তা কলকাতা হাইকোর্টের কাছে স্বীকার করে নিলেন কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষ। আদালতকে তাঁরা বলেছেন, এবিজি-র কর্মীরা হলদিয়া বন্দরের ভিতরে ঢুকতে পারছেন না। এবিজি কাজ করতে না-পারায় বন্দরের যে আর্থিক লোকসান হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টকে তা-ও জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, হলদিয়ায় কিছুই হয়নি। তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, হলদিয়া বন্দর স্বাভাবিক। তবে এ দিন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর অবকাশকালীন বেঞ্চের সামনে কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেছেন, “হলদিয়া বন্দর-এলাকার মধ্যে কাজ করায় কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু এবিজি’র কর্মীরা বন্দরের ভিতরেই ঢুকতে পারছেন না। আর এবিজি কাজ না-করায় বন্দরের ক্ষতি হচ্ছে।”
অরুণাভবাবু বলেন, রাজ্যের সঙ্গে এবিজি-র সংঘাত নিয়ে এবিজি বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে মামলাও করেছিল। বিচারপতি দত্তের নির্দেশ ছিল, রাজ্য প্রশাসনকে আইন-শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করতে হবে, বন্দর-এলাকার একশো মিটারের মধ্যে আন্দোলন চলবে না, ছাঁটাই কর্মীরাও বন্দরে ঢুকতে পারবেন না। বন্দর-কৌঁসুলির বক্তব্য: হলদিয়ায় যা হচ্ছে, মূলত রাজ্যের সঙ্গে এবিজি’র সংঘাত। এবিজি’র কর্মীরা ভিতরেই ঢুকতে পারছেন না। এখানে বন্দর-কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই বলে তাঁর দাবি।
এ দিনই এবিজি-র তরফে কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, হলদিয়ায় তারা আর মাল খালাসের কাজ করতে চায় না। চিঠিতে এবিজি’র অভিযোগ: বন্দর-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহযোগিতা ও কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ তারা পায়নি, যা তাদের হলদিয়া ছেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
এবিজি’র সেই চিঠি বন্দরের পক্ষে কোর্টে দেওয়া হয়। বন্দরের দাবি, ক্ষতিপূরণ এড়াতেই ওই চিঠি লিখেছে। অরুণাভবাবুর কথায়, “বন্দরের নিরাপত্তা দেখে সিআইএসএফ। সেখানে সমস্যা হলে বন্দরের দায় থাকত। ওদের কর্মীরা তো ঢুকতেই পারছেন না! কর্তৃপক্ষ কী করবেন?”
এবিজি’র কৌঁসুলি সমরাদিত্য পাল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এবিজি-র পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। তারা বন্দর ছেড়ে চলে যেতে চায়। সমরাদিত্যবাবুর অভিযোগ, “ওখানে আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। সংস্থার কর্তাদের অপহরণ করে রাজ্য ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। জবরদস্তি ইস্তফাপত্র লেখানো হয়েছে। ওরা কাজ করতেই এসেছিল। কিন্তু কর্মীদের প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা নিয়ে কোনও সংস্থা কাজ করতে পারে না।”
দু’পক্ষের সওয়াল শোনার পরে বিচারপতি চক্রবর্তী এ দিনের মতো শুনানি স্থগিত রাখেন। পরবর্তী শুনানি আগামী শুক্রবার।
এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এবিজি এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা-চুক্তি হয়েছিল। হাইকোর্ট দু’পক্ষের সম্মতিক্রমে ওই চুক্তি অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশ দেয়। চুক্তি মোতাবেক ১৯ অক্টোবর কাজ শুরু করার কথা ছিল। এবিজি তা করতে পারেনি। বর্তমানে হাইকোর্টে পুজোর ছুটি চলছে। এই পরিস্থিতিতে বন্দর-কর্তৃপক্ষ বিচারপতি চক্রবর্তীর অবকাশকালীন বেঞ্চের কাছে জানতে চান, তাঁদের এখন কী করণীয়। এবিজির সঙ্গে বরাত-চুক্তি বাতিলের দাবি তুলেছেন বন্দর-কর্তৃপক্ষও।
এবিজি কাজ করতে আগ্রহী নয়, বন্দরও চাইছে তাদের সঙ্গে বরাত-চুক্তি রদ করতে। অর্থাৎ দু’পক্ষের দাবি কার্যত এক। এর ফয়সালা হবে পুজো অবকাশের পরে, বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে। |
|
|
|
|
|